ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

যেভাবে কাজ করে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০১৭
যেভাবে কাজ করে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছবি-সংগৃহীত

ঢাকা: সম্প্রতি (২৮ নভেম্বর) উত্তর কোরিয়ার পরীক্ষা ঘটানো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে চার হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে গিয়েছিল। মহাকাশে অবস্থানরত কৃত্রিম উপগ্রহ ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে’র দূরত্ব পৃথিবী থেকে প্রায় ৪০৮ কিলোমিটার। অর্থাৎ, এ মহাকাশ স্টেশন থেকেও দশ গুণ বেশি উচ্চতা ছুঁয়েছে উত্তর কোরিয়ার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র।

বর্তমানে পুরো বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বা ইন্টার কন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (আইসিবিএম)। কিভাবে কাজ করে এ ক্ষেপণাস্ত্র, কেনই বা এ যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে বিশ্বের এতো মাথাব্যথা? চলুন জেনে নেওয়া যাক।

যুদ্ধের অভিপ্রায়ে এখনও পর্যন্ত কোনো রাষ্ট্র এ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেনি। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বেশ কিছু পরাশক্তিধর রাষ্ট্র ক্ষেপণাস্ত্রটির পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর রেঞ্জ বা ব্যাপ্তি বা পাল্লা অনেক বেশি। নামই বলে দিচ্ছে, অস্ত্রটি এক মহাদেশ থেকে আরেক মহাদেশে গিয়ে এর লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।  

আইসিবিএম হলো রকেট চালিত ক্ষেপণাস্ত্র। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে নিক্ষেপের পর তা উঠে যায় মহাকাশে। এরপর ক্ষেপণাস্ত্রটি আবার বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে লক্ষ্যবস্তুর দিকে নেমে আসে। এতে পারমাণবিক বা রাসায়নিক ওয়ারহেড যুক্ত করা হয়।

নিক্ষেপ করার পর ক্ষেপণাস্ত্রটি সোজা উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যায় মহাশূন্যে। এতে একাধিক রকেট যুক্ত করা যায়। প্রথম রকেটের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে তা মূল ক্ষেপণাস্ত্র থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং দ্বিতীয় রকেটটি জ্বলতে শুরু করে। এভাবে একটি আইসিবএমে তিনটি পর্যন্ত রকেট যুক্ত করা যায়।

মহাশূন্যে পৌঁছে মাধ্যাকর্ষণকে কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ক্ষেপণাস্ত্রটি। এরপর আবার তা বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং লক্ষ্র্যবস্তু বা নিশানার উপর নেমে আসতে শুরু করে। পারমাণবিক বোমা যুক্ত একটি ক্ষেপণাস্ত্র চোখের নিমেষেই ধ্বংস করে ফেলতে পারবে বিশ্বের যে কোনো শহর।

ছবি-সংগৃহীতউত্তর কোরিয়ার দাবি, তাদের সর্বশেষ পরীক্ষা চালানো ক্ষেপণাস্ত্রটির আওতায় সম্পূর্ণ যুক্তরাষ্ট্র। এটাকে আগের ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর উন্নত ভার্সন বলা হচ্ছে।

আইসিবিএম তৈরির প্রতিযোগিতায় থেমে নেই বিশ্বের অন্যান্য সামরিক শক্তিধর রাষ্ট্র। রাশিয়ার আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘বুলাভা আরএসএম-৫৬’ দশ হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। বুলাভাই হচ্ছে পৃথিবীর প্রথম ‘গতিপথ পরিবর্তনে সক্ষম’ (ম্যান্যুয়েভারেবল) আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র।

বিশ্বের সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রটি ‘আর-৩৬এম’। রাশিয়ার তৈরি প্রায় নয় টন ওজনের এ যুদ্ধাস্ত্র ১৬ হাজার কিলোমিটার দূরে পৌঁছাতে পারে। চীনের তৈরি ‘দংফেং-৫এ’ পৌঁছাতে পারে ১৩ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত। যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রাইডেন্ট-২’ যেতে পারে ১১৩০০ কিলোমিটার।

তাছাড়া ভারত ও পাকিস্তানের হাতে আছে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। ২০১২ সালে ভারতের পরীক্ষা চালানো ‘অগ্নি-৫’ ক্ষেপণাস্ত্রের সর্বোচ্চ পাল্লা পাঁচ হাজার কিলোমিটার।

আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পূর্বসুরী বলা হয় ‘ভি-২’ ক্ষেপণাস্ত্রকে। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মানির তৈরি। ১৯৪৪ সালে জার্মান বাহিনী প্যারিস ও লন্ডনে এ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। যুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এই ক্ষেপণাস্ত্র হস্তগত করে এবং তাদের নিজস্ব ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটায়। এভাবেই তৈরি হয় বর্তমান সময়ের আইসিবিএম, এমআরবিএম ও এসআরবিএমসহ বিভিন্ন প্রজাতির ক্ষেপণাস্ত্র।

বাংলাদেশ সময়: ০০৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০১৭
এনএইচটি/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।