ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

কুয়াশা ছাপিয়ে পৌষ মেলার ঘ্রাণ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
কুয়াশা ছাপিয়ে পৌষ মেলার ঘ্রাণ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পৌষ মেলায় আগতরা, ছবি: কাশেম হারুন

ঢাকা: কুয়াশা পড়ছে পৌষের গা বেয়ে! ছুটির দিনের সে কুয়াশা আর শীতের চাদরের আড়মোড়া ভেঙে তখনও ঘুম ভাঙেনি পুরো নগরবাসীর। অথচ ততক্ষণেই বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে গেছেন পৌষ প্রেমীরা। পিঠার মৌ মৌ ঘ্রাণে কুয়াশার স্নিগ্ধতায় সবাই ব্যস্ত পৌষ মেলাকে স্বাগত জানাতে।

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পৌষ মেলার উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরেণ্য সাংবাদিক ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দ সৈনিক কামাল লোহানী। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা বেগম।

 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন হামদর্দ ল্যাবরেটরিজ বাংলাদেশের পক্ষে রফিকুল ইসলাম, শিল্পী ফকির আলমগীরসহ বিশিষ্টজনেরা। সভাপতিত্ব করেন পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সাংস্কৃতিজন গোলাম কুদ্দুস। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে পৌষ মেলা, ছবি: কাশেম হারুন‘অঘ্রাণে ধরিত্রীমাতা অন্নপূর্ণার মতো দু’হাত বাড়িয়ে ভরে দেয় ফসল। তারই আকাশ ছোঁয়া আনন্দ হিম কুয়াশায় ভর করে নেমে আসে পৌষের পিঠাপুলি, খেজুর রসের উৎসবে, যাত্রা-পাচালীর সুরে-ছন্দে আর পৌষ মেলার বিপুল কলরবে। ক্লিষ্ট মানুষের মুখ উদ্ভাসিত হয় স্বর্গীয় আনন্দে। আরোপিত জাত-পাত ভুলে হিন্দু-মুসলমান সবাই তখন মানুষ হয়ে যায়। বাংলার লোক সমাজ নির্বিশেষে মিলে যায় সার্বজনীন উৎসবে। পৌষমেলা তার অন্যতম। ’ একক সংগীত ও আবৃত্তি পরিবেশনার পর ঘোষণাপত্র পাঠ করছিলেন পৌষ মেলা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায়।  

এরপরই আলোচনা করেন বাংলা একাডেমির পরিচালক শাহিদা বেগম। তিনি বলেন, হালকা রোদের মিষ্টি সকাল সংস্কৃতির নানা বর্ণে-গন্ধে ভরপুর। বাংলা একাডেমি শুরু থেকেই বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করছে। সংস্কৃতি সবসময়ই মানবতার কথা বলে। শহরের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সংস্কৃতি পৌঁছে দেওয়ায় এ আয়োজনের মূল লক্ষ্য।

পৌষমেলায় শিল্পীরা।  ছবি: বাংলানিউজ কামাল লোহানী বলেন, মিষ্টি এ সকালে যদি একটু চোখ বন্ধ করি, তবে সামনে ভেসে আসবে গ্রাম, গ্রামের শীতের সকাল, পিঠাপুলি আর সূর্য ওঠার দৃশ্য। এগুলো সবই আমাদের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভীষণভাবে। বর্তমানে জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা আমাদের মধ্যে বিষবাষ্প হয়ে মিশে আছে। আর তা রুখতে পৌষ মেলায় আগত সবার সম্মিলিত শক্তি হতে পারে একটি বড় হাতিয়ার।

গোলাম কুদ্দুস বলেন, বাঙালির যে অসাম্প্রদায়িক উৎসবগুলো আছে তার অন্যতম হলো পৌষ মেলা। পিঠা, যাত্রা, লোকগানের যেমন কোনো ধর্ম নেই, তেমনি এ সমাজকেও আমরা অসাম্প্রদায়িক সমাজ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।

প্রধান অতিথিসহ অন্যান্য অতিথিরা এসময় আইল্যা জ্বালিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করেন। আইল্যা জ্বালানোর আবৃত্তি শিল্পী রফিকুল ইসলাম কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রার্থী কবিতাটি আবৃত্তি করেন।

বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী (২২, ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর) পৌষমেলা চলবে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে ১০টা ও বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলা চলাকালীন সময়ে নজরুল মঞ্চে আয়োজন করা হয়েছে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার। এরমধ্যে সংগীত, নৃত্য, আবৃত্তি, যাত্রাপালা উল্লেখযোগ্য। এছাড়া প্রাঙ্গণ জুড়ে রকমারি পিঠা ও দেশীয় কারুপণ্যের স্টলগুলোতে পাওয়া যাবে ঐতিহ্যবাহী সব পিঠা ও গ্রামীন সংস্কৃতির স্বাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
এইচএমএস/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।