ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

নমিতার স্বাচ্ছন্দ্যের হাসি শূকর পালনে

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
নমিতার স্বাচ্ছন্দ্যের হাসি শূকর পালনে গৃহপালিত শূকরকে খাবার দিচ্ছেন নমিতা

মৌলভীবাজার: দু’পাশে মাটির দু’টি ঘর। উপরে শনের আস্তরণ। কোথাও শন আছে, আবার কোথাও নেই। শনগুলো পুরনো হতে হতে বাঁশের ফ্রেমের সঙ্গে লেপ্টে আছে। বর্ষায় বৃষ্টি আর শীতে কুয়াশা হঠাৎ এসে দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয় তাদের।

রান্নাঘর, গোসলখানা, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা প্রতিটি স্থানেরই অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। কোনোক্রমে দিন যাওয়ার মতো দায়।

শুধু এরাই নয়, প্রতিটি চা শ্রমিকের এটি একটি জীবনের চরম পরিহাস। মৌলিক অধিকার এখানে অনুপ্রবেশহীন অট্টহাসিময় সুখের মতো!

এ সবই জানান দেয় আসলে ওরা অর্থনৈতিকভাবে ভালো নেই। সাংসারিক অভাব-অনটন প্রতিদিনই মুখ ভেংচিয়ে তিরস্কার করে তাদের। এ অভাবকে নিত্যই ডিঙাতে চায় ওরা। কিন্তু কী করে? এ উত্তরে সব হতদরিদ্র-অভাবী মানুষের মতো ওরাও খুঁজতে থাকে।

তবে এ অভাবের মাঝেও শূকরপালন তাদের সমৃদ্ধির পরশ দিয়ে রেখেছে। এগুলোকে বিক্রি করে কিছুটা হলেও স্বচ্ছলতা এসেছে। তাই এখন তাদের মনোযোগ শূকর পালনের দিকে।

সম্প্রতি দুর্গম লাখাইছড়া চা বাগানের উড়িয়া টিলা এলাকায় গিয়ে একটি অভাবী পরিবারের শূকর পালনের সার্থকতা দেখা গেলো। আনন্দে অনুভূত হলো মন। তাদের বাড়িতে এগারোটি শূকর রয়েছে। ৮টি ছানা, দুইটি মহিলা এবং একটি পুরুষ শূকর। বাড়ির পূর্বকোণে বাঁশের শক্ত বেড়া দিয়ে খাঁচা বানিয়ে তাতে শূকরদের লালনপালন করে থাকেন।

নমিতার গৃহপালিত শূকর  

এ বাড়ির গৃহকর্তা বচ কন্দ। তিনি শ্রীমঙ্গলের একটি বেসরকারি রির্সোটের বাবুর্চি। কর্তব্যকর্মে নিয়োজিত থেকে আট-দশ দিন পরপর দু’একদিনের জন্য বাড়ি আসেন। সংসারের পুরো দায়-দায়িত্ব সামলাতে হয় তার স্ত্রী নমিতা কন্দ-কে। চার মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে তার পরিবার। বড় দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। বাকি সন্তানরা পড়ছে শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।

বাংলানিউজকে শূকর পালন সম্পর্কে নমিতা বলেন, ‘আমরা বড় গরিব মানুষ বাবু। আমার স্বামী চাকরি করে যে সামান্য টাকা পায় তাতে আমাদের সংসার চলে না। অভাব-অনটন লেগেই থাকে। তাই আমি বাড়তি কিছু আয়ের জন্য অনেক দিন থেকেই শূকর পালন করে আসছি। ’

তিনি আরো বলেন, ‘বাবু, সুখের কথা হলো, বড় মেয়েকে আমি বিয়ে দিয়েছি শূকর বিক্রি করে। দ্বিতীয় মেয়ের বেলাতেও তাই। বছরে দু’তিন বার আমি সবগুলো শুকর বিক্রি করে পরে আবার ছোট বাচ্চা থেকে পালন শুরু করি। ’

প্রতিটি শূকরের মূল্য জানতে চাইলে নমিতা বলেন, একটি শূকর আট হাজার থেকে বারো হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। একত্রে বিক্রি করলে লাভ বেশি; কারণ টাকাটা একত্রে হাতে পাওয়া যায়।

লালনপালন সম্পর্কে তিনি বলেন, দিনের বেশিরভাগ সময় ওদের খাঁচায় আটকে রাখি। কচু সিদ্ধ, চালের গুড়া, দু’দিন আগের ভাত প্রভৃতি খেতে দিই। তবে কচুটাই ওদের বেশি পছন্দ।

আমাদের চা বাগানে প্রতি কেজি শূকরের মাংস আড়াইশ’ টাকা থেকে তিনশ’ পঞ্চাশ টাকা এবং চা শ্রমিকরাই মূলত এর ক্রেতা বলে জানান নমিতা কন্দ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৭
জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।