ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বিদায় ২০২০, আলো আসুক ২১-এর হাত ধরে

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১, ২০২১
বিদায় ২০২০, আলো আসুক ২১-এর হাত ধরে

ঢাকা: ‘ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে/ঝরে ধুলায় ভোর বেলাতে/আমায় তারা ডাকে সাথে- আয় রে আয়। সজল করুণ নয়ন তোলো, দাও বিদায়...।

। ’ গানে গানে কথাগুলো বলেছিলেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। আজকের সূর্যাস্ত যেন এই গানের সঙ্গেই একাকার।

সব বিদায়ের সঙ্গেই লুকিয়ে আছে এমন আনন্দ-বেদনার কাব্য। সেটা বর্ষবিদায়ের বেলায়ও। বিদায় ২০২০। বৃহস্পতিবারের (৩১ ডিসেম্বর) সূর্যাস্ত আরেকটি খ্রিস্টীয় বছরের সমাপ্তির ডাক দেবে। আর আগামীকালের ভোরের সূর্য পৃথিবীর বুকে নিয়ে আসবে আরেকটি নতুন বছর। বলতে হবে-স্বাগত ২০২১!

বছরের এই শেষ দিনটিতে এসে ভালো-মন্দ আর আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো আরও একবার রোমন্থন করবেন অনেকেই। একইভাবে জীবনের সব ধরনের নেতিবাচক বিষয়গুলোকে দূরে ঠেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় নতুন করে পথচলার প্রত্যয় ব্যক্ত করবেন প্রায় সকলে। এছাড়া দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডগুলো মূলত ইংরেজি সালের গণনায় হওয়ায় খ্রিস্টিয় বছর বেশ গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জীবনে। সেদিক বিবেচনায় বিদায়ী বছরটা কেমন গেলো তার হিসাবও কষবেন কেউ কেউ। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আর ভাবনায় নানাভাবে মূল্যায়িত হবে বিদায়ী এই বছরটি।

আমাদের ব্যক্তি জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জাতীয় জীবনেও বিদায়ী বছরটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ। শুরু থেকেই ছিল করোনার প্রভাব। তাই এটা বলাই যায় যে, বছরটা খুব একটা ভালো কাটেনি। অন্তত ঘরবন্দি অবস্থাতেই কেটেছে বছরের অর্ধেকেরও বেশি সময়। তারপরও রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২০২০ বেশ ঘটনাবহুল একটি বছর। নানা ক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ এসেছে, ঘটেছে উত্থান-পতনের ঘটনা। তারপরও এগিয়ে যাচ্ছি আমরা।

২০২০ সাল বরণ করার সময় কেউ ভাবেনি বছরটি মানব জাতির জন্য এতটা বিষময় হবে। আতঙ্ক, উদ্বেগ এবং অনিশ্চয়তা নিয়েই প্রায় সারা বছর কাটলো করোনা ভাইরাসের ভীতিতে। ২৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন ভাইরাসটির নাম দেয় কোভিড-১৯। বিশ্ব অর্থনীতিকে পঙ্গু করেছে করোনা ভাইরাস। পৃথিবীর অর্ধেক জনগোষ্ঠী, প্রায় ৪০০ কোটি মানুষকে মাসের পর মাস ঘরবন্দি থাকতে বাধ্য করেছে এই মহামারি। প্রায় ৮ কোটি মানুষ করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। মৃত্যু বরণ করেছেন প্রায় ১৮ লাখ মানুষ। এখন দেশে দেশে চলছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। প্রতিদিনই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে, মৃত্যুবরণ করছে। তবে বছর বিদায়ের আগেই অবশ্য আশার আলো দেখিয়েছে চিকিৎসা-বিজ্ঞান। স্বল্পতম সময়েই আবিষ্কার হয়েছে করোনার ভ্যাকসিন। বাংলাদেশও নতুন বছরের শুরুতেই ভ্যাকসিন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

করোনার ফলে অর্থনীতির স্বাভাবিক প্রবাহ বন্ধ হয়েছে। মানুষের চলাচল ব্যাহত হয়েছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কাজের সুযোগ ও পরিধি সংকুচিত হয়েছে। অনেক মানুষকে বেকারত্বের যন্ত্রনা সহ্য করতে হচ্ছে, হবে। শিক্ষার্থীদের অবস্থা সবচেয়ে করুণ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে হয়তো ঝরে পড়বে অনেকে। সমাজে দেখা দেবে সুদূরপ্রসারী প্রতিক্রিয়া।

এদিকে নতুন বছরে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র পেতে চলেছে নতুন প্রেসিডেন্ট। গত ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, জিতেছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জো বাইডেন। আর এ বছরেই চাঁদ থেকে মাটি এবং পাথর এনেছে চীন। তবে দেশটির সঙ্গে ভারতের যে সীমান্ত বিরোধ, তা মেটেনি। বদলেছে পৃথিবীর প্রায় সব দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গতিপথ।

২০২০ সাল বাংলাদেশও পার করেছে ভালো-মন্দ মিলিয়ে। বাংলাদেশও করোনার ধকল মুক্ত থাকতে পারেনি। তবে যতটা বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা হয়েছিল ততটা হয়তো হয়নি বা অর্থনীতি সেভাবে ভেঙে পড়েনি। অনেকে কর্মহীন হয়েছেন, তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়। রাজনীতিও অনেকটাই করোনাকবলিত। রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতাও সীমিত।

এদিকে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে মুজিববর্ষ পালন করার পরিকল্পনা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি করোনার কারণে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এ বছরটাও পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী উদযাপন করা যাবে কি না, সেটি এখন দেখার অপেক্ষা।

সব মিলিয়ে করোনার কারণে ২০২০ সালকে বিদায় জানাতে হয়তো মন ভারাক্রান্ত হবে কম। তবে করোনা যে আমাদের পরিবারের সঙ্গে থাকতে শিখিয়েছে, জীবনের নতুন পথ দেখিয়েছে, নতুন বছর ২০২১ সালকে স্বাগত জানাতে হবে সেই চেতনা আর ভালো কিছুর প্রত্যাশা নিয়েই।

বাংলাদেশ সময়: ০০০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০১, ২০২১
এইচএমএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।