ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

লাল তেঁতুল, হতে পারে বিনোদনের খোরাক

মো. জাহিদ হাসান জিহাদ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ৫, ২০২১
লাল তেঁতুল, হতে পারে বিনোদনের খোরাক লাল তেঁতুল। ছবি: বাংলানিউজ

কুষ্টিয়া: থোকায় থোকায় ঝুলে আছে অসংখ্য তেঁতুল। তেঁতুলের কথা শুনলেই জিভে জল চলে আসে।

আর তা যদি হয় লাল টুকটুকে বর্ণের, তাহলে তো লোভটা আরও বেড়ে যায়। খাওয়ার জন্য না হলেও লাল বর্ণের তেঁতুল গাছে ঝুলছে এমন কথা শুনলেই যে কারোরই সাধ জাগবে দেখার। আর তাই লাল বর্ণের ব্যতিক্রমধর্মী এই তেঁতুল দেখতে দেশের দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসে দর্শনার্থীরা।  

এদিকে বহু বছরের পুরাতন এই তেঁতুল গাছটিকে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। গাছটি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য সরকারি উদ্যোগ গ্রহণের দাবি পরিবেশবীদদের।

বলছিলাম কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের হিজলবট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী পুরাতন লাল তেঁতুল গাছটির কথা।

লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে, সে যুগে নীলকররা যে সাধারণ মানুষকে অত্যাচার করতো সেটারই স্বাক্ষী স্বরূপ এই গাছের তেঁতুল লাল বর্ণের হয়েছে। তবে এ কথাটা অনেকটাই ভিত্তিহীন।

কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার উসমানপুরের হিজলবট এলাকায় গড়াই নদীর র্তীরবর্তী এই লাল বর্ণের তেঁতুল গাছ। তেঁতুল গাছের পাশেরই বাসিন্দা মুন্সি মোকাররম হোসেন। বয়সের ভারে প্রায় নুয়ে পড়েছেন তিনি। তবে তার দাবি তেঁতুল গাছটি যেমন ইতোপূর্বে দেখেছিলেন প্রায় তেমনই রয়ে গেছে।

মুন্সি মোকাররম হোসেন বাংলানিউজকে জানান, এখানে এক সারিতে এই তিনটি তেঁতুল গাছ রয়েছে। কে এই গাছ কবে লাগিয়েছে তা আমরা জানি না। তবে আমি শুনেছি যে ব্রিটিশ শাসনামলে এই তিনটি গাছের চারা রোপণ করা হয়। তিনটি তেঁতুল গাছের মধ্যে একটিতে লাল বর্ণের তেঁতুল ধরে। আর দুটো গাছে সাধারণ যে বর্ণের তেঁতুল হয় সেই রকমই তেঁতুল ধরে। বাইরে থেকে দেখলে বোঝার উপায় নেই কোনটা কোন বর্ণের তেঁতুল। তবে ভাঙলে কাঁচা অবস্থায় ভেতরটা টকটকে লাল, আবার পাকলে একই রকম হয়ে যায়।

তিনি আরো বলেন, অনেকেই মনে করেন তেঁতুলের রং লাল হওয়ায় এর স্বাদও ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু না, স্বাদ একই রকম।  

তিনি বলেন, এলাকাবাসীর ধারণা, ব্রিটিশ আমনে এখানে নীল চাষ হত। সে সময় এখানে নীলকরদের বাড়ি ছিল। পরবর্তীতে যা নদী ভাঙনের কবলে পড়ে শেষ হয়ে গেছে। তবে তাদের রোপণকৃত এই তেঁতুল গাছ তিনটি এখনো রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মনোয়ার আলী বাংলানিউজকে জানান, তিনটি গাছের তেঁতুলের স্বাদ ও গন্ধের কোনো পার্থক্য নেয়। তবে একটা গাছের তেঁতুল শুধুমাত্র কাঁচা অবস্থায় লাল সিঁদুরের মতো। তাই দূর দূরান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই লোকজন আসে এই তেঁতুল ও গাছ দেখতে।

রাশেদা বেগম নামে এক নারী বাংলানিউজকে জানান, এই তেঁতুল খেতে সাধারণ তেঁতুলের মতো হলেও রংটা খুবই সুন্দর। রক্তের মতো লাল বর্ণের। এই তেঁতুল দিয়ে আমরা গ্রামের নারীরা খুব সুন্দর আচার তৈরি করি। যখন দিনের বেলায় অতিরিক্ত গরম পড়ে তখন আমরা এই গাছ তলায় বসে বিশ্রাম নেই। অন্য জায়গার চেয়ে তেঁতুল গাছ তলায় ঠাণ্ডা থাকে। ছোট বাচ্চারা সারাদিন এই তেঁতুল গাছ তলায় খেলাধুলা করে। আর বাইরে থেকে যখন লোকজন আসে তখন আমাদেরও খুব ভালো লাগে।

এলাকাবাসীর দাবি লাল বর্ণের এই তেঁতুল গাছ দেখতে প্রতিদিনই যেহেতু লোকজন আসে। এটাকে যদি সরকারিভাবে সংরক্ষণ করা হয় তাহলে, দর্শনার্থীদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে সরকারি রাজস্ব আসবে সেইসঙ্গে গাছগুলো সংরক্ষিত থাকবে।

পরিবেশবীদ গৌতম কুমার রায় বাংলানিউজকে জানান, কাঁচা অবস্থায় তেঁতুলের ভেতরটা লাল বর্ণের হলেও স্বাদের দিক দিয়ে কোনো ভিন্নতা নেই। এই বর্ণের তেঁতুল গাছ পাওয়া বিরল। যেহেতু তেঁতুল গাছ অক্সিজেন বেশি সরবরাহ করতে পারে এজন্য এটা পরিবেশের জন্য খুবই উপকারী। এ ধরনের গাছকে সংরক্ষণের পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারিভাবে এর বংশ বিস্তারের ব্যবস্থা করে সারাদেশে রোপণ উপযোগী করলে এই লাল বর্ণের তেঁতুলের উৎপাদন বাড়বে।

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বিজ্ঞানীর মতে সাউথ এশিয়ায় এ ধরনের লাল তেঁতুলের অস্তিত্ব মেলে। যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ধরনের গাছের বিস্তারে উদ্যোগ গ্রহণ না করলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে।

 

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৫, ২০২১
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।