ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

সৈয়দপুরের গ্রামাঞ্চলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন নারীরা

মো. আমিরুজ্জামান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৮ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
সৈয়দপুরের গ্রামাঞ্চলে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন নারীরা

নীলফামারী: নিত্য অভাব-অনটন সংসারে। তাই বাড়ির পাশে পরচুলা তৈরির কারখানাতে কাজ করছেন নারীরা।

ফলে নারীর কাজ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। হয়েছেন স্বাবলম্বী। এসব পরিবারে আর অভাব নেই বললেই চলে। এ চিত্র নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে।

উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর, কামারপুকুর ও নেজামের চৌপথী এলাকায় গড়ে উঠেছে ছোট্ট পরিসরে কয়েকটি পরচুলা তৈরির কারখানা। সংসারের কাজ করে গৃহিনীরা কাজ করছেন কারখানাগুলোতে।  

বুলবুলি বেগম (৫৫)। স্বামী মারা গেছেন অনেক আগে। ছেলের সংসারে থাকেন। সংসারে রয়েছে অভাব-অনটন। নিজের হাত খরচ যোগাতে দলবদ্ধ হয়ে তিনিও করছেন পরচুলা তৈরির কাজ।  

তিনি বলেন, ছেলের সংসারে মোটামুটি খেয়েপড়ে দিন চলে। কিন্তু তারপরও নানা অভাব-অনটন রয়েছেই। নিজের জন্য অনেক কিছু প্রয়োজন হয়। সেগুলো তো আর ছেলে দেয় না, দিতে পারে না। প্রতিবেশীর বাড়িতে চুলের কাজ হচ্ছে ছয় মাস ধরে। আমিও এখানে কাজ করছি। নিজের প্রয়োজনের টাকাটা তো পাচ্ছি।  

কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লানছু চৌধুরী বলেন, এসব পরচুলা তৈরির কারখানা হওয়ায় এলাকায় একটা পরিবর্তন এসেছে। সবাই আয় করতে, বিশেষ করে নারীরা ছুটছেন এসব কারখানায়। এখানে কাজ করে অনেক নারী সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। কেউ বা পাকা বাড়ি করছেন। আমার ইউনিয়নের পালপাড়া, সিপাহিটারী এবং চৌপথি এলাকায় নারীদের ব্যস্ততা বেড়েছে অর্থনৈতিক কাজে। সকাল হলে কারখানায় দলবেধে যাওয়া আর বিকেল হলে দলবেধে বাড়ি ফেরার চিত্র চোখে পড়বে এলাকার সড়কগুলোতে। কেউ চুল বাছাই করেন, কেউ আবার প্রক্রিয়াজাত করেন এসব কারখানায়।
 
উদ্যোক্তা মুকুল মিয়া জানান, আমার কয়েকটি কারখানায় প্রায় দুই হাজার নারী কাজ করেন। সাব-কন্ট্যাক্ট নিয়ে পরচুলা উৎপাদন করছি। এগুলো ঢাকা পাঠানো হয়, যাদের কাছ থেকে আমরা অর্ডার নিয়েছি, তাদের কাছে। যারা কাজ করেন, তারা সবাই নারী। একেকজন মাসে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক ওঠাতে পারেন। ফলে এলাকার অনেক পরিবর্তন হয়েছে।  

তিনি বলেন, শুধু আমি নই, আমার মত আরও তিন-চারজন সাব-কন্ট্যাক্টে এ কাজ করাচ্ছেন। এলাকার সাত-আট হাজার নারী এর ফলে কাজ পেয়েছেন। তাদের সংসারে পরিবর্তন এসেছে।  

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) উপ-মহাব্যবস্থাপক হুসনে আরা বেগম বলেন, কেউ আর এখন শুধু গৃহিনী থাকতে চান না। গ্রামে ঘুরলে দেখা যাবে, নারীদের ক্ষুদ্র নানান কাজে অংশগ্রহণের চিত্র। নারীরা অর্থনৈতিক কাজে অংশগ্রহণ করায় অর্থনীতির চাকা মজবুত হচ্ছে এ অঞ্চলের। ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন নারীরা। নারীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, তারা কর্মক্ষেত্র তৈরি করছেন। এতে নারীরা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছেন, তেমনি সংসারে সক্ষমতা বাড়ছে। গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক কাজের বিকাশে নানাভাবে নারীদের পাশে রয়েছে বিসিক এবং সহযোগিতা করছে। এছাড়া বিসিকের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।