ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

বায়োস্কোপে বঙ্গবন্ধু

শাকিল আহমেদ, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২২
বায়োস্কোপে বঙ্গবন্ধু

ঢাকা: প্রাচীন গৌরবময় ও বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের লীলাভূমি বাংলাদেশ। এর বিস্তৃতি অঞ্চল বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ।

সোনারগাঁও বাংলার ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জ্বল প্রাচীন জনপদ। প্রায় তিনশ বছর সোনারগাঁও প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল। সুলতানী আমলের পটভূমিতে আমাদের সোনালি ঐতিহ্যের দিকে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখতে বেছে নেওয়া হয়েছিল সোনারগাঁকে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হওয়া সোনারগাঁয়ে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবকে আরও গতিময় করতে প্রদর্শন করা হয় ঐতিহ্যবাহী বায়োস্কোপ। আমাদের হারিয়ে যাওয়া এক ঐতিহ্যবাহী শিল্পের নাম বায়োস্কোপ। হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সার্বক্ষণিক কাজ করছেন বায়োস্কোপ মালিক জলিল মিয়া। চার কোণা একটি টিনের বাক্সে গোলাকৃতি ৪ থেকে ৬টি কাচের জানালা। বাঁশি বাজিয়ে আহ্বান জানিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোগল আমলের রাজা বাদশা, দুলদুল ঘোড়া, মক্কা-মদিনা, আজমির শরীফ, ক্ষুদিরামের ফাঁসির ছবি ইত্যাদি। দেখানো হতো বায়োস্কোপে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান, রাজা বাদশা, জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকা, বিভিন্ন ধর্মীয় পবিত্র স্থাপনা, মৃত্যুর পরের নানা কাল্পনিক কাহিনীর ৩৫ থেকে ৪০টি ছবি জোড়া দিয়ে লাগানো হতো। বাক্সের মধ্যে দুই পাশে দুটি ঘুড়ির লাটাইয়ের মতো জিনিস থাকতো। যা পেঁচিয়ে স্থির ছবি চলমান রেখে প্রদর্শন করা হতো। বায়স্কোপওয়ালা হাত দিয়ে হাতলটি ঘুরাতে থাকে আর সুর করে ছবির বর্ণনা দিতে থাকেন। বায়স্কোপওয়ালা জলিল মিয়া বাংলানিউজকে জানান, আমার বাপ-চাচারা বায়োস্কোপ খেলা দেখাতেন। তাদের কাছ থেকে শিখে আমি গত ৪০ বছর ধরে দেশে জেলায় জেলায় বৈশাখীসহ বিভিন্ন মেলা বায়োস্কোপ প্রদর্শন করে থাকি। এতে আমার পেট চলে না। তবু ও বাংলাদেশের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমি এই বায়োস্কোপ প্রদর্শন করে থাকি। জলিল মিয়া আরও জানান, গত ৪০ বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিসহ বায়োস্কোপ প্রদর্শন করে আসছি। কিন্তু, বর্তমান পেক্ষাপটে ছেলেমেয়েরা অনেকেই বায়োস্কোপ সম্বন্ধে ধারণা খুবই কম। তারা মোবাইলফোনের ওপর বেশি নির্ভরশীল। তাই আমি তাদেরকে বায়োস্কোপ সম্বন্ধে ধারণা দেই। বায়োস্কোপ দেখে অনেকে টাকা দেয়। আবার অনেকে টাকা দেয় না। তাতেও আমার কোন কষ্ট হয় না। এই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে আমি বায়োস্কোপের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামীণ মেলায় প্রদর্শন করে থাকি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সোনারগাঁওয়ে শুরু হয় মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব। সংষ্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়াধীন বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ আয়োজন করে এই মেলার। দেশের লুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যের অনন্য উপাদান পুনরুদ্ধার ও নতুন প্রজন্মকে এর সঙ্গে পরিচয় করে দেওয়ার জন্যই হচ্ছে মূলত লোককারুশিল্প মেলা। মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব । মেলায় গিয়ে দেখা যায়, গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ভূঙ্গবাজ তালেবাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সোনারগাঁ জাদুঘর দেখতে আসা শিক্ষার্থী নাজনীন আক্তার জানান, আমরা জাদুঘরে প্রাচীন সুলতানদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, তৈজসপত্র, পোশাক, বর্ম, অলংকার ইত্যাদি দেখেছি। এত দিন শুধু বইয়ে পড়েছি। কিন্তু আজকে দেখে খুব ভালো লাগলো।  শিক্ষার্থীরা এসব দেখে অনেক আনন্দে আপলুত হয়ে পড়ে। এছাড়াও সোনারগাঁ লোকশিল্প জাদুঘরে বাংলার প্রাচীন ও মধ্য যুগের লোকশিল্পের অনেক নিদর্শন রয়েছে এখানে, রয়েছে বাংলার প্রাচীন মুদ্রা। কারুপল্লীতে বৈচিত্র্যময় দোচালা, চৌচালা ও উপজাতীয়দের আদলে তৈরি ঘরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা, অচেনা, আর্থিকভাবে অবহেলিত অথচ দক্ষ কারুশিল্পীর তৈরি বাঁশ-বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, একতারা, পাট, শঙ্খ, মৃৎশিল্প ও ঝিনুকের সামগ্রী ইত্যাদি। সোনারগাঁ জাদুঘর রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য যা বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে সহায়তা করবে। এছাড়াও লোক-কারুশিল্প মেলায় গিয়েও দেশে সাংস্কৃতি সম্পর্কে জানা যায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।