ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

খানজাহানের (রহ.) মাজারে ৫৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
খানজাহানের (রহ.) মাজারে ৫৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু 

বাগেরহাট: বাগেরহাটে হযরত খানজাহানের (রহ.) মাজারে ৫৫০ বছরের ঐতিহ্যবাহী মেলা শুরু হয়েছে।  

বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) ফজরের নামাজের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা শুরু হয়।

তিনদিনের এ মেলা চলবে শনিবার (১৯ মার্চ) সন্ধ্যা পর্যন্ত।  

এতো বছর ধরে খানজাহানের (রহ.) মাজারে বাংলা চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ মেলা হয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী। ঐতিহ্যবাহী এ মেলায় দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষাধিক ভক্ত ও দর্শনার্থীদের সমাগম হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।  

এরই মধ্যে মাজার ও মাজার সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর লোকের সমাগম হয়েছে। অনেকে মনোবাসনা পূরণের আশায় স্রষ্টার আরাধনায় মগ্ন থাকেন এখানে এসে। শুধু মুসলিম নয়, অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরাও এসেছেন এখানে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন পণ্যের পশরা সাজিয়ে বসেছেন অনেক দোকানি। দর্শনার্থী ও মেলায় আগত দোকানিদের নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করছেন।

টুরিস্ট পুলিশ, বাগেরহাট জোনের ইনচার্জ মোশারেফ হোসেন বলেন, তিনদিনের এ মেলায় এখানে লক্ষাধিক লোকের সমাগম হবে। এসব ভক্ত ও দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় টুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। আমরা আমাদের ইউনিটের ফোন নম্বর দেওয়ালে এবং প্রকাশ্য স্থানে টানিয়ে দিয়েছি। এছাড়া ফেসবুকসহ অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আমাদের নম্বর রয়েছে, কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে আমাদের ফোন দিলেই আমাদের পুলিশ সদস্যরা সেখানে পৌঁছে যাবেন। মেলার এ তিনদিন সার্বক্ষণিক মাজারে দায়িত্ব পালনের কথাও বলেন তিনি।

মাজারের মেলায় আসা ঝিনাইদহ এলাকার মহিবুল ইসলাম বলেন, খানজাহানের (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে মেলা উপলক্ষে আমরা পরিবারসহ এসেছি। ভালো লাগছে। তিনদিন আমরা এখানে থাকব। আমাদের মানতও ছিল, তা সম্পন্ন করেছি।

খুলনার ডুমুরিয়া থেকে আসা রবিউল ইসলাম বলেন, প্রতি বছর আমি ঐতিহ্যবাহী এ মেলা দেখতে আসি। দক্ষিণ অঞ্চলের মানুষের কাছে এ মেলা খুবই জনপ্রিয়। গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতির জন্য মেলাটি হয়নি, তাই এ বছর মেলা হওয়ায় বেশ ভালো লাগছে।

স্থানীয় আমজেদ শেখ বলেন, করোনার কারণে দুই বছর বন্ধ ছিল। এছাড়া আমাদের বাড়ির কাছে প্রতি বছর এ মেলা আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরা আসেন। এ বছর মেলা শুরু হওয়ার একদিন আগে থেকেই দর্শনার্থীরা আসতে শুরু করেন। আজ মেলার প্রথম দিন হাজারো মানুষের আগমন ঘটেছে।

সনাতন ধর্মাবলম্বী সীতারানী দেবনাথ বলেন, প্রায় ২৫ বছর ধরে আমি মেলায় আসি। প্রতি বছরই রোগ-বালাই ও বিপদ আপদ থেকে মুক্তির জন্য আমাদের মানত থাকে। এবারও মানত ছিল, এসে সম্পন্ন করেছি। মেলা শেষে রোববার আমরা চলে যাব।

মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, প্রায় ৫৫০ বছর ধরে খানজাহানের (রহ) মাজারে প্রতি বছর মেলা হয়। চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে এ মেলা বসে। সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এবার মেলা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মেলায় অর্ধলক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে। আমরা সবাই চেষ্টা করছি, যাতে দর্শনার্থীরা এখানে শান্তিতে মেলা উদ্যাপন করতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, পূর্ব পুরুষদের কাছে যতদূর শুনেছি, ৫৫০ বছর ধরে এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এ মেলা খানজাহানের (রহ.) মৃত্যু বা জন্ম দিনে হয় না। অতীতে এখানে চৈত্র মাসের পূর্ণিমা তিথিতে ভক্তরা এসে জড়ো হতেন। যেটা ধীরে ধীরে মেলায় রূপ নিয়েছে। প্রতি বছর দেশ-বিদেশ থেকে লক্ষাধিক মানুষ আসে এ মেলায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২২
এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।