ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্য অনুরাগী করে শেষ হলো লোকজ মেলা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
নতুন প্রজন্মকে ঐতিহ্য অনুরাগী করে শেষ হলো লোকজ মেলা

গোপালগঞ্জ থেকে: লোকজ সংস্কৃতি এ দেশের মানুষের হৃদয়ের কথা বলে, মাটির কথা বলে। সহজ সাবলীল ভাষায় জীবনের সুন্দরতম দিকটির কথা বলে।

হাজার বছরের সেই লোকজ উপকরণকে বাঁচিয়ে রাখতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হলো 'মুজিব বর্ষ লোকজ মেলা'।

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় অনুষ্ঠিত ১০ দিনব্যাপী এই মেলার শেষ দিন ছিল শনিবার (২৬ মার্চ)।

এদিন মেলা প্রাঙ্গন ঘুরে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন স্টলগুলো তৈরি করা হয়েছে পরিবেশ বান্ধব বাঁশ, কাঠ, ছনসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে মেলা শুরু হয়ে চলেছে রাত ১০টা পর্যন্ত। এই মেলায় সরকারি-বেসরকারি মোট ১০০টি স্টল রয়েছে। সুলভ মূল্যে পছন্দের পণ্য কিনতে পারছেন মেলায় আগতরা। মেলায় অংশগ্রহণ করতে পেরে খুশি স্টলগুলোর প্রতিনিধিরাও।

ঢাকার উদ্যোক্তা ফারহানা শারমীন সুচি এসেছিলেন কাপড়ের পুতুলের পসরা নিয়ে। তিনি বলেন, মেলাতে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছি। তবে আমরা উদ্যোক্তারা অংশগ্রহণ করতে পেরেছি এটাই সবচেয়ে বড় কথা। এর মাধ্যমে আমাদের হাজার বছরের লোকজ উপকরণকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে। নতুন প্রজন্ম এ সম্পর্কে জানতে ও দেখতে পারছি।

ঠিক একই কথা বললেন মেলায় আসা অভিভাবক ও দর্শনার্থী রিয়া শিকদার নুরাইয়া। তিনি বলেন, এই মেলার মাধ্যমে আমরা বাঙালির ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছি ও বাচ্চাসহ ভাইবোনদের এই লোকজ উপকরণগুলোর সঙ্গে পরিচিত করাচ্ছি। আর মেলা ঘুরে বাচ্চাদের দেখাচ্ছিলাম, যেন ওরা এগুলো শিখতে পারে। এই কাজে আমরাও যেন ছোটবেলার স্মৃতির সঙ্গে আবার মিশে যাচ্ছিলাম।

মেলা ঘুরে দেখা যায়, হাতের তৈরি শাড়ি, কাপড়, পাঞ্জাবি ঘোড়া, মাটির পুতুল ও অন্যান্য জিনিসপত্র, বাঁশ ও পাটের তৈরি জিনিসপত্র, হাতে তৈরি ঘোড়া, হাতি, সিকা, শীতলপাটিসহ বিভিন্ন লোকজ উপকরণ স্থান পেয়েছে এই লোকজ মেলায়, যা সাধারণত অন্য কোথাও দেখা যায় না।

মেলায় ঘুরতে আসা অন্যান্য দর্শনার্থীরা জানান, এখানে অনেক ধরনের পণ্য আছে যা আগে কোনদিন দেখিনি। এখানে পরিবারের সঙ্গে এসে খুবই ভালো লাগছে। নিজেদের ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছি, শিখতে পারছি। এই ধরনের আয়োজন আরও বেশি হওয়া প্রয়োজন।

মেলার আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির চারুকলা বিভাগের পরিচালক মাহবুবা করিম মিমি বলেন, কালের বিবর্তনে লোকসংস্কৃতিগুলো বিলুপ্ত হওয়ার পথে। এই মেলায় হারিয়ে যাওয়া লোকসংস্কৃতি ঐতিহ্য পুনরায় প্রাণ পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা হয়, তবে এই মেলা ভিন্ন রূপের। আমাদের ছেলে মেয়েদের জানা উচিত যে তাদের পূর্বপুরুষের ইতিহাস কেমন ছিল। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে জ্ঞান নির্ভর একটি জাতি হিসেবে তৈরি করার উদ্দেশ্যে আমাদের এই উৎসব আয়োজন। আশা করছি, এখান থেকে তারা অনেক কিছুই গ্রহণ করবে।

উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধুর জন্মস্থান গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়। প্রথমবারের মতো এমন আয়োজন বেশ উপভোগ করছেন স্থানীয়রা। তারা পরিচিত হয়েছেন বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতির সঙ্গে। শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ও আয়োজনে টুঙ্গিপাড়া শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঠে ছয় দিনব্যাপী এই মেলা আয়োজিত হয়।

বাংলাদেশ সময়: ০১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২২
এইচএমএস/এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।