ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলা হা-ডু-ডু

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৪ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ খেলা হা-ডু-ডু হা-ডু-ডু খেলা।

ভোলা: গ্রামীণ ঐতিহ্যের এক সময়ের জনপ্রিয় খেলা হা-ডু-ডু এখন অনেকটাই বিলুপ্তির পথে। গ্রামের কাচা রাস্তায়, মাঠ, বাগানে বা খোলা স্থানে জমজমাট ও উৎসবমুখর পরিবেশে হতো এ হা-ডু-ডু খেলা।

কিন্তু কালের আবর্তে সেই খেলা এখন আর দেখা যায় না। আধুনিক খেলা এবং যান্ত্রিক জীবনের ব্যস্ততার কাছে হেরে গেছে এ গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় এ খেলাটি।

এখন আর কোনো উৎসবে বা বিশেষ দিবসে এ খেলার আয়োজন হয় না। তাই নতুন প্রজন্ম জানে না এ খেলা সম্পর্কে। ভুলতে বসছেন অন্যরাও। তাই নতুন করে খেলোয়াড়ও তৈরি হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিশেষ দিন বা উৎসবে গ্রামে গ্রামে জমজমাভাবেই হা-ডু-ডু খেলার আয়োজন করা হতো। চারদিকে বিরাজ করতো আনন্দ-উচ্ছ্বাস। হা-ডু-ডু খেলার আয়োজনকে ঘিরে গ্রামজুড়ে চলতো মাইকিং প্রচার-প্রচারণা। দূর-দুরান্ত, পাড়া-মহল্লা থেকে শত শত মানুষ গ্রাম বাংলার জনপ্রিয় হা-ডু-ডু খেলা দেখতে আসতেন। জমজমাট ছিল এ আয়োজন। রঙিন কাগজ ও পতাকায় সাজানো হতো খেলার মাঠ ও আশ-পাশের এলাকা। খেলা শেষে বিজয়ী দলকে দেওয়া হতো রঙিন বা সাদা কালো টেলিভিশন, রেডিও, চ্যাম্পিয়ন ট্রফি, স্বর্ণ বা রূপার মেডেলসহ বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণীয় পুরস্কার। খেলা শেষ হয়ে গেলেও মাসব্যাপী সেই খেলা নিয়ে চলতো আলোচনা। আগ্রহ থাকায় প্রতিবছরই গ্রামে গ্রামে নতুন নতুন খেলোয়াড় তৈরি হতো। কিশোর-যুবক এমনকি বৃদ্ধরাও হা-ডু-ডু খেলার আগ্রহ প্রকাশ করতেন। কিন্তু এখন আর গ্রামে সেই দৃশ্য চোখে পড়ে না। ক্রিকেট-ফুটবলসহ আধুনিক বিভিন্ন খেলা, মোবাইল গেইম, ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইটে আসক্ত হয়ে পড়েছে যুব সমাজ তাই হা-ডু-ডু খেলা অনেকেই ভুলে গেছেন। তবে এখনও মাঝেমধ্যে দুই/এক জায়গায় খেলাটির আয়োজন হতে যায়।

এমনি প্রীতি খেলার আয়োজন দেখা গেছে ইলিশা ইউনিয়নের বাঁধের ওপর। জেলেদের দুইটি গ্রুপ বিভক্ত হয়ে এ খেলায় মেতে উঠেন। সেখানে দেখা গেছে শতাধিক দর্শকদের উচ্ছ্বাস।

বিলুপ্তপ্রায় সেই হা-ডু-ডু খেলাটি দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে একজন সোলাইমান ও আব্বাস উদ্দিন বলেন, হা-ডু-ডু খেলাটি গ্রামের অনেক জনপ্রিয় খেলা। কিন্তু এখন আর তেমন দেখা যায় না। গ্রামে এ খেলার আয়োজন হতেও দেখা যায়। হঠাৎ করেই বাঁধের ওপর হা-ডু-ডু খেলা দেখতে পেয়ে ছুটে এলাম। বহু বছর পর খেলা দেখে খুব ভালোই লাগছে। আরেক দর্শক বিপ্লব কর্মকার ও লক্ষণ বলেন, বিকেলে ঘুরতে বের হয়েছি, বাঁধের ওপর হা-ডু-ডু খেলা চলছিল। দেখেই ছুটে এলাম। মনে হচ্ছিল সেই পুরনো দিনে ফিরে এসেছে। শত শত নারী-পুরুষ এ খেলা উপভোগ করেন। নানা কারণে এ খেলাটি এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এটিকে ফিরিয়ে আনতে হবে।

স্থানীয় কয়েকজন বৃদ্ধ জানালেন, গ্রামের ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে হা-ডু-ডু খেলাটি। জনপ্রিয় খেলাটি আবার ফিরিয়ে আনার দরকার। তাহলে গ্রাম বাংলার এ খেলাটি প্রাণ ফিরে পাবে।

এ ব্যাপারে ভোলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ইয়ারুল আলম লিটন বলেন, গ্রামীণ ঐতিহ্যের হা-ডু-ডু খেলাটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। গ্রামে এখনও প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছেন। এ খেলাটি ফিরিয়ে আনতে হলে তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। তবে আমরা প্রতিবছরই কাবাডির আয়োজন করছি। জেলায় এখন পর্যন্ত ২০০ জন কাবাডির খেলোয়াড় রয়েছেন। গ্রামের ছেলেদের প্রশিক্ষণ দিলে ভালো ভালো খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, জুলাই ২৪, ২০২২
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।