ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

হাওরজলে প্রতিফলিত শরতের নীলাকাশ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২
হাওরজলে প্রতিফলিত শরতের নীলাকাশ  নীলাকাশের সৌন্দর্য হাওরের জলে মিশেছে। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: প্রাকৃতিক জলাভূমির আরেকটি বিশাল রূপ হাওর। গ্রামীণ বাংলার প্রান্তর ঘিরে উপকারী জলরাশি।

বাতাসের সাথে বিচিত্র ঢেউয়ে ঢেউয়ে নেচে উঠে তার দেহ। তবে সারাবছর হাওর একই অবস্থায় থাকে না, বদলে যায়। প্রকৃতির আপন ঋতুবৈচিত্র্যের সাথে সেও দ্রুতই পাল্টে যায়।  

যেখানটা আজ জলপূর্ণ ছিল, কয়েক সপ্তাহ পরে সেখানটা শুকনো অবস্থায় পরিবর্তিত হয়ে পড়ে। চিনে নিতে কিছুটা অসুবিধা হয় যে, এখানটা একসময় পানিতে থৈ থৈ ছিল! আজ শুকনো বা কাঁদাময় স্থান।



শরতের রানি এমন হাওরকেই পেয়ে বসে! উন্মুক্ত বুকপাঁজরের এই প্রসারিত প্রান্তরকে পেয়ে সে তার সমস্ত সৌন্দর্য সহজেই মেলে ধরে। নীলা আকাশজুড়ে ভাসতে থাকে তখন সাদা মেঘেদের ছুটোছুটি দৃশ্য।  

বোধ করি বলাই উচিত, প্রত্যেক মানুষেরই কম বা বেশি পরিমাণে একটা সৌন্দর্যে মুগ্ধ অনুসন্ধানী দৃষ্টি রয়েছে। অনেকেই প্রকৃতির এরূপ বিমোহিত অপরূপ দৃশ্যাবলীতে মুগ্ধ হতে চান। শরৎরানি বাংলার প্রাকৃতিক জলাভূমি ঘিরে তার সৌন্দর্য মেলে ধরেছে। যেখানে নীল আকাশের শোভা প্রতিফলিত হচ্ছে হাওরজলে।  

হাওরের কোনো পাড় থেকে এই রূপ যতটা দেখতে ভালো লাগে তারচেয়ে ঢের বেশি ভালো লাগে নৌকাভ্রমণ থেকে। হাওর প্রতিবিম্বে শরতের নীলাকাশটা ধরা পড়ে দারুণভাবে। সাদা মেঘের প্রতিচ্ছবি হাওরজলে! এ এক অপূর্ব শোভা। নৌকার থেকে হাওরপাড়ের এমন সৌন্দর্যগুলো দেখতে দেখতে নয়ন জুড়িয়ে যায়। তবে দুপুরবেলার রোদের তীব্রতা সহ্য করতেই হয়। এক্ষেত্রে ছাউনিনৌকাই অতি উত্তম।  

নৌকা ধীরগতিতে চলছে সামনের দিকে। সোজা দেখা গেল বিশালাকৃতি জাল। কয়েকটি বাঁশের কাঠামো ওপর সজ্জিত বড় আকারের জাল বাঁধা। গ্রামাঞ্চলের এমন জালকে অঞ্চলভেদে খড়াজাল, ধর্মজাল অথবা কোণাঘর জাল বলে।  



সাধারণত চৌকো আকৃতির আড়াআড়ি আটকানো বাঁশের চারটি ফালির চার মাথায় জলের চারটি কোণা শক্তভাবে এই বিশেষ জালটি বাঁধা থাকে। পানি থেকে জলটাকে উঠানোর জন্য বাঁশের বড় হাতলকে লিভারের মতো ব্যবহার করা হয়। জলাভূমির গুরুত্বপূর্ণ স্থানে স্থায়ীভাবে বসানো হয় এই জাল। এমন বড় আকারের জাল এবং তার বাঁশের কাঠামোর দিকে চোখ সহজেই চলে যায়।  

কিছুক্ষণ পর আরেকটি সুন্দর দৃশ্য দেখা গেল। একটি ডিঙি নৌকা মাঝি এবং জেলেকে নিয়ে মন্থরগতিতে ধেয়ে চলেছে। মাঝি এক কোণায় বসে নৌকাটি চালাচ্ছেন আর সামনের দিকে দাঁড়িয়ে থাকা জেলে ত্রিকোণাজাল হাতে নিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করছেন।   

সম্প্রতি শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইলহাওরের শোভায় মাখামাখি হতে গিয়ে জলাভূমিধ্বংস চিত্রও ধরা পড়লো। জালে জালে আটকানো হাওর। অধিকাংশই কারেন্ট জাল! মাছের বংশ নির্বংশ করতে এপন্থাই যথেষ্ট। ক্যামেরা বের করে জালের দিকে তাক করলেই নৌকার মালিক সুরজিত বাবুর করুণ মিনতি,  ‘ভাই আমাকে আর বিপদে ফেলবেন না। প্রকৃতি দেখতে এসেছেন, তা-ই দেখেন। আমাকে বিপদে ফেলার চেষ্টা করবেন না অনুগ্রহ করে। ’



মৎস্যবিভাগ সূত্র জানায়, এই প্রাকৃতিক জলাভূমির আয়তন ৪ হাজার ৫১৭ হেক্টর। এর মাঝে ১ হাজার ৪৪০ হেক্টর বিল ও খাল এবং ৫০ হেক্টর নদী বিধৌত এলাকা। তবে বর্ষা এবং পরের মৌসুমে এই হাওর ১০ হাজার হেক্টরে বিস্তৃর্ণ হয়ে পড়ে।   
 
সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো তবে করে কী? এর উত্তরে তার উক্তি, ‘যারা জাল দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে রেখেছে হয় তারা জোরপূর্বক একটা করেছে। নয়তো তারা সরকারিভাবে ডাক এসেছে। দেখেন না হাওরের আশপাশজুড়ে প্লাস্টিকের নেট অথবা কারেন্ট জাল। ’ এ প্রসঙ্গে কথা আর এগুলো না। অন্য প্রসঙ্গে ফিরে গেল কথারা!

বাংলাদেশ সময়: ১১৫৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২২ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।