ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফিচার

‘মামা, লাল রঙের চান্দের গাড়ি রাইখেন’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২
‘মামা, লাল রঙের চান্দের গাড়ি রাইখেন’ লাল চান্দের গাড়িতে পর্যটকদের প্রকৃতি ভ্রমণ। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: ‘চান্দের গাড়ি’ আর ‘লাল রং’ –এ যেনো একে অপরের পরিপূরক। একটা ছাড়া অন্যটা হয় না।

অন্য রং হলে চলবে না! লাল রঙেই হতে হবে। এ এক সত্যি আশ্চর্য রকমের চাহিদা! যা অন্যান্য রংগুলোকে পেছনে ফেলে এই বিশেষ রংটাকেই সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে।

এ শিরোনামের মানে বুঝতে বাকি নেই যে – লাল রঙের গাড়ির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ‘লাল’ রং কেন? অন্য রং কেন নয়? এই প্রশ্নটাও তো স্বাভাবিকভাবে চলে আসাটা অস্বাভাবিক নয়।  

এর মানে খুঁজতে হলে দেখা যায়, প্রাচীনকাল থেকে এই লাল রংটি গৌরব, উৎসাহ, আনন্দ, পরাক্রম, সম্মান, সৌভাগ্য, যশ, সুস্বাস্থ্য প্রভৃতি শব্দাবলিতে রাঙা। তাহলে কী একটি বিশেষ রঙের ভেতর দিয়ে সেই শব্দগুলো আমাদের নতুন প্রজন্মের মাঝে ফিরে আসা কোনো এক চাহিদা? 

তবে এটাও সত্য যে, এই রংটি বিপদাপন্ন বা বিপজ্জনক কোনো পরিস্থিতির সত্যতা জানান দেয়। যা দেখলে ভয় আর শঙ্কায় কেঁপে উঠে বুক।

প্রায় দুই দশক বা তারও কিছু বেশি সময় ধরে ‘চায়ের রাজধানী’ ‘শ্রীমঙ্গল’ নতুন একটি নামে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আর সেই বিশেষ নামটি হলো ‘পর্যটন নগরী’। একে তো চায়ের রাজধানী তার ওপর শ্রীমঙ্গল তার আপন শারীরিক সৌন্দর্য বাড়িয়ে পর্যটন নগরীতে ভূষিত হয়েছে। ফলে দেশি-বিদেশি ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের অন্যতম ভালো লাগার স্থানে কিংবা অন্যতম আকর্ষণীয় স্পট হিসেবে পরিণত হয়েছে শ্রীমঙ্গল।  

পর্যটকদের ভ্রমণের মাধ্যমে হিসেবে যে চারচক্রযান (চার চাকার গাড়ি) এর ব্যাপক চাহিদা তার নাম ‘চান্দের গাড়ি’। তবে গাড়িটির প্রস্তুতকারী মৌলিক নাম ‘মিৎসুবিসি জিপ’। কী কারণে যে গাড়িটির সঙ্গে চান্দ যুক্ত করে এই অদ্ভুত নামকরণ করা হয়েছে তা কেউই সঠিকভাবে বলতে পারেননি। শ্রীমঙ্গলে আগত পর্যটকদের কাছে অন্য কোনো রঙের গাড়ি নয়, শুধু লাল রঙের চান্দের গাড়ির চাহিদা সর্বাধিক। দেশের দূর-দূরান্ত থেকে চালকের পূর্ব-পরিচিত কোনো কোনো পর্যটক ফোনে অগ্রিম বুকিং দিয়ে শর্তজুড়ে দেন যে, লাল রঙের চান্দের গাড়ি হতে হবে! নিজেদের ট্যুর প্লানে যেন অত্যাবশ্যক হিসেবে থাকে এই গাড়ির ব্যবহার।  

অনেকের কাছে এমন শর্তটি আশ্চর্যজনক মনে হলেও পর্যটকের কাছে সেটি শান্তিময় ভ্রমণের প্রিয়তম যান। এটি না পেলে যেন শ্রীমঙ্গল ভ্রমণ করাটাই বৃথা। তাছাড়া শ্রীমঙ্গলের অরণ্যঘেরা উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথে কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়াই নিরাপদ যাত্রার এক বিশ্বস্ত গাড়ি এই মিৎসুবিসি জিপ। গাড়িতে ফোর হুইল গিয়ার রয়েছে বলে যেকোনো ধরনের উঁচু কাদাযুক্ত টিলা অনায়াসে যেতে সক্ষম। পাহাড়ি দূর জনপদের এক প্রাচীন সঙ্গী এই চান্দের গাড়ি।  

চান্দের গাড়ির চালক ইদ্রিস মিয়া বলেন, এখন শীত মৌসুমে প্রচুর দেশি-বিদেশি পর্যটকরা শ্রীমঙ্গলে আসছেন। তাদের অধিকাংশই লাল চান্দের গাড়ির খোঁজ করেন। বুকিংয়ের সময় আগের থেকে ফোন দিয়ে বলেন যে, ‘মামা, লাল রঙের চান্দের গাড়ি রাইখেন কইলাম...। ’ লাল গাড়ির প্রতি পর্যটকদের এমন আগ্রহ আর চাহিদা দেখে অনেক গাড়ি আগের রং পাল্টিয়ে লাল করে ফেরছে। পর্যটকরা ফোনে আরও দাবি করে বলেন যে, ‘গাড়ির ওপরটা যেন খোলা থাকে। আমরা গানের তালে তালে যেন নাচতে পারি।

ভাড়া প্রসঙ্গে এ চালক বলেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চান্দের গাড়ির বুকিং মোটামুটি ৫ হাজার টাকা। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবপুর লেইক, নিরালাপুঞ্জি যেখানেই যান, একদিনের এই রেইট আমরা একটু এদিক-সেদিক করে নিয়ে থাকি। তবে দূরের পর্যটন স্পট যেমন বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড ঝরনায় গেলে সারাদিন লেগে যায়। যারা খুব কম সময়ের জন্য শ্রীমঙ্গল ঘুরতে আসেন তাদের জন্য এই স্পটটা দেখা সম্ভব হয় না। এই স্পটের ভাড়া ২৫শ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা।  

এই গাড়িগুলো আগে শ্রীমঙ্গলে আনারস, লেবু, পান ইত্যাদি পরিবহনের কাজ করতো।  ইদানিং কয়েক মাস ধরে অধিকাংশ গাড়ি আগের কাঁচামাল টানার ব্যবসা বাদ দিয়ে লাল রং ধারন করে চান্দের গাড়িতে নতুনভাবে সেজেছে বলে জানান ওই চালক।

সকালে একটি রেস্তোরাঁয় সামনে কয়েকজন ট্যুরিস্টের গ্রুপ নাস্তা সেরে অপেক্ষা করছিলেন চান্দের গাড়ির। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনটি লাল চান্দের গাড়ি এসে হাজির। হৈহুল্লোর করে সবাই গাড়িতে উঠে পড়েলেন। কথা হয় তাদের ট্যুরিস্ট গ্রুপে কয়েকজনের সাথে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সৌরভ বিশ্বাস লাল রঙে গাড়ি পছন্দ প্রসঙ্গে জানান, আসলে সবুজ চা বাগানের ভেতর লাল রঙটা দারুণ ফুটে ওঠে। ছবিতে ভালো আসে এই দুই রঙের কম্বিনেশন। মূলত সেজন্যই লাল রঙের চান্দের গাড়ি নেওয়া। তাছাড়া লাল চান্দের গাড়ির একটা মেথডও রয়েছে। মানে বিষয়টি বর্তমান সময়ের চাহিদার সাথে যায়।  

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০২২ 
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।