ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

ফুটবল

জয় উদযাপন করতে মা'কে ভোলেন না হাকিমি

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৭, ২০২২
জয় উদযাপন করতে মা'কে ভোলেন না হাকিমি

এবারের বিশ্বকাপে অন্যতম ফেভারিট মানা হচ্ছিল বেলজিয়ামকে। সেই শক্তিশালি বেলজিয়ামকে ২-০ গোলে হারিয়ে শেষ ষোলো নিশ্চিত করেছিল মরক্কো।

আজ শেষ ষোলোতে শক্তিশালি স্পেনকে টাইব্রেকারে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে মরেক্কো। পর গ্যালারিতে থাকা মায়ের কাছে ছুটে যান পিএসজির মরক্কান ফুলব্যাক আশরাফ হাকিমি। তাদের আলিঙ্গন আর একে অপরের কপালে স্নেহমাখা চুমুর ছবি-ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। আজ স্পেনের বিপক্ষে টাইব্রেকারে হাকিমির গোলের পরই জয় নিশ্চিত হয় মরক্কোর। জয়ের পরই ছুটে যান মায়ের কাছে। এরপরই সেই স্বর্গীয় দৃশ্য। এতে দেখা যায় মা সাইদা মু ছেলে আশরাফের গালে চুমু খাচ্ছেন। আর ছেলে চুমু খাচ্ছেন মায়ের কপালে। সাইদার গায়ে জড়ানো ছিল মরক্কোর পতাকা। আশরাফ এখানেই থেমে থাকেননি। নিজের জার্সি খুলে মাকে দিয়েছেন। আশরাফ শব্দের অর্থ উত্তম। তিনি এ মাতৃভক্তির মধ্য দিয়ে সে উত্তমেরই পরিচয় দিয়েছেন।  

আশরাফ হাকিমির জীবন সহজ ছিলো না। সংগ্রাম করেই নিজের অবস্থান তৈনি করতে হয়েছে তাকে। আর এই সংগ্রামের অন্যতম যোদ্ধা তার মা সাইদা মু। যে মা তার সন্তানদের মানুষ করতে করেছেন পাহাড়সমান কষ্ট। পরিবার সামলাতে স্পেনে করেছেন বাসাবাড়ি পরিষ্কারের কাজ। তার বাবা হাসান হাকিমিও কষ্ট করেছেন স্পেনের রাস্তায় রাস্তায়। ফেরি করে বিক্রি করেছেন মালামাল।

পিএসজির রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমি নিজের জীবনের গল্প নিয়ে কখনোই কোনো লুকোচুরি করেননি। বুন্দেসলিগার ওয়েবসাইটে নিজের জীবন সংগ্রামের কথা বলেছিলেন হাকিমি। সেখানে বলেছিলেন, ‘আমার মা ঘর পরিষ্কার করতেন। বাবা ছিলেন রাস্তায় ভাসমান বিক্রেতা। আমরা একটি সাধারণ পরিবার থেকে এসেছি। যারা জীবিকার জন্য সংগ্রাম করেছিল। আজ আমি প্রতিদিন তাদের জন্য লড়াই করি। তারা আমার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছেন। তারা (মা-বাবা) আমার ভাইদের আমার সফলতার জন্য অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত করেছিলেন। ’

জাতীয়তা মরক্কান হলেও স্পেনের রিয়াল মাদ্রিদে জন্ম আশরাফ হাকিমির। শিকড়ের প্রতি আশরাফ হাকিমির টানও প্রশংসনীয়। কারণ, তিনি ইচ্ছে করলে স্পেনের জন্য খেলতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে খেলছেন মরক্কোর জন্য। এটি তার পিতৃভূমি। জন্মসূত্রে স্পেনের নাগরিক হলেও তিনি মরক্কোরও নাগরিক, জন্ম ১৯৯৮ সালের ৪ নভেম্বর মাদ্রিদে। আশরাফের ভাষ্য, ক্লাব ফুটবলে খেলা মানে শুধু একটি শহরের জন্য খেলা। আর দেশের হয়ে খেলা মানে পুরো জাতির জন্য খেলা। এই খেলা মানে পূর্বপুরুষদের জন্য খেলা।

কাতার বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হন হাকিমি-জিয়াশরা। শক্তি-সামর্থ্যে অনেক পিছিয়ে থাকলেও ক্রোয়াটদের পায়ের সঙ্গে পা মিলিয়ে লড়াই করে ১ পয়েন্ট অর্জন করে মরক্কো। দ্বিতীয় ম্যাচে বেলজিয়ামকে হারিয়ে গ্যালারির দিকে ছুটে যান আশরাফ হাকিমি। নিজের মাকে জড়িয়ে ধরেন ফরাসি ক্লাব পিএসজি’র এই তারকা। কীর্তিমান ছেলের কপালে আবেগমিশ্রিত চুমু এঁকে দেন রত্মগর্ভা মা সাইদা মু। আশরাফ হাকিমি এবং তার মায়ের এমন ভালোবাসার দৃশ্য মোহিত করেছিল বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীকে। পরের ম্যাচে কানাডর সঙ্গে হারলেও শেষ ষোলো নিশ্চিত হয়। আর শেষ ষোলেতে জন্মভূমি স্পেনকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল। মরক্কোর ইতিহাস গড়া জয়ে ছেলে কীর্তি কাছ থেকেই দেখলেন তার মা। এই ম্যাচেও জয়ের পর মায়ের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করতে ভুললেন না হাকিমি। এই ম্যাচে জয়ের পরই অবতরন হলও সেই স্বর্গীয় দৃশ্যের।

বাংলাদেশ সময়: ০২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৭, ২০২২
এআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।