তাকে ঘিরে জল্পনা কম হয়নি। ২০২২ বিশ্বকাপের পর থেকেই বলা হচ্ছিল, ব্রাজিলের পরবর্তী কোচ হতে যাচ্ছেন তিনি।
আজ আনুষ্ঠানিকভাবে লস ব্ল্যাঙ্কোসদের সঙ্গে ২০২৬ সাল পর্যন্ত চুক্তি নবায়ন করেছেন তিনি। অর্থাৎ আরও দুই মৌসুম মাদ্রিদেই থাকছেন এই বর্ষীয়ান কোচ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। এর আগের চুক্তি অনুযায়ী ২০২৪ সালের গ্রীষ্মেই বিদায় নেওয়ার কথা ছিল তার।
চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করলে সবমিলিয়ে এস্তাদিয়ো সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে নিজের দ্বিতীয় মেয়াদে পাঁচ বছর কাটাবেন আনচেলত্তি। এর আগে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত রিয়ালে নিজের প্রথম মেয়াদ কাটিয়েছেন তিনি।
শীতকালীন ছুটিতে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়রা সবাই ছুটি কাটাচ্ছেন। এর আগেই চুক্তি নবায়ন নিয়ে ক্লাবের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন আনচেলত্তি। প্রাথমিক আলোচনা শেষে মৌখিকভাবে সম্মতি জানিয়েছিলেন তিনি। পরে যা নিশ্চিত করেছে রিয়াল।
রিয়াল মাদ্রিদ গত কয়েক মৌসুমে অনেকটাই বদলে গেছে। অনেক চেনা মুখ বিদায় নিয়েছেন। এর মধ্যে ক্লাবের সফলতম ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বিদায় নেওয়ার পর ভাঙা-গড়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয় ক্লাবটিকে। সর্বশেষ ক্লাবের ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার করিম বেনজেমা এবং ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার মার্সেলোরা বিদায় নেওয়ার পর তরুণদের নিয়ে গড়া দল সামলাচ্ছেন আনচেলত্তি।
নতুনদের নিয়েও ভালোভাবেই প্রত্যাশা পূরণ করেছেন তিনি। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত লা লিগার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে আছে রিয়াল। চ্যাম্পিয়নস লিগেও গ্রুপ পর্বে সব ম্যাচ জিতে সুবিধাজনক স্থানে আছে তারা। তার অধীনে নিজেদের দারুণভাবে মেলে ধরেছেন তরুণ ইংলিশ ফুটবল তারকা জুড বেলিংহাম এবং ব্রাজিলের ২২ বছর বয়সী উইঙ্গার রদ্রিগো।
রিয়ালে তরুণদের তুলে আনার পেছনে আনচেলত্তির ভূমিকা অসামান্য। সম্প্রতি নিকো পাজ এবং গনসালো গার্সিয়াকে বয়সভিত্তিক দল থেকে মূল দলে জায়গা করে দিয়েছেন রিয়াল কোচ। দলে ইনজুরি হানা দেওয়া সত্ত্বেও নতুন খেলোয়াড় না কিনে তরুণদের সুযোগ করে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ফলে তার ওপর ভরসা রেখেছে স্প্যানিশ জায়ান্টরা। যে কারণে ব্রাজিলের সঙ্গে তার যোগাযোগের খবর প্রকাশের পর থেকেই তাকে ধরে রাখার আয়োজন শুরু করে ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
আনচেলত্তিকে পেতে মরিয়া চেষ্টা চালিয়েছিল ব্রাজিলিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনো (সিবিএফ)। ২০২২ বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের ব্যর্থতার পর দায়িত্ব ছেড়ে দেন সেসময়ের কোচ তিতে। এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত কোচের অধীনেই খেলছে তারা। তবে গ্রীষ্মেই সিবিএফ ঘোষণা করে বসে, ২০২৪ কোপা আমেরিকায় ব্রাজিলের ডাগআউটে দেখা যাবে আনচেলত্তিকে। পরে রিয়াল যখন তার কাছে এর সত্যতা জানতে চায়, তখন তিনি জানিয়েছে দেন সিবিএফের দাবি সত্য নয়।
এ মাসের শুরুর দিকে ব্রাজিলের রিও দি জেনেরিওর আদালত সিবিএফের প্রেসিডেন্ট পদ থেকে এদনালদো রদ্রিগেসকে সরিয়ে দেওয়ার পর এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, আনচেলত্তির সঙ্গে তাদের চুক্তির কোনো সম্ভাবনা আর নেই। যদিও ২০২২/২৩ মৌসুমটা হতাশায় কাটার পর আনচেলত্তির ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। কারণ গত মৌসুমে তার দল কোপা দেল রে, সুপার কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপ জিতলেও লা লিগা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেনি।
গত মৌসুম ভালো না কাটলেও আনচেলত্তির অধীনে অসংখ্য সাফল্য পেয়েছে রিয়াল। দুই মেয়াদে তার কোচিংয়ে ২৪০টি ম্যাচ খেলেছে রিয়াল। সংখ্যার দিক থেকে তার সামনে আছেন কেবল ক্লাবের আরেক কিংবদন্তি কোচ মিগুয়েল মুনোজ। টানা ১৪ মৌসুম দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। তার অধীনে রিয়াল খেলেছে ৫৯৫ ম্যাচ। আনচেলত্তি রিয়ালকে দুইবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছেন। আর একবার জেতাতে পারলেই তিনি ছুঁয়ে ফেলবেন ফরাসি কিংবদন্তি জিনেদিন জিদানের কীর্তি। এছাড়া আর একবার করে কোপা দেল রে, সুপার কাপ এবং ক্লাব বিশ্বকাপ জিতলে ছাড়িয়ে যাবেন বাকিদেরও।
আনচেলত্তির চুক্তি নবায়নের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর, জানুয়ারিতে অনুশীলনে ফিরবে রিয়াল। এরপর স্প্যানিশ সুপার কাপের সেমিফাইনালে আতলেতিকো মাদ্রিদের মুখোমুখি হবে তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০২৩
এমএইচএম