২০২৩ সালের শেষ দিন আজ। কয়েকঘণ্টা বাদেই শুরু হবে নতুন বছর।
বরং উল্টোপথে হেঁটেছে বললে ভুল হবে না। নারী ফুটবলে বছরের শুরুতেই বইতে থাকে বদলের হাওয়া। পদত্যাগ করেন সাফজয়ী কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। অবসরে যান সাফজয়ী বেশ ক’জন ফুটবলার। অবশেষে সেই ধাক্কা সামলে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে মেয়েরা। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচে জয় দিয়ে বছর শেষ করেছেন সাবিনারা।
জয় দিয়ে বছর শেষ করা নিয়ে বাফুফের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নারী উইংয়ের চেয়ারপারসন মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, ‘২০২৩এ আমাদের অনেক প্রতিবন্ধকতা ছিল। সেগুলো পার করে আমি মনে করি বছরের শেষটা আমাদের খুব ভালো হয়েছে। সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে আমরা ভালো ব্যবধানে জয় দিয়ে বছর শেষ করেছি। সেহেতু আমি বলবো শেষ ভালো যার সব ভালো তার। ’
২০২৩ সালের শুরুটা নারী ফুটবলের জন্য মোটেও সুখকর ছিল না। পিতৃতুল্য কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দায়িত্ব ছাড়া বড় ধাক্কাই ছিল সাবিনাদের জন্য। একে একে ফুটবল থেকে অবসর নেনে সাফজয়ী দলের আনুচিং মোগিনি, সাজেদা খাতুন, সিরাত জাহান স্বপ্না। দেশ ছাড়েন আঁখি খাতুন। এসব কারণে সাফ জয়ের পর নারী ফুটবলের প্রতি আরও আগ্রহ বাড়ার বদলে দেখা গেল বিমুখিতা।
সাফ জয়ের পর দীর্ঘ সময় নারী ফুটবল মাঠে নিতে পারেনি বাফুফে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নারী ফ্রাঞ্চাইজি লিগ করার কথা হলেও তা আর হয়নি। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে খেলার কথা ছিল সাবিনাদের। তবে শেষ মুহুর্তে তা বাতিল হয়। আরেকটি ফিফা উইন্ডোতে খেলতে পারেননি তারা।
অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে লেবাননে দুটি ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশ নারী দলের। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে লেবাননের অশান্ত পরিবেশে বাফুফে সফর বাতিল করে। শেষ পর্যন্ত ডিসেম্বরে সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে দুটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এতেই অবশ্য তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন বাফুফে কর্তারা।
এ বছর অবশ্য বেতন বেড়েছে নারী ফুটবলারদের। তবে এই বেতন বাড়াতে কম কাঠ-খড় পোড়াতে হয়নি তাদের। নতুন বিদেশি কোচের আশ্বাস মিললেও এখনো তা পূরণ হয়নি। নারী ফুটবল দলের দায়িত্ব সাইফুল বারী টিটুর কাছেই রয়েছে।
তবে নতুন বছর নিয়ে আশাবাদী কিরণ বলেন, ‘২০২৪ এ আমাদের সাফ-এএফসি মিলিয়ে অনেকগুলো টুর্নামেন্ট আছে। ফেব্রুয়ারি থেকে খেলা শুরু হবে। ফেব্রুয়ারিতে আছে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯, যেটা ঢাকাতেই খেলা হবে। তার জন্য আমরা প্রস্তুত। মার্চে আছে অনূর্ধ্ব-১৬ টুর্নামেন্ট। তার থেকেও বড় যে আসর রয়েছে সেটা হলো সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে সিনিয়র সাফ টুর্নামেন্ট। সেটাও ঢাকাতেই আয়োজন করা হবে। ’
‘সব টুর্নামেন্টের জন্যই আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। বছরের শুরু থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করবো। যতগুলো ফিফা উইন্ডো আছে সবগুলোতেই ভালো দলের বিপক্ষে আমাদের খেলার চেষ্টা থাকবে। শুধু খেলার চেষ্টা না; আমরা চাইবো প্রতিটা ম্যাচেই জিততে এবং র্যাংকিংয়ে উন্নতি করতে’ যোগ করেন তিনি।
আগামী সাফেও দল শিরোপা ধরে রাখবে এমনটাই বিশ্বাস করেন মাহফুজা আক্তার কিরণ। নতুন বছরে নানান টুর্নামেন্টের কথা জানালেও নারী ফুটবল লিগ নিয়ে কিছু বলেননি তিনি। গত বছর সাফের শিরোপা জেতার পর নারী ফুটবল নিয়ে আশা-প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে ম্যাচসংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ঘরোয়া লিগের মান বাড়ানোরও দাবি উঠেছিল। কিন্তু এর কোনটাই হয়নি। আন্তর্জাতিক ম্যাচ যেমন খুব বেশি খেলতে পারেনি মেয়েরা, তেমনি লিগের মানও বাড়ানো হয়নি।
গেল তিন বছর লিগে অংশ নিয়ে মান বাড়ানোর চেষ্টা করেছে বসুন্ধরা কিংস। কিন্তু এবার সেই দলটাকেই ধরে রাখা গেল না। কিংসের না খেলার সিদ্ধান্তে অপেশাদার এই লিগের মান কোথায় গিয়ে নামে সেটি নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রশ্ন। এমনকি লিগের ভাগ্য নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে!
কিংসের সরে দাঁড়ানোর পেছনে বাফুফে কর্তাদেরও দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। দেখার বিষয় নারী ফুটবলের উন্নয়নে আগামী বছর বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩
এআর/এমএইচএম