শুধু নিজের ঘুম নয়, ঘুম হারাম করার ইচ্ছে সংশ্লিষ্ট সকলের। ফুটবলের পরিবর্তন আনতে ছুটবেন শূন্য থেকে সর্বোচ্চ শৃঙ্গে।
ইমরুল হাসান ‘ফুটবল ৩৬০’ প্রকল্পটি ৬টি স্তরে বিভক্ত করেছেন। তার চৌকস স্তরগুলো হলো—অর্গানাইজেশনাল, স্ট্র্যাটেজিক, অপারেশনাল, মার্কেটিং, মিডিয়া ও ইভেন্ট, ফ্যানস এবং ভলানটিয়ার। এই স্তর বিভাগের কর্মপরিধিগুলোর জন্য তিনি স্বল্প, মধ্য, দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবায়নের একটি দিক নির্দেশনাও দিয়েছেন।
তিনি ভুলে যাননি; ফুটবলের সূতিকাগার তৃণমূল পর্যায়। সেখান থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্টের সব স্তরেই পরিবর্তনের পরিকল্পনা রয়েছে তার। বৈশ্বিক ফুটবল আঙিনায় বিপণনেই ফুটবলের সর্বোচ্চ উন্নয়ন সম্ভব এটা প্রমাণিত হয়েছে। এক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল পার্থক্য আমাদের ফুটবলের। তাই ফুটবলকে বিপণনযোগ্য করে তুলতে ইমরুলের রয়েছে ভিন্ন পরিকল্পনা। একটি কার্যকর মার্কেটিং টিম গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে পৃষ্ঠপোষকতা সংকট কাটিয়ে তোলায় গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। এই মার্কেটিং টিম তাদের কাজগুলোকে সময় অনুযায়ী সবার সামনে তুলে ধরবে। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো বুঝতে পারে যে, তাদের বিনিয়োগ সঠিক জায়গায় হচ্ছে এবং এই বিনিয়োগের ফলে তাদের সুবিধার দিকগুলো তারা জানতে পারবে। তাদের দেওয়া অর্থ কোন খাতে, কীভাবে খরচ করা হবে তা সবিস্তারে প্রেজেন্টেশনে উল্লেখ থাকবে।
শুধু ফুটবল নয়, বিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা ফুটসাল নিয়েও রয়েছে তার পরিকল্পিত পরিকল্পনা। রয়েছে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ের স্টেডিয়াম নিয়েও সুচিন্তিত ভাবনা এবং সমস্যা সমাধানের পথ। ই-স্পোর্টসকেও আনতে চান একটি ঝলমলে প্ল্যাটফর্মে। এসবের জন্য ফিফা-এএফসি সার্টিফাইড স্টেডিয়াম নির্মাণ করে সুনির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য নিয়ে কাজ করার কথা বলেছেন ইমরুল। আগামী ৬ বছরের মধ্যে এশিয়ান কাপ বিচ ফুটবল, ৮ বছরের মধ্যে বিচ বিশ্বকাপে নাম লেখানো, ফিফা ই-বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বিষয়গুলোও রয়েছে।
ফুটবল পরিচালনার জন্য অপরিহার্য রেফারি থেকে শুরু করে সাংবাদিক কিছুই বাদ যায়নি ইমরুল হাসানের পরিকল্পনায়। ফুটবলকে যে ধারণ করেন তার স্পষ্ট প্রমাণ ফুটে উঠেছে এই ‘ফুটবল ৩৬০’-এ। বাফুফে এবং সরকারি সংস্থা তথা ক্রীড়া পরিষদ এবং মন্ত্রণালয় বরাবরই একটি বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকে। এখানেও সমান্তরাল গতিপথে আনতে চান তিনি। চান একে অপরের পরিপূরক হয়ে ফুটবলকে এগিয়ে নিতে।
অর্গানাইজেশনাল ভাগে তিনি নির্বাহী কমিটির মাধ্যমে কী করে বাফুফে পরিচালিত হবে, তার একটা রূপরেখাও দিয়েছেন। বাফুফের সংবিধান, নির্বাচনী বিধিমালা, শৃঙ্খলা নীতিমালা, মেম্বারশিপ গাইডলাইনের বিষয়টিও তার ভাবনায় রয়েছে। বেশ কিছু নতুন স্ট্যান্ডিং কমিটি তিনি প্রস্তাব করেছেন ফিফা ও এএফসি আদলে। বাফুফেতে বর্তমানে যে স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো আছে, সেগুলো বেশিরভাগই নিষ্ক্রিয় এবং আধুনিক ফুটবলের সঙ্গে মানানসই নয়। তাই তিনি সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এখানেও পরিবর্তন আনতে চান।
স্ট্র্যাটেজিক বিভাগে কোচদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, ম্যানেজমেন্টের সক্ষমতা বৃদ্ধি, পাতানো খেলা বন্ধে গঠিত কমিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং টাস্কফোর্স গঠন করে প্রকল্পভিত্তিক কাজগুলো এগিয়ে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাফুফের টাস্কফোর্স বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কাজ করবে। এখানে দুটি অধ্যায়ের কথা বলেছেন তিনি। একটি ‘ওয়ান ডিস্ট্রিক্ট ওয়ান ক্লাব’ প্রজেক্ট। যে প্রজেক্টের আওতায় প্রতিটি জেলায় অন্তত একটি করে ক্লাব থাকবে। যাদের ফিফা ও এএফসির গাইডলাইন মেনে ক্লাব লাইসেন্সিং করানো হয়। এভাবে ৬৪ জেলা থেকে ৬৪টি ক্লাবকে মডেল ক্লাব হিসেবে গড়ার চেষ্টা করবেন। এ ছাড়া সরকারের সহায়তায় ৮ বিভাগে আটটি ফুটবল স্টেডিয়াম বরাদ্দ নেওয়ার কথা বলেছেন তিনি।
বাফুফের টাস্কফোর্সের আরও বেশ কিছু কাজ আছে। বিভিন্ন রিজিওনাল সেন্টার, মেডিক্যাল সেন্টার করার পরিকল্পনা তিনি দিয়েছেন। জেলার লিগগুলো কী করে নিয়মিত এবং অর্থবহ করা যায়, তারও একটা দিক নির্দেশনা তিনি দিয়েছেন।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ইমরুল হাসান। একক প্রার্থী হওয়ায় নির্বাচনী বৈতরণি পার হয়েছেন বিনা বাধায়। নিশ্চিন্তেই থাকতে পারতেন তিনি। তবে তেমনটি করেননি। বরং ফুটবলের উন্নয়নের পথরেখা প্রকাশ করে সম্ভাব্য রানিংমেটদের কাজ সহজ করে দিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বাকি প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারণা নিয়েই ব্যস্ত। কিছু কিছু প্রার্থী এগিয়ে থাকা নারী ফুটবল উন্নয়নের নানা কথা বলেছেন। বাকিসব মুখস্থ বুলি। ইমরুল হাসানের ‘ফুটবল ৩৬০’ পাল্টে দিতে পারে অনেকেরই মনোভাব। তাই বলা যায়, ‘ফুটবল ৩৬০’ নতুন সম্ভাবনার আলো ছড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ২৪০০ ঘণ্টা, ২৫ আগষ্ট ২০২৪
এআর