ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

বাফুফে সভাপতির কাছে সাবিনার দাবি, ‘বেতন যেন নিয়মিত হয়’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, স্পোর্টস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
বাফুফে সভাপতির কাছে সাবিনার দাবি, ‘বেতন যেন নিয়মিত হয়’

টানা দ্বিতীয়বার সাফ জয় করে গতকাল দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। নেপালকে ২-১ গোলে হারিয়ে আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দেওয়ায় ছাদখোলা বাসে বিরোচিত সংবর্ধনা দেওয়া হয় তাদের।

 

প্রিয় ফুটবলারদের কাছ থেকে দেখতে আজ বাফুফে ভবনে অপেক্ষায় ছিলেন বেশ কিছু সমর্থক। এতেই প্রমাণ মেলে দেশের মানুষের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা কতটা।  

সাফ জয়ের আগে থেকেই মেয়েদের বেতন অনিয়মিত হওয়ার কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। সেসব নিয়ে আজ গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপ করেছেন অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। যেখানে বেতন বাড়ানোর দাবি তুলেছেন তিনি। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য-

সাফ জয়ের পর আজ দুপুরে কী খাওয়া-দাওয়া করলেন?

সাবিনা: আজ দুপুরে আমরা অনেক রকম ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। মেয়েরা অনেকদিন দেশের বাইরে ছিল। তাদের আজকে চাওয়া ছিল ভর্তা দিয়ে খাবে। তাই আজ আমরা ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়েছি। প্রায় ১২-১৪ রকমের ভর্তা ছিল। অনেকগুলোর নাম আমার মনে নেই।  

সাফ জয়ের কৃতিত্ব কাকে দেবেন?

সাবিনা: অবশ্যই আপনাদের, দেশের মানুষদের। দেশের মানুষের জন্যই এই অর্জন। সব মেয়েরা দেশের মানুষের জন্য খেলে। শুধু আমরা না সব ইভেন্টের খেলোয়াড়রাই দেশের জন্য খেলে। জয় যখন আসে, দেশের মানুষদের কথাই সবার আগে মাথায় আসে।  

পুরো টুর্নামেন্টেই তো ভিন্ন ভিন্ন ম্যাচে চ্যালেঞ্জ ছিল। আপনার কাছে মূল টার্নিং পয়েন্ট কোনটি বলে মনে হয়েছে?

সাবিনা: আমি মেয়েদের নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। আমি তাদের খুব ভালোভাবেই চিনি। তাদের পারফরম্যান্স সম্পর্কে আমি জানি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের পর পরিস্থিতি আমাদের জন্য কঠিন হয়ে গিয়েছিল। ম্যাচটা ড্র হওয়ার পরে আমাদের সামনে এমন সমীকরণ দাঁড়িয়েছিল আমাদের গোল কম হজম করতে হবে। যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হতে চাই তাহলে আমাদের জিততে হবে। সবার মাথায় সেটা ছিল। সবাই অনুপ্রাণিত ছিল। পাশাপাশি চেষ্টা করেছি দলটাকে চাঙ্গা রাখার।

জয়ের পর নিজেরা কীভাবে উদযাপন করলেন?

সাবিনা: সত্যি বলতে, মেয়েরা অনেকখানি পানসে। আপনারা দেখেছেন মাঠের ভেতর তারা অনেক উদযাপন করেছে অনেক হাসি খুশি ছিল তেমনটাই। এছাড়া তেমন বিশেষ কিছু করা হয়নি। হাসি-ঠাট্টা মজা করেই উদযাপন করা হয়েছে। এছাড়া অনেক ছোট মেয়ে আছে যারা এখনো কীভাবে উদযাপন করতে হয় সেটাও ঠিকভাবে বোঝে না। তবে শেষ টিম মিটিংয়ে আমি বলেছিলাম নির্ভার থাকতে। আমাদের আসলে হারানোর কিছু ছিল না। শেষ সাফে আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। তবে দলে ৯ জন নতুন মেয়ে ছিল তাদের জন্য আমরা চ্যাম্পিয়ন হতে চেয়েছি। যেন তাদের নামের পাশেও একটি শিরোপা জয়ের গৌরব থাকে।  

গত সাফ থেকে ফেরার পর অনেক প্রত্যাশা দেওয়া হয়েছিল আপনাদের। ম্যাচ বেশি খেলার আশা দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া এশিয়ান পর্যায়ে লক্ষ্য নির্ধারণের কথা বলা হয়েছিল। এবার কি সেই প্রত্যাশা পূরণ হবে বলেন মনে হয়?

সাবিনা: এখনো বাফুফের বর্তমান সভাপতি তাবিথ আউয়ালের সঙ্গে আমাদের কথা হয়নি। দেশের বাইরে আছেন তিনি। তবে আমি উনার অনেক সাক্ষাৎকার দেখেছি, যেখানে উনি মেয়েদের ফুটবলের উন্নতির কথা বলেছেন। মেয়েদের ফুটবল নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করার কথা বলেছেন। আমি আশা করছি আমাদের আর্থিক বিষয়গুলোর পাশাপশি উনি আমাদের বাকি সব চাহিদাও পূরণ করবেন।  

ক্রীড়া উপদেষ্টার কাছে আপনাদের চাহিদা কী ছিল?

সাবিনা: আসলে চাহিদা কিছু ছিল না। উনি মেয়েদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। বলেছেন এমন সাফল্য যেন বারবার আসে। তিনি বলেছেন নারী ফুবল দল এবং নারী ক্রিকেট দলের সুযোগ সুবিধা যেন বাড়ানো যায় এই লক্ষ্যে তিনি দুই কর্তৃপক্ষের সঙ্গেই কথা বলবেন।

বাফুফের সভাপতি দেশে এলে তার কাছে আপনাদের কোনো চাওয়া-পাওয়া আছে কি না? 

সাবিনা: চাওয়া-পাওয়া তো অবশ্যই আছে। আমরা চাইব বেতনটা যেন বাড়ানো হয়। বেতনটা যেন নিয়মিত হয়। এছাড়া আমাদের নারী লিগ যেন নিয়মিত হয় এবং আরও লম্বা সময় ধরে হয়। মাঠে যেন খেলাটা থাকে। এছাড়া আরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ যেন খেলতে পারি। এই সাফের পর আমি চাই আমরা যেন দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেই পরে না থাকি। আমরা যেন পুরো এশিয়ার মধ্যে নিজেদের মেলে ধরতে পারি।  

আগামীকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন। সেখানে আপনাদের কোনো চাওয়া আছে কি না?

সাবিনা: সত্যি বলতে আমি গতকালই বিমানে একজন সাংবাদিককে বলেছি, তার প্রশ্নের প্রেক্ষিতে যে মেয়েরা খুবই নিম্মবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। কিছুদিন আগে যে বন্যা হয়েছে সেখানে কয়েকজনের পরিবারের বাসায় পানি উঠে গেছে। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে আমাদের পরিবারের মানুষরা যখন বাড়ি থেকে ঢাকায় আসেন তখন সত্যি বলতে তাদের থাকার কোনো জায়গা থাকে না। আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রধান উপদেষ্টার কাছে অনুরোধ করব, তিনি যেন মেয়েদেরকে কোনো বাসা বা ফ্ল্যাট দিতে পারেন, সেটাই মেয়েদের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার হবে।  

ভারতের খেলোয়াড়রা দেশের বাইরে বিভিন্ন লিগে খেলে। আমাদের দেশে আপনি ভারত-মালদ্বীপের বিভিন্ন ক্লাবে খেলেছেন অন্যরা সেভাবে সুযোগ পাচ্ছেন না। এই বিষয়ে কিছু বলতে চান?

সাবিনা: এখন আর পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। এখন সময়ে এসেছে মেয়েদের দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে নিজেদের নিয়ে যাওয়ার।  আমার সঙ্গে পাকিস্তানের অধিনায়কের সঙ্গে বেশ ভালো সম্পর্ক। সে আমাকে বলেছেন যে তোমরা ইউরোপের ক্লাবে খেলার যোগ্য। তোমাদের মধ্যে অনেক খেলোয়াড় রয়েছে যারা ইউরোপের ক্লাবে খেলার যোগ্যতা রাখে। এই বিষয়ে ফেডারেশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করব। যেন তারা এই বিষয়ের প্রতি নজর রাখে।

সাফ জয়ে করে দেশে ফিরলেন ক্যাম্পের বাকি মেয়েদের কোনো আবদার ছিল কি না?

সাবিনা: আমাদের পিচ্চিরা? না তাদের তেমন কোনো আবদার ছিল না। তারা শুধু বিরিয়ানি খেতে চায়। তবে খাওয়ার ঘোষণা বেশি মাসুরা (পারভীন) দিয়ে থাকে। কোনো কিছু হলেই সে খাওয়ানোর ঘোষণা দেয়। কী খাওয়াবেন এসব বলে। তবে মাঝে মাঝে আমরাই ফেডারেশনের মধ্যে রান্না করে খাওয়ার আয়োজন করি।
 
গোলাম রব্বানী ছোটন আবার কোচ হয়ে ফিরলে আপনার কি মতামত থাকবে?

সাবিনা: এটা আসলে ফেডারেশনের বিষয়। তবে তিনি অনেক দিন আমাদের কোচ ছিলেন, তার অনেক সাফল্য রয়েছে। তিনি ফিরে এলে এটা অবশ্যই আমি ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখব।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
এআর/এএইচএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।