ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

জয়টাই বড় কথা ।। ফরহাদ টিটো ।।

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৪
জয়টাই বড় কথা ।। ফরহাদ টিটো ।।

ব্রাজিলের বেশিরভাগ সমর্থকই খুব হতাশ। দল এত কষ্ট করে জিতবে কেন ! বলতে গেলে প্রায় পুরো খেলাই তো ভালো খেললো চিলি।

৯০+৩০=১২০ মিনিট খেলাই ড্র। তারপর হারতে হারতে ব্রাজিলই জিতলো টাইব্রেকারে। আর টাইব্রেকারে গোলরক্ষক জুলিও সিজারের কৃতিত্ব যতটা, ভাগ্যেরও ততটা। কারণ, টাইব্রেকার মানেই এক ধরনের লটারি। যে কেউ জিততে পারে। এই পর্বে ভালো বা খারাপ দল বলতে কিছু নেই।

তবে খেলাটা কি টাইব্রেকার পর্যন্ত যাওয়ার কথা? ইংলিশ রেফারি হাওয়ার্ড ওয়েব এই খেলায় ব্রাজিলের সেরা খেলোয়াড় হাল্কে’র দেওয়া গোলটা কেন যে বাতিল করলেন তা এখনো পরিষ্কার না।

৫৪ মিনিটে ছুটন্ত হাল্ক যেভাবে বুকে বলটা রিসিভ করে গোলে শট নিয়েছিলেন তা কি হ্যান্ডবল ছিলো? টিভি ক্যামেরা আর তার স্লো মোশন তো বারবারই দেখাচ্ছিলো বল হাতে লাগেনি! তার মানে একটা বৈধ গোল করেও ব্রাজিলের ভাগ্যে জোটেনি তা, বরং হলুদ কার্ডের শিকারও হতে হয়েছে গোলদাতাকে।

রেফারি’র ভুল হতেই পারে- এটা সবাই মেনে নিতে পারেনা। পারেনা, বিশেষ করে ঐ ভুল সিদ্ধান্তে নিজের দল যদি হেরে যায়। ব্রাজিলের বেলায় তেমনটি হয়নি কাল। যতই ভাল খেলুক চিলি, দিনশেষে জয়ী দলের নাম ব্রাজিল। কোয়ার্টার ফাইনালের টিকেট পাওয়া প্রথম দলের নামও ব্রাজিল। হেরে যাওয়া দল চিলি এখন অতীত। জয়ী দল ব্রাজিল বর্তমান।

এমনকি ইতিহাসের কাছেও ভালো খেলার কোনো দাম নেই। পরিসংখ্যানে কোথাও লেখা থাকবেনা 'ভালো খেলেও বিদায় নিয়েছিলো চিলি'। নকআউট রাউন্ডের মুলমন্ত্রটাও এমন- ‘গো বিগ অর গো হোম’। টিকতে হলে জিততে হবে।

যদিও এই জয়টা ব্রাজিলের জন্য ' অল্পের জন্য বেঁচে গেলাম'। আর চিলির জন্য এই ফল 'আল্পের জন্য কতকিছু হয়নি'।

নেইমার কেন গোল করতে পারলোনা, আগের মতো ভালো খেললো না এই নিয়ে কত কথা! তাকে নিয়ে হতাশাটা 'ব্রাজিল -বিরোধী'দের চাইতে ব্রাজিল সমর্থকদেরই বেশি। কেন? একটা দিন অফডে' হতেই পারে একজনের জন্য। তাছাড়া কি পরিমাণ কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিলো তাকে চিলির ডিফেন্ডাররা তাও বিবেচনায় আনতে হবে।

উপরন্তু, পায়ের কোনো মাসলে বা হ্যামস্ট্রিং-এও সমস্যা হচ্ছিলো তার শেষদিকে, যা বার বার ধরা পড়ছিলো টিভি ক্যামেরায়।
 
নেইমার ও তার আরেক তারকা সহযোগী ওসকার তাদের নামের প্রতি সুবিচার না করতে পারলেও হাল্ক, ব্রাভো ,মারসেলো-রাতো পুরোপুরিই ফর্মে ছিলেন। ডেভিড লুইজ তো জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক গোলও করে ফেলেছেন। টাইব্রেকারে জাতিকে বাঁচিয়ে দেওয়া মানুষটির নামও ভিন্ন- জুলিও সিজার। আর নেইমারের নেওয়া শেষ পেনাল্টি কিকটা যদি মিস হতো? তাহলে হয়তো সবই শেষ হয়ে যেত ব্রাজিলের!

অন্যদিকে চিলির বড় দুই তারকা আরতুরো ভিদাল আর আলেক্সিস সানচেজের পারফরম্যান্স ছিলো চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে সানচেজ বার বার যেভাবে হানা দিচ্ছিলেন ব্রাজিল সীমান্তে,তাকে আটকাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলো ব্রাজিলের ডিফেন্স। শেষ পর্যন্ত ডিফেন্সের খামখেয়ালিপনাকে কাজে লাগিয়ে গোল করে খেলার ফল ১-১ করে ফেলেছিলেন আলেক্সিস সানচেজই।

পরের খেলাতেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলো সাউথ আমেরিকার আরো দু’টি দল। যাতে কলম্বিয়া দাঁড়াতেই দেয়নি সুয়ারেজহীন উরুগুয়েকে। দুই গোলের ব্যবধানে জয়ী কলম্বিয়ার হয়ে দু'টি গোলই করেছেন ওদের স্ট্রাইকার হামেস (ইংরেজিতে জেইমস) রড্রিগেজ। দুই গোল করে এই হামেসই এখন এবারের বিশ্বকাপে সেরা গোলদাতা। তার নাম এখন মেসি, মুলার , নেইমারের উপরে।

স্মরণ করতে দোষ নেই,গত দু’টি বিশ্বকাপে সবচে'বেশি গোল করে যারা গোল্ডেন বুট জিতেছিলেন তারাও করেছিলেন পাঁচ গোল।
 
সুতরাং শেষমেষ যে-ই জিতুক সোনার জুতা, গোলদাতা হিসেবে আপাতত সবার উপরে থাকার আনন্দ নিয়েইতো কোয়ার্টার ফাইনাল খেলতে নামবেন রড্রিগেজ। আগামী শুক্রবার ঐ খেলায় কলম্বিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম কিন্তু ব্রাজিল। তার মানে ঝড়টা সামলাতে হবে ব্রাজিলকেই। আর ব্রাজিলের গত খেলার যে পারফরম্যান্স তা যদি তারা ধরে রাখে তাহলে সেমিফাইনালে যাওয়ার স্বপ্নমৃত্যু ঘটবে কলম্বিয়ার হাতেই-তা বোধ হয় এখনি বলে দেওয়া যায়।

তবে দলটার নাম যেহেতু ব্রাজিল আর খেলা হবে ব্রাজিলে, তারা ফিরে আসবেই স্বাভাবিকতায়। সুস্থ থাকলে জ্বলে উঠবেন নেইমারও। আমিতো তাই মনে করি।


বাংলাদেশের ‍আধুনিক স্পোর্টস সাংবাদিকতার পথিকৃৎ মনে করা হয় তাকে। বর্তমানে কানাডার মন্ট্রিয়লে থাকেন। তবে এখনও স্পোর্টস এবং লেখালেখি তার হ্রদস্পন্দনের ‍সাথেই যেনো মিশে আছে। বিশ্বকাপ ফুটবলের এবারের আয়োজনে ফরহাদ টিটো লিখছেন বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য।



বাংলাদেশ সময়: ০৮৩০ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।