ঢাকা: চরম নাটকীয়তা, হুমকি-ধামকি, সভা-সমিতি বানচালের পরও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন নির্বাচন ২০১৬। শনিবার (৩০ এপ্রিল) রাজধানীর স্থানীয় একটি হোটেলে বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই নির্বাচন চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
তবে এবারের নির্বাচনে ফুটবল ফেডারেশনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ পদ সিনিয়র সহ-সভাপতির জন্য কেউই লড়ছেন না। কেননা গেল ২০ এপ্রিল সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে শফিকুল ইসলাম টুটুল, মঞ্জুর কাদের চৌধুরি ও লোকমান হোসেন ভুঁইয়া মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়ায় সালহউদ্দিনের প্যানেল থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিনিয়র সহ-সভাপতির চেয়ার অক্ষত রেখেছেন গেলবারের নির্বাচিত সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী।
তার অপর দুই প্রতিপক্ষ মঞ্জুর কাদের চৌধুরী ও লোকমান হোসেন ভুঁইয়া ছিলেন ‘বাঁচাও ফুটবল’ এর সিনিয়র সভাপতি। তারা দু’জন মূলত সিনিয়র সহ-সভাপতির পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পদ হারানোর ভয়ে। মঞ্জুর কাদের চৌধুরী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নিরাপত্তা কমিটির চেয়ারম্যান ও লোকমান হোসেন ভুঁইয়া ফ্যাসিলিটিস বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে রাজনৈতিক মার-প্যাচে সবার আগে সিনিয়র সহ-সভাপতির পদটি নিশ্চিত করেছেন সালাম মুর্শেদী।
আর সভাপতি পদের জন্য লড়বেন সম্মিলিত পরিষদের কাজী মো: সালাহউদ্দিন ও বাঁচাও ফুটবল পরিষদের কামরুল আশারাফ খান (পোটন)। স্বতন্ত্র থেকে পদটিতে প্রার্থী হিসেবে ছিলেন আরও দুজন; একজন গোলাম রব্বানি হেলাল আর অপরজন নুরুল ইসলাম নুরু।
গোলাম রব্বানি হেলাল গেল ২৭ এপ্রিল সম্মিলিত পরিষদের সভাপতি প্রার্থী কাজী সালাহউদ্দিনকে সমর্থন দিয়েছেন আর নুরুল ইসলাম নুরু গেল ২৩ এপ্রিল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে উপস্থিত হয়ে সমর্থন দিয়েছেন বাঁচাও ফুটবল পরিষদের সভাপতি প্রার্থী কামরুল আশরাফ খান পোটন’কে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, নুরুল ইসলাম নুরু ও গোলাম রব্বানি হেলাল কাজী সালাহউদ্দীনের খুবই কাছের ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলাম রব্বানি হেলাল ফুটবলের স্বার্থে কাজী সালাহউদ্দিনকে সমর্থন দিলেও অজানা কোনো কারণে মঞ্জুর কাদেরের দারস্থ হয়েছেন নুরুল ইসলাম নুরু। তারপরও ফুটবলের মূল স্রোতের যারা তারা সবাই কাজী সালাহউদ্দিনের পক্ষে আছেন। ঢাকার ফুটবল ক্লাবগুলো থেকে শুরু করে জেলা ফুটবলের অধিকাংশ সংগঠকেরা শেষ পর্যন্ত অনেকটা খোলামেলাভাবেই কাজী সালাহউদ্দিনের পক্ষে রয়েছেন।
ফলে নিশ্চিতভাবেই সভাপতির পদে পোটনের চেয়ে দৌঁড়ে এগিয়ে বাংলাদেশ ফুটবলের এ যাবৎকালের জনপ্রিয় ফুটবলার কাজী মো: সালাহউদ্দিন।
তবে, কাজী সালাহউদ্দিনের নির্বাচনের পথটি ততটা মসৃণ ছিলনা যতটা পোটনের ছিল। মোবাইল ফোন থেকে শুরু করে তার বাসায় গিয়েও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে তাকে একাধিকবার জীবন নাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। দিনের পর দিন ক্রমাগতভাবে তার উপরে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে যাতে করে তিনি নির্বাচন করতে না পারেন।
শুধু কী তাই? গেল ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে সালাহউদ্দিনের প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান ছিল। কিন্তু দিনের প্রথমভাগে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানায় নিরাপত্তার অভাব থাকায় তারা সালাউদ্দিনের প্যানেলকে ওই হোটেলে জায়গা দিতে পারবে না। ফলে নিরাপত্তা শঙ্কায় তাকে ওই অনুষ্ঠানটি বাতিল করতে হয়। তারপরেও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াননি সালাহউদ্দিন। এক সময়ের তারকা ফুটবলার ও বর্তমানের সাফ ফুটবলের সভাপতি ও টানা দুইবারের বাংলাদেশ ফুটবলের সভাপতি এদেশের ফুটবলের স্বার্থেই অনেকটা জীবন বাজী রেখেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
পক্ষান্তরে সালাহউদ্দিনের প্রতিপক্ষ হিসেবে সভাপতি পদের লড়াইয়ে থাকা কামরুল আশারাফ খান পোটনের ফুটবলের সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই। নরসিংদীর পলাশ থানার এই সাংসদ নির্বাচনে এসেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের হাত ধরে। জনশ্রুতি আছে পাপন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পোটনকে বাংলাদেশ ফুটবলের সভাপতির পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য অনুমতি এনে দিয়েছেন। পোটন বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান সভাপতিও বটে।
এদিকে সহ-সভাপতির পদে কাজী সালাহউদ্দিনের প্যানেল থেকে লড়বেন বাদল রায়, কাজী নাবিল আহমেদ, মহিউদ্দিন আহমেদ মহি ও আলহাজ্ব শামসুল হক চৌধুরি। একই পদে পোটনের প্যানেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন খুরশিদ আলম বাবুল, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, নজিব আহমেদ ও একেএম মুমিনুল হক সাইদ। স্বতন্ত্র থেকে সহ-সভাপতি প্রার্থী হিসেবে থাকবেন তাবিথ আউয়াল ও শেখ মোহাম্মদ মারুফ হাসান।
কাজী সালাহউদ্দিনের প্যানেল থেকে সদস্যপদ প্রার্থী হিসেবে লড়বেন হারুনুর রশীদ, আমিরুল ইসলাম বাবু, সত্যজিত দাস রুপু, মো: ফজলুর রহমান বাবুল, মো. ইলিয়াস হোসেন, মাজফুজা আক্তার কিরণ, মো: শওকত আলী খান জাহাঙ্গীর, মহিউদ্দিনি আহমেদ সেলিম, আব্দুর রহিম, জাকির হোসেন চৌধুরী, অমিত খান শুভ্র, সালেহ জামান সেলিম, আরিফ হোসেন মুন, আলমগীর খান আলো ও তৌফিকুল ইসলাম তোফা।
অন্যদিকে কামরুল আশারাফ খান পোটনের প্যানেলের প্রার্থীর লড়াইয়ে থাকবেন নওশেরউজ্জামান, শেখ মো: আসলাম, আব্দুল গাফফার, আবু হাসান চৌধুরী প্রিন্স, আজফার উজ জামান খান সোহরাব, হাজী মো: টিপু সুলতান, মো: ইকবাল, কামরুন নাহার ডানা, সৈয়দ রুম্মন বিন ওয়ালিদ সাব্বির ও কায়সার হামিদ।
স্বতন্ত্র থেকে সদস্য প্রার্থীদের তালিকায় আছেন সুলতান জনি, বিজন বড়ুয়া, আমের খান, মো: ইকবাল হোসেন, মো: হাসানুজ্জামান খান বাবলু, মো: সাইফুর রহমান মনি, হাজী মো: টিপু সুলতান, মো: ইকবাল ও আসাদু্জ্জামান মিঠু।
এবারের নির্বাচনে জয়ী হতে পারলে টানা তৃতীয়বারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করবেন কাজী মো: সালাহউদ্দিন। তবে আগেরবার অর্থাৎ ২০১২ সালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিলেন। ওই বছর সালাহউদ্দিনের একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী আব্দুর রহীম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমীন আহমেদ চৌধুরী বীর বিক্রমকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতির পদ অলঙ্কৃত করেছিলেন সালাহউদ্দিন।
এদিকে বাফুফের এবারের নির্বাচনেও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্বে থাকছেন গেলবারের প্রধান নির্বাচন কমিশনার মেজবাহউদ্দিন আহমেদ। তার অধীনে কমিশনারের দায়িত্বে থাকবেন মাহফুজুর রহমান সিদ্দীকি ও আতিকুর রহমান খান।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৫ ঘণ্টা, ২৮ এপ্রিল ২০১৬
এইচএল/এমআর