ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহের সীমান্তঘেষা জনপদ ধোবাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কলসিন্দুরে তার বেড়ে ওঠা। সেই সময়েই শুরু ফুটবলে পথচলা।
শুরুর সময়েই অর্থাৎ ২০১১ সালে বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট তার খেলোয়াড়ি জীবনের বাঁকবদল করে দেয়।
অসাধারণ নৈপুণ্য প্রদর্শন করায় সবাই ডাকতে শুরু করে ‘মেসি’ নামে। ফলে, অনেকটাই হারিয়ে যায় তার আসল নাম তহুরা। দেশের মাঠের মতো বিদেশের মাঠেও অনন্য কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছে বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার তহুরা।
ক’দিন আগে তাজিকিস্তানে অনুষ্ঠিত এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন (এএফসি) অনুর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবলের আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়শিপেও দুর্দান্ত খেলেছে। চার ম্যাচে করেছে ১০ গোল।
ওই টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল ও ফাইনালে শক্তিশালী প্রতিপ তাজিকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে টানা হ্যাট্রিক করেছেন। ফলে, নিজের নামের শেষে বেশ পাকাপোক্তই হয়ে উঠেছে ‘মেসি’ নামটি। কলসিন্দুরের তহুরার ‘মেসি’ হয়ে ওঠার গল্প এমনই।
সময়ের ঘূর্ণায়মান স্রোতে এ তহুরাই এখন বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবল দলের আশা-ভরসার প্রতীক। হয়েছেন দেশকাঁপানো ফুটবলারও। প্রচণ্ড ইচ্ছাশক্তির জোরে দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে তার সুনাম।
তবে, তহুরা শুধু নামেই নয়, কাজেও একদিন ‘মেসি’ হতে চায়। বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলতে চায়। দেশের জন্য গৌরব বয়ে আনতে চায়।
তাজিকিস্তানে দ্বিতীয়বার শিরোপা জেতার পর শুক্রবার (০৬ মে) দুপুরে ঢাকা থেকে ট্রেনযোগে ময়মনসিংহে পা রাখে তহুরা ও বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবল নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক মার্জিয়া।
জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা তাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। পরে বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে নিজের ‘মেসি’ হয়ে ওঠার গল্প, ভবিষ্যত পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলে।
দেশের হয়ে আন্তজার্তিক কোনো টুর্নামেন্টে পরপর দু’হ্যাট্রিক কেমন লাগছে, অনুভূতি জানিয়ে তহুরা বলে, নিঃসন্দেহে এটা অনেক গর্বের। আমার গ্রাম কলসিন্দুর ও গোটা দেশ তাকিয়ে ছিল আমাদের দিকে। দেশের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি।
ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে প্রথম গোলের পর থেকেই হ্যাট্রিক করবো এমন ভাবনা ছিল। সবকিছু ঠিকঠাক থাকায় হ্যাট্রিক করতে পেরেছি’ বলে তহুরা। তাজিকিস্তানের আবহাওয়া প্রতিকূলে থাকলেও খেলতে সমস্যা হয়নি যোগ করে এ খুদে ‘মেসি’।
সবাই মেসি ডাকে কেমন লাগে, উত্তরে তহুরা বলে, আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ফুটবলের বিস্ময় নাম। যখন প্রথম পায়ে ফুটবল তুলি, তখনই স্বপ্ন দেখতাম আমিও মেসির মতো হবো (খানিকটা হেসে)। তবে, এখন আমি সত্যিকারের ‘মেসি’ হতে চাই। জাতীয় দলে খেলে আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।
বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক মার্জিয়ার সঙ্গে ছিল খুদে মেসি খ্যাত তহুরা। এ মেয়েদের নিয়েই যেন ফুটবলে যত প্রত্যাশা। (এএফসি) অনুর্ধ্ব-১৪ নারী ফুটবলের আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়শিপ জেতার পর অনুভূতি জানাতে গিয়ে মার্জিয়ার কণ্ঠেও যেন খুশির ঢেউ আচড়ে পড়ে- ‘বিকেএসপিতে টানা দু’মাস সকাল-বিকেল প্র্যাকটিস করেছি। ’
এটাই আমাদের জন্য টনিক হিসেবে কাজ করেছে। প্রতিটি ম্যাচে জেতার আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছি। এবং জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছি। ’
ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে মার্জিয়া বলেন, সামনে অনুর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলা শুরু হবে। এজন্য আমাদের দীর্ঘমেয়াদী অনুশীলন দরকার। তাহলে সেখানেও আমরা অনুর্ধ্ব-১৪’র ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারবো। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, মে ০৬, ২০১৬
এমএএএম/পিসি