ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

ফিরে এলো ফুটবলের আসল মেজাজ

এম.আব্দুল্লাহ আল মামুন খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫১ ঘণ্টা, আগস্ট ৯, ২০১৬
ফিরে এলো ফুটবলের আসল মেজাজ ছবি: অনিক খান

ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়াম থেকে: গোল হয়েও হচ্ছে না। প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে প্রতিনিয়তই যেন কার্পণ্য করে যাচ্ছেন ফুটবলাররা! বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ময়মনসিংহ পর্বের গত চারটি ম্যাচে এমন দৃশ্যেই হতাশ মনে বাড়ি ফিরেছেন ফুটবলপ্রেমীরা।

কিন্তু মঙ্গলবার (০৯ আগস্ট) বিকেলে হঠাৎ করেই বদলে গেলো চেনা সেই দৃশ্যপট। ঐতিহ্যবাহী রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠাসা ব্রাদার্স ইউনিয়ন ও আরামবাগ ক্রীড়া চক্রের মধ্যকার লিগের চতুর্থ রাউন্ডের পঞ্চম ম্যাচে (২-২) ফিরে এলো ফুটবলের মেজাজ।

এদিন গোলের নাগাল পেয়েছে দু’দলই। আক্রমণাত্মক এ ম্যাচেই গোল হয়েছে চারটি। ফলে প্রত্যাশার বেলুন ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে স্টেডিয়ামে আসা দর্শকরা আর মুখভার করে ফিরে যাননি। উল্টো গোল আনন্দেই বারবার আনন্দে মেতেছেন তারা। শুধু তাই নয়, এ ম্যাচের মধ্যে দিয়ে বিপিএল’র চলতি আসরও যেন ছন্দে ফিরেছে।

ব্রাদার্স ও আরামবাগের মধ্যকার এ ম্যাচে শুরু থেকেই গোলের জন্য খেলেছে দু’দল। ম্যাচের ৬ মিনিটের মাথায় আরামবাগের জালে বল জড়িয়ে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে এগিয়ে নিয়ে যান রাসেল। এরপর আরমবাগের কেস্টার একন গোল করে সমতায় ফিরিয়ে আনেন। প্রথমার্ধের শেষ বাঁশি বাজার আগেই চমৎকার সাইড ভলি থেকে দুর্দান্ত গোল করে ব্যবধান বাড়ান আরামবাগের জাফর ইকবাল।

প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিটের মধ্যেই তিন গোল হওয়ায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ঠাঁই করে-এবার বুঝি গোল উৎসব হতে যাচ্ছে। খেলা শুরু হবার মিনিট কয়েক পর থেকেই কমে আসে রোদের তেজ। ঝিরিঝিরি বাতাসে রোমাঞ্চিত হয়ে উঠে ফুটবলপ্রেমীদের মন। পশ্চিম গ্যালারিতে দর্শকরা গোল আনন্দে দুলছেন।

দ্বিতীয়ার্ধেই জয়ের আনন্দে বিভোর আরামবাগের টুটি চেপে ধরেন ব্রাদার্স ইউনিয়নের মান্নাফ রাব্বী। তার গোলে হর্ষধ্বনি আর উল্লাসে তখন কাঁপছে গোটা স্টেডিয়াম। মান্নাফের বাবা মোনায়েম খানও ছিলেন ফুটবলার।

এক সময় খেলেছেন ঢাকা ওয়ারীতে। নিজে বড় ফুটবলার হতে না পারলেও ছেলে ফুটবলার হবেন এমন স্বপ্ন নিয়েই ছেলেকে ফুটবলে দিয়েছিলেন তিনি। আর এদিনের ম্যাচটিতে সেই ইঙ্গিতই দিয়েছেন মান্নাফ। পরিশ্রম করে গোটা মাঠ দাঁপিয়ে দ্যুতি ছড়িয়েছেন এ খেলোয়াড়।

চলতি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) চট্টগ্রামে প্রথম পর্বে ১৮ ম্যাচে হয়েছিল ৪৪ গোল। সেখানে শেখ জামাল ও উত্তর বারিধারার মধ্যকার ম্যাচে গোল হয়েছিল ৮ টি। কিন্তু ময়মনসিংহ পর্বের উদ্বোধনী ম্যাচেই চট্টগ্রাম আবাহনী ও শেখ জামাল গোলশূন্য ড্র করে গোলের খেলার গতিরোধ যেন থামিয়ে দেয়।

এরপর বাকি ম্যাচগুলোতেও হার-জিত নির্ধারণে গোলের দেখা মেলাই যেন ছিল সোনার হরিণ। ফলে রফিক উদ্দিন ভূইয়া স্টেডিয়ামে এসে অনেকেই ম্যাচ দেখে তৃপ্ত হতে পারেননি। কিন্তু এদিন আরামবাগ ও ব্রাদার্স সমানে সমান লড়াই করে ফুটবলে নতুন স্বপ্নের রেণু ছড়িয়েছে।

ফলে প্রথমার্ধের খেলা শেষেও অনেক দর্শককে টিকিট কেটে মাঠে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। শেষ সময়ে ফুটবলের আশা জাগানিয়া এ ম্যাচ দেখতে স্টেডিয়ামে এসেছিলেন সারোয়ার হোসেন।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এ চাকুরে বলেন, ‘টিভিতে দেখলাম গোল জোয়ার শুরু হয়েছে। দু’দলই গতিময় ফুটবল খেলছে। আর বসে থাকতে পারলাম না। ছুটে এলাম মাঠে। তবে এ ম্যাচটিও ড্র না হয়ে হার-জিত নির্ধারণ হলে ভাল হতো। ’

স্টেডিয়ামে আসা বেশ কয়েকজন দর্শক জানান, ‘এমন উপভোগ্য খেলা হলে স্টেডিয়ামের গ্যালারি আর খাঁ খাঁ করবে না। উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়েই দর্শকরা স্টেডিয়ামমুখী হবেন। ব্রাদার্স আর আরামবাগের মতো টানটান উত্তেজনার এমন ম্যাচ ফুটবলাররা উপহার দিলে ঠিকই নজর কাড়বে ফুটবল অনুরাগীদের। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৬ ঘণ্টা, আগষ্ট ০৯, ২০১৬
এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।