ময়মনসিংহ: দেশের ঘরোয়া ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) রেফারিং নিয়ে সমালোচনা যেন পিছুই ছাড়ছে না। চট্রগ্রাম পর্বেই এ বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করলেও অন্তত ময়মনসিংহ পর্বে এটি উতরে যাওয়ার কথা বলেছিল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
কিন্তু গত বুধবার (১৭ আগস্ট) ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া স্টেডিয়ামে ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে ব্রাদার্স ইউনিয়নের বিতর্কিত পেনাল্টি’র পর এ ইস্যুতে তেঁতে উঠেন দলটির ভারপ্রাপ্ত কোচ অমলেশ সেন।
শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘রেফারিং’র যাচ্ছেতাই মান অব্যাহত থাকলে বড় রকমের অঘটন ঘটতে পারে। ’
এর আগে শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের কর্তা-ব্যক্তিরাও রেফারিদের ভূমিকা ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের সমালোচনায় মুখর ছিলেন।
কার্যত শক্তিশালী দলগুলোকে হারাতে রেফারিরা গোপন কোন মিশন নিয়েছেন কী না এ নিয়েও অন্তহীন প্রশ্ন ছিল ফুটবলপ্রেমীদের মুখেও! এতো সমালোচনা-বিতর্কের পরেও ন্যূনতম টনক নড়েনি বাফুফের।
জানা যায়, এ লিগের চট্রগ্রাম পর্বে বিপিএল’র গত আসরের রানার্সআপ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র দুর্বল উত্তর বারিধারা ক্লাবের সঙ্গে বিতর্কিত পেনাল্টি গোলে হেরে যায়।
তখন থেকেই ক্লাবপাড়ায় শোরগোল ওঠে রেফারিদের ভূমিকা নিয়ে। এর পরের ম্যাচসমূহেও শেখ রাসেল আক্রমণে গেলে হয় অফ সাইডের পতাকা নয়তো বেসুরো বাঁশি বাজাতে দেখা গেছে রেফারিদের!
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ময়মনসিংহ পর্বে গত ১১ আগষ্ট ফেনী সকার ক্লাবের বিপক্ষে শক্তিশালী শেখ জামালের নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড কেস্টু কোমার বোসকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বহিষ্কার করেন রেফারি।
সেদিন রেফারির সিদ্ধান্তে চরম ক্ষোভ নিয়েই মাঠ ছাড়েন কেস্টু। বাংলানিউজকেও বলেছিলেন, ‘রেফারি আমাকে হলুদ কার্ডও দিতে পারতো। ’
এরপর ময়মনসিংহ পর্বের শেষ ম্যাচেও শিরোপা প্রত্যাশী ঢাকা আবাহনী ক্রীড়া চক্রের সঙ্গে ব্রাদার্স ইউনিয়ন পেনাল্টি গোলে লিড নিয়েছিল। ওই ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত ১-১ গোলে ড্র হয়।
ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে আবাহনীর ভারপ্রাপ্ত কোচ অমলেশ সেন অভিযোগ করেছিলেন, ‘রেফারি আমাদের বিরুদ্ধে বিতর্কিত পেনাল্টি দিয়েছে। একইভাবে আমরা দু’দুটি পেনাল্টি পেলেও তারা দেয়নি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ঘরোয়া ফুটবলের এ আসর জৌলুস হারাবে। ভবিষ্যতে বড় ধরনের অঘটন ঘটলে কিছুই করার থাকবে না। ’
রেফারিং বিতর্ক হালে পানি পাচ্ছে। বিষয়টি ফুটবলের জন্য সুখকর নয় বলেই মন্তব্য করেন এ লিগে খেলা বেশ কয়েকজন ফুটবলার।
নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে বাংলানিউজকে তারা বলেন, ‘চলতি লিগে রেফারিং’র মান ভালো হচ্ছে না। দুর্বল রেফারিং ফুটবলকে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ দুর্নামের বৃত্ত থেকে তাদের বেরিয়ে আসা উচিত। আর এ উদ্যোগ বাফুফেকেই নিতে হবে। ’
রেফারিরাই এ আসরের জৌলুস শেষ করে দিতে যথেষ্ট মন্তব্য করে একটি ক্লাবের কর্মকর্তা নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, ‘একসময় মাঠে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিলে রেফারিকে দর্শকদের হাতে, কাব কর্মকর্তাদের হাতে নাস্তানাবুদ হতে হতো। কিন্তু এখন দর্শকের সেই জোয়ার নেই। ’
বিপিএলকে ঘিরে দর্শকদের মাঝে যে উন্মাদনার পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছিল রেফারিরা সেটি নষ্ট করে দিচ্ছেন। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে রেফারি এনে ম্যাচ পরিচালনার বিষয়টি বাফুফেকে ভাবতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে এসব বিষয়ে ময়মনসিংহ জেলা ফুটবল রেফারি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ.কে.এম দেলোয়ার হোসেন মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, ‘রেফারিরা ভুল করে বা বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয় এটা একেবারেই ঠিক না। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের তালিকায় বাংলাদেশের দু’জন রেফারি এলিট প্যানেলে রয়েছেন। দেশের ফুটবলের চেয়ে রেফারিং’র মান অনেক উন্নত। চট্টগ্রামের চেয়ে ময়মনসিংহের রেফারিং’র মান ভাল হয়েছে। ’
বাংলাদেশ সময় ১১৪২ ঘন্টা, আগষ্ট ১৯, ২০১৬
এমএএএম/এমআরএম