নিজেদের মাঠে ইউরোপীয় প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে প্রথমবারের মতো নাপোলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু অতিথিদের ৩-১ গোলের বড় ব্যবধানে হারিয়ে শেষ ষোলো থেকেই বিদায় করে দিল কাতালান জায়ান্টরা।
রোববার (০৯ আগস্ট) ক্যাম্প ন্যুয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগের ম্যাচে নাপোলির বিপক্ষে বার্সা অবশ্য শুরুতেই ধাক্কা খেতে পারত। খেলার তৃতীয় মিনিটেই জেরার্ড পিকের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন ড্রিস মার্টেন্স। সফরকারী দলের ফরোয়ার্ড শট নেন, এমনকি বলের বাঁক বুঝতে ভুল করেন টের-স্টেগানও। বার্সার জার্মান গোলরক্ষক ভুল করলেও বল বাইরের পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়।
নাপোলিকে প্রথম ধাক্কা দেন লংলে। খেলার ১০ম মিনিটে ইভান রাকিতিচের কর্নার কিক থেকে প্রতিপক্ষের বক্সের ভেতরে অরক্ষিত থাকা বার্সা ডিফেন্ডার এর দারুণ ফায়দা লুটে নেন। নাপোলির ওসপিনা ডাইভ দিয়েও ঠেকাতে ব্যর্থ হন। চাপে পড়ে যাওয়া নাপোলিকে আরও বিপদে ফেলে লক্ষ্যভেদ করেন মেসি। মূলত সেখান থেকেই মেসি জাদুর শুরু।
২৩তম মিনিটে সুয়ারেসের বাড়িয়ে দেওয়া বল ডি-বক্সে পেয়ে যান মেসি। কিন্তু ততক্ষণে তাকে ঘিরে ধরেছে প্রতিপক্ষের চার ডিফেন্ডার। কিন্তু চারজনকেই পরাস্ত করে শট নেন বার্সা অধিনায়ক। প্রথমবার বাধা পেয়ে বল ফের তার পায়ে চলে আসে। এবার আর ভুল করেননি আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড। বাঁকানো শটে বলের ঠিকানা হয় জালে। এই নিয়ে ৩৫টি ভিন্ন ভিন্ন দলের বিপক্ষে গোল করার কৃতিত্ব গড়লেন মেসি। তার চেয়ে দুটি কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
৩৩তম মিনিটে মেসির একটি গোল হ্যান্ডবলের দায়ে বাতিল করেন রেফারি। ঠিক এক মিনিট পরেই বার্সাকে ব্যবধান বাড়ানো গোল এনে দেন সুয়ারেস। নিজেদের বক্সে মেসিকে ফাউল করে বসেন নাপোলির কুলিবালি। এরপর মিনিট তিনের সময় ধরে পেনাল্টির আবেদন পরীক্ষা করে দেখেন রেফারি। ভিডিও রেফারির সহায়তা নিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত জানানো হয়। আর পেনাল্টি থেকে প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক ওসপিনাকে বোকা বানিয়ে গোল করেন সুয়ারেস।
প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের একদম শেষ মুহূর্তে নাপোলির ব্যবধান কমানো গোলটি আসে পেনাল্টি থেকে। নিজেদের ডি-বক্সে নাপোলির মার্টেন্সকে ফেলে দেন বার্সা মিডফিল্ডার রাকিতিচ। রেফারি সরাসরি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিচু শটে লক্ষ্যভেদ করেন নাপোলির স্ট্রাইকার ইনসিগনে।
ব্যবধান কমানোর স্বস্তি পেতেই দ্বিতীয়ার্ধে রীতিমত আগ্রাসী রূপ ধারণ করে নাপোলি। গাত্তুসোর শিষ্যরা বার্সার রক্ষণকে রীতিমতো চেপে ধরে। বেশ কয়েকবার গোল করার কাছে চলে গিয়েছিল ইতালিয়ান জায়ান্টরা। কিন্তু খাদের কিনারা আর খুঁজে পায়নি। বিশেষ করে টের-স্টেগান রীতিমতো দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইনসিগনেদের সামনে।
কিছুদিন আগেই লা লিগার শিরোপা হাতছাড়া করেছে বার্সা। আর শিরোপা গেছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের ঘরে। স্বাভাবিকভাবেই এই ম্যাচের আগে প্রচণ্ড চাপে ছিল কিকে সেতিয়েছেন শিষ্যরা। লা লিগায় নিজেদের শেষ ম্যাচে আলাভেসকে ৫-০ গোলে হারিয়েও সেই জ্বালা দূর হওয়ার নয়। এমনকি সেতিয়েনের চাকরিও পেন্ডুলামের মতো দুলছিল। এযাত্রায় বেঁচে গেলেন তিনি।
তবে নাপোলির মুখোমুখি হওয়ার আগেই কিছুটা স্বস্তি নিয়ে মাঠে নেমেছিল বার্সা। কারণ ম্যানচেস্টার সিটির কাছে হেরে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ ষোলো থেকেই বিদায় নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। জিদানের শিষ্যদের দুর্গতির কারণ হয়েছেন বার্সারই সাবেক খেলোয়াড় ও কোচ পেপ গার্দিওলা। এই কাতালানের পরিকল্পনার কাছে হেরে গেছেন এর আগের মেয়াদে রিয়ালকে টানা তিনবার ইউরোপ সেরার মর্যাদা এনে দেওয়া ফরাসি কিংবদন্তি।
এদিকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ আটে তুমুল ফর্মে থাকা বায়ার্ন মিউনিখের মুখোমুখি হবে বার্সা। একই রাতে শেষ ষোলোর ম্যাচে চেলসিকে ৪-১ গোলে এবং দুই লেগ মিলিয়ে ৭-১ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে বাভারিয়ানরা। ফলে কিকে সেতিয়েনের শিষ্যদের সামনে কঠিন লড়াই অপেক্ষা করছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৯, ২০২০
এমএইচএম