ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফুটবল

‘বার্সার সঙ্গে মেসির সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো’

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২০
‘বার্সার সঙ্গে মেসির সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো’ লিওনেল মেসি/ছবি: সংগৃহীত

২০ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে বার্সেলোনা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন লিওনেল মেসি। এরইমধ্যে তার নতুন ঠিকানা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়ে গেছে।

কিন্তু বার্সার নতুন ক্রীড়া পরিচালক র‍্যামন প্লানেসের দাবি, বার্সা ও মেসির সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। এ সম্পর্ক এত সহজে ভাঙার নয়। তার মতে, এখনও অধিনায়ক মেসিকে ঘিরেই দল সাজানোর পরিকল্পনা করছে কাতালান জায়ান্টরা।

২০০০ সালে একটিমাত্র টিস্যু পেপারে করা চুক্তিতে ১৩ বছর বালক মেসির যাত্রা শুরু হয়েছিল বার্সেলোনায়। সেই থেকে এই কাতালুনিয়ার ক্যাম্প ন্যুয়ে বেড়ে ওঠা, কৈশোর পেরোনো থেকে শুরু করে একসময় ক্লাবের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় তারকা বনে যাওয়া। ক্লাবের অন্য কাউকে নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও এই একজনের ব্যাপারে কারো কোনো অভিযোগ-অনুযোগ ছিল না। ‘বার্সা মানেই মেসি, মেসি মানেই বার্সা’ এমনই ছিল বার্সা-মেসি সম্পর্ক।  

বার্সার ঐতিহ্যবাহী জার্সি গায়ে ১৬ বছরের ক্যারিয়ারে ক্লাবকে ৩৪টি শিরোপা জিতিয়েছেন মেসি। এর মধ্যে ১০টি লা লিগা শিরোপা। বার্সা তাদের ইতিহাসের ইউরোপা সেরাই হয়েছে পাঁচবার, যার মধ্যে ৪টিই আর্জেন্টাইনের অবদান। কাতালান জায়ান্টদের হয়ে গোল করেছেন রেকর্ড ৬৩৪টি, দল জিতিয়েছেন ৫১৩ ম্যাচে। রেকর্ড ছয়টি ব্যালন ডি’অর জেতার পথে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (৭৩) এবং এক বছরে ৯১ গোলের রেকর্ড আছে তার ঝুলিতে। এখনও তার পায়ের জাদু কমেনি এতটুকু।

ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায় আরও কয়েকটা সাফল্য চেয়েছিলেন মেসি। সে লক্ষ্যে নিজের সেরাটা দিয়ে গেছেন তিনি। কিন্তু বোর্ডের হঠকারী সিদ্ধান্তে সব ভেস্তে গেছে। সব এক বুরোফ্যাক্সে শেষ হয়ে গেল। পরে কি হবে তা কেউ বলতে পারবে না, কিন্তু চলে যেতে চাওয়ার কথা যে কখনো বলবেন তিনি, সেটাই তো কেউ ভাবেনি আগে। এতটাই তার রাগ-অভিমান। তার সব রাগ আসলে বর্তমান বোর্ডের ওপর। কিন্তু সেই বোর্ডেরই নতুন ক্রীড়া পরিচালক বলছেন, ‘এখনই এ বাঁধন যাবে না ছিড়ে!’ 

সদ্য বিদায়ী ক্রীড়া পরিচালক এরিক আবিদালের স্থলাভিষিক্ত হওয়া প্লানেস নতুন খেলোয়াড় ফ্রান্সিসকো ত্রিনাকোর চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘যা হওয়ার হয়ে গেছে এবং আমাদের চিন্তাভাবনা এখন বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে ঘিরে দল গঠন করা। আমরা বিশ্বের সবচেয়ে সেরা খেলোয়াড়ের নেতৃত্বে আরও একটি বিজয়ী দল গড়ে তুলতে চাই, যা ইতিহাসের সেরা দল হবে। বার্সা এবিং মেসির সম্পর্ক অনেকটা বৈবাহিক সম্পর্কের মতো, যেখানে দুজনেই একে অন্যকে অনেক কিছু দিয়েছে এবং সমর্থকদের জন্য অঢেল খুশি বয়ে এনেছে। আমি মনে করি, ভবিষ্যৎ ইতিবাচক। ’

ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় বার্সার হয়ে খেলা মেসি গত চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে বায়ার্নের কাছে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর থেকেই ক্লাব ছাড়ার ব্যাপারে ভাবছিলেন। এরপর নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যান আসার পর ক্লাবের খোলনলচে পাল্টানোর কথা বলার পর সম্ভাবনা আরও বাড়তে থাকে। বিশেষ করে দলে মেসির ক্ষমতা কমিয়ে দেওয়া ও সুয়ারেসকে বিদায় করে দেওয়ার পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আসতেই ক্লাব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন মেসি।

বোর্ডের সঙ্গে মেসির দ্বন্দ্ব অবশ্য আরও আগে থেকেই। আর্নেস্তো ভালভার্দের বিদায়ের দায় মেসিদের ঘাড়ে চাপানো থেকে শুরু করে করোনাকালে বেতন কমানোয় মেসিদের অনীহার দাবি, সিনিয়র খেলোয়াড়দের নিয়ে বোর্ডের মিথ্যা রটনা দ্বন্দ্বটাকে প্রকাশ্যে এনেছে। তখন থেকেই মেসি প্রতিবাদী রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। ‘যাই যাই’ তিনি তখন থেকেই করছিলেন। এখন তা আরও পোক্ত হয়েছে।  

মেসির ক্লাব ছাড়া ঠেকাতে চুক্তিকে অস্ত্র বানিয়েছে বার্সার বোর্ড। তাদের দাবি বর্তমান চুক্তি অনুসারে, গত ১০ জুন মেসির ক্লজের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই ক্লজ অনুযায়ী, মৌসুম শেষে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ক্লাব ত্যাগ করতে পারবেন মেসি। কিন্তু ক্লাবের দাবি, মেসির সেই সুযোগ আর নেই। চুক্তিও আবার চালু হয়ে গেছে। ফলে তাকে যেতে হলে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো রিলিজ ক্লজ দিতে হবে। মেসির দাবি, করোনার কারণে মৌসুমে শেষ হয়েছে আগস্টে, তাহলে শর্ত অনুযায়ী তার যেতে কোনো বাধা থাকার কথা নয়।

প্লানেস অবশ্য এসবের ধার ধারছেন না। তার দাবি, মেসি বার্সাতেই থেকে যাবেন। তিনি বলেন, ‘মেসির মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড় আমাদের দরকার, ক্লাবের ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের ভালোর জন্যও। আমরা বার্সা-মেসি সম্পর্ক ঠিক করতে সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা মেসিকে থেকে যেতে রাজি করানোর চেষ্টায় কমতি রাখছি না। বার্সা এর আগেও অনেকবার নতুন করে গঠিত হয়েছে, এবারও হবে। ’

বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২০
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।