মাঠে ও মাঠের বাইরে মোহামেদ সালাহর প্রভাব একপ্রকার কিংবদন্তিতুল্য। ইংল্যান্ডের শীর্ষ ক্লাব লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর থেকে ‘মিশরীয় রাজা’র চেয়ে বেশি গোল পাননি অলরেডদের কেউই।
তবে সালাহ শুধু ফুটবলার হিসেবেই নন- তিনি মুসলিম অ্যাথলেটদের মধ্যেও সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখ। বিশেষ করে নিজের দেশ মিশর এবং আরববিশ্বে তার জনপ্রিয়তার আকাশচুম্বী। মিশরীয় ফরোয়ার্ডের উপস্থিতি এমনকি বদলে দিয়েছে ইংলিশদের অবস্থানও।
আমেরিকান পলিটিক্যাল সাইন্স রিভিও নামের এক অ্যাকাডেমিক পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র অনুযায়ী, ২০১৭ সালের জুনে সালাহ লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর যুক্তরাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে ওই অঞ্চলে মুসলিম বিদ্বেষ এবং হিংসাত্মক কার্যক্রম ১৬ শতাংশ কমে গেছে।
ইংল্যান্ডের হিংসাত্মক ঘটনার রিপোর্ট এবং সমর্থকদের ১৫ মিলিয়ন টুইট, ৮ হাজার লিভারপুল সমর্থকের সাক্ষাৎকার, সালাহর সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সরব উপস্থিতি বিশ্লেষণ করার পর এই গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, লিভারপুলে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে হিংসাত্মক কার্যক্রম ১৬ শতাংশ কমে গেছে এবং লিভারপুলের সমর্থকরা অন্যান্য শীর্ষ ক্লাবের সমর্থকদের চেয়ে গড়ে প্রায় অর্ধেক মুসলিম বিদ্বেষী টুইট করেছেন।
সমীক্ষায় দেখা গেছে, সালাহর মুসলিম পরিচয় লিভারপুলে বসবাসরত মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলোতে যেভাবে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ছে তাতে কিছুটা হলেও লাগাম টেনে ধরছে সালাহর সাধারণ চলাফেরা এবং নম্র-ভদ্র আচরণ।
গবেষকরা লিখেছেন, সালাহ যখন গোল করার পর সিজদায় লুটিয়ে পড়েন, মুসলিমদের ইবাদতের ধরন সম্পর্কে প্রথম ধারণা পান অনেক দর্শক। সালাহর মতো মুসলিম তারকা ফুটবলার যে আসলে সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দিতে পারেন গবেষণায় তা বেশ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
মূলত যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ এর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর থেকে যুক্তরাজ্যে মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়েছিল। এমনকি ২০১৫-১৭ এর মধ্যবর্তী সময়ে ‘ইউগভ’ নামের এক সংস্থার সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রায় ৬০ ভাগ মানুষ ইসলাম ধর্মকে ব্রিটিশ সমাজব্যবস্থার পরিপন্থি বলে মত দিয়েছিলেন। তবে সালাহ, সাদিও মানে, পল পগবার মতো তারকা ফুটবলাররা পরিস্থিতি বদলে দিচ্ছেন।
একজন তারকার জন্য একটি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে। সর্বকালের সেরা মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী একটা বড় উদাহরণ। এছাড়া করিম আব্দুল-জব্বার, জ্যাকি রবিনসন এবং বিলি জিন-কিংরাও অতীতে এই ভূমিকা পালন করেছেন। তবে সালাহর প্রচেষ্টা শুধু লিভারপুলেই সীমাবদ্ধ নয়। এর আগে টাইম ম্যাগাজিন তাকে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছিল। তিনি এমনকি মধ্যপ্রাচ্যে নারী অধিকার আন্দোলদেরও বড় সমর্থক হিসেবে পরিচিত। সর্বশেষ ফিলিস্তিন-ইসরায়েল লড়াইয়ের সময়ও তিনি নিরীহ মানুষ হত্যা থামানোর আহবানে জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২১
এমএইচএম
According to a Stanford University study, since Mo Salah joined Liverpool, hate crimes in the area have decreased by 19% and anti-Muslim comments online have dropped by 50%. Impact on and off the pitch. pic.twitter.com/5Duu42qjYS
— ESPN UK (@ESPNUK) June 3, 2019