সব গুঞ্জন থামিয়ে শেষ হয়ে গেল বার্সেলোনার মেসি অধ্যায়। কাতালান জায়ান্টদের সঙ্গে তার নতুন চুক্তি স্বাক্ষর সম্ভব হয়নি।
বৃহস্পতিবার দিনভর আলোচনা শেষে দুই পক্ষ চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হতে পারেনি। ফলে স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় বিচ্ছেদের ঘোষণা আসে বার্সার পক্ষ থেকে। এই খবরে পুরো কাতালুনিয়া রাজ্য, স্পেন এবং বিশ্ব ফুটবলে রীতিমত ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারচেয়েও বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে মেসির পরবর্তী ঠিকানা কি হবে তা নিয়ে।
বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে বিনা ট্রান্সফার ফিতে নেওয়ার জন্য ক্লাবগুলোর মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কার ভাগ্যে শিকে ছিড়বে তা জানতে অপেক্ষায় থাকতে হবে। তবে সম্ভাব্য ঠিকানা হিসেবে উঠে আসছে বেশ কয়েকটি নাম। কিন্তু করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে ইউরোপের শীর্ষ সারির অধিকাংশ ক্লাবের আর্থিক অবস্থা খারাপ। যদিও তার বেতন-ভাতা পরিশোধের সামর্থ্য খুব কম ক্লাবেরই আছে।
পিএসজি
এই মুহূর্তে মেসিকে দলে ভেড়ানোর সামর্থ্য যেসব ক্লাবের আছে, তাদের মধ্যে পিএসজির নাম আসবে সবার আগে। ফরাসি জায়ান্টরা চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে মরিয়া সে জানা কথাই। দলটি এর আগেও মেসির প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। তাদের আর্থিক অবস্থা এই করোনা পরিস্থিতিও বেশ ভালো। তার চেয়েও বড় কথা, তারা এরইমধ্যে কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের খেলোয়াড়কে বিনা ট্রান্সফারেই পেয়ে গেছে। বিশেষ করে রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার সার্জিও রামোস ও ইউরোজয়ী ইতালিয়ান গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোনারুমা। তাছাড়া মেসি এলে কিলিয়ান এমবাপ্পেকে নিয়ে যে সমস্যায় ভুগছে পিএসজি, তার থেকেও মুক্তি মিলবে। ফরাসি ফরোয়ার্ডকে হাসিমুখে রিয়ালের কাছে বেচে দিতে পারবেন ক্লাবের প্রেসিডেন্ট নাসের আল-খেলাইফি।
অন্যদিকে মেসির জন্যও পিএসজি সবচেয়ে বড় বিকল্প হতে যাচ্ছে। কারণ দলটি এরইমধ্যে চ্যাম্পিয়ন লিগ জেতার মতো করেই সাজানো হয়েছে। সেখানে গিয়ে তিনি পাবেন বন্ধু ও সাবেক সতীর্থ নেইমার ও স্বদেশী কোচ মাওরিসিও পচেত্তিনোর দেখা। এমনকি হয়তো ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকও পাবেন মেসি। তাছাড়া প্যারিসের জীবনযাত্রা অনেক সহজ। ফরাসি লিগ ওয়ান হয়তো লা লিগার মতো জাঁকজমকপূর্ণ নয়, কিন্তু বার্সেলোনায় যে প্রত্যাশার চাপ ও দায়িত্ব নিতে হয়েছে, তা থেকে হয়তো মুক্তি মিলতে পারে।
ম্যানচেস্টার সিটি
সদ্যই ১১৮ মিলিয়ন ইউরোয় জ্যাক গ্রিয়ালিশকে দলে ভেড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ম্যানসিটি। কিন্তু এখন মেসি যেহেতু ফ্রি এজেন্ট, তাই তাকে পেতে চাইবে সিটিজেনরাও। কিন্তু এটা সম্ভব যদি বার্নান্দো সিলভা ও রিয়াদ মাহরেজকে বেচে দেওয়া যায় তাহলে। কারণ যেখানেই যান না কেন, মেসির বেতন হতে যাচ্ছে আকাশছোঁয়া। এরকমটা সম্ভব হলে ফের পেপ গার্দিওলার অধীনে খেলার ইচ্ছে পূরণ হবে তার।
নিজের সাবেক গুরুর সঙ্গে মিলে ফের ইউরোপে রাজত্ব করতে চাইতেই পারেন মেসি। কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলার ধরণ। তবে লিগের শিরোপা জেতার সম্ভাবনায় সিটি এখন অনেক এগিয়ে। দলটির স্কোয়াড এখন ইংল্যান্ডের সেরা। গার্দিওলাও মেসিকে ছাড়া এখন পর্যন্ত চ্যাম্পিয়নস লিগ জিততে পারেননি। হয়তো সাবেক প্রিয় শিষ্যকে পেলে সেই স্বপ্নও পূরণ হবে কালাতান কোচের। মেসি কারো অধীনে খেলতে যদি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, তিনি তো গার্দিওলাই।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বর্তমান ট্রান্সফার পলিসি অনুযায়ী, মেসির মতো খেলোয়াড়কে দলে ভেড়ানোর সম্ভাবনা কম। তবে যে অল্প কিছু ক্লাব তার বেতন পরিশোধে সক্ষম, তাদের মধ্যে রেড ডেভিলরা অন্যতম। ইউনাইটেড অবশ্য ২০২৩ সালে লিগ জেতার আশায় দল গোছাচ্ছে। কিন্তু স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের মতো কোচ অবসর নেওয়ার পর থেকে ধুঁকতে ক্লাবটি যদি মেসিকে দলে নেয়, তাহলে হুট করেই তাদের গুরুত্ব অনেক বেড়ে যাবে সন্দেহ নেই।
দুইবার মেসির কারণে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনাল থেকে খালি হাতে ফেরা ইউনাইটেডের সমর্থকরা ভালো করেই জানে, তিনি কতটা প্রতিভাবান এবং কত বড় গেম চ্যাঞ্জার। কিন্তু মেসির সঙ্গে তাদের চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা কঠিন হয়ে গেছে জ্যাডন সানচোকে কেনা এবং প্রায় অকেজো হয়ে পড়া জেসে লিনগার্ডকে না বেচতে পারায়।
জুভেন্টাস
ভক্ত-সমর্থকরা বছরের পর বছর ধরে মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর মধ্যে কে সেরা- তাই নিয়ে লড়াই করে আসছে। কিন্তু কেউ কখনো ভেবে দেখেছে যে, আধুনিক ফুটবলের দুই সেরা ফুটবলার যদি একই দলে খেলেন তাহলে কেমন হয়? এতদিন এটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এখন সেই সম্ভাবনাও আছে। তবে ইতালিয়ান জায়ান্টদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। কিন্তু এখনই সম্ভাবনা শেষ হয়নি। ফলে পুরো ক্যারিয়ার জুড়ে যে যারা একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন, তাদের এখন সতীর্থ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এমনকিছু হলে তা হবে ফুটবলপ্রেমীদের জন্য স্বপ্নের মতো ব্যাপার।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২১
এমএইচএম