মেসি-ভক্তদের বিষয়টা মানতে কষ্ট হতে পারে; কিন্তু এটাই সত্য। আর্জেন্টিনার জার্সিতে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ বছর পার করছেন তিনি।
ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের দেশের মাটিতে শেষ ম্যাচ দেখতে আজ শনিবার আর্জেন্টিনার রাজধানো বুয়েনস এইরেসের 'বোম্বোনেরা' স্টেডিয়াম ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। ঘরের মাঠে প্রিয় তারকার শেষ জাদু দেখার আশায় গ্যালারিতে আসা সমর্থকদের অবশ্য হতাশ করেননি মেসি। পুরো ম্যাচে দারুণ সব ড্রিবলিং আর পাসিংয়ের জাদু দেখিয়েছেন তিনি; মনে করিয়ে দিয়েছেন তরুণ মেসিকে। অনেকদিন পর দলে ফিরে দারুণ এক গোলও করেছেন।
ভেনেজুয়েলার বিপক্ষে মেসির গোল পাওয়ার ম্যাচটিতে ৩-০ গোলের জয় তুলে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। ম্যাচে মেসির পারফরম্যান্স সমর্থকদের নিশিচতভাবেই নস্টালজিয়ায় ডুবিয়ে দিয়েছে। এই মেসি যেন পিএসজির মেসির চেয়ে একেবারেই আলাদা। দেশের প্রতিনিধিত্ব করা যে যিনি দারুণ উপভোগ করছেন, তা পুরো ম্যাচজুড়েই প্রতিফলিত হয়েছে। যে স্টেডিয়ামে বহুবার 'দিয়েগো ম্যারাডোনা' বলে চিৎকার শোনা গেছে, সেই একই স্টেডিয়াম আজ মেসিকে 'বিদায়' দিতে গিয়ে আবেগে ভেসে গেছে।
আজ জয়ের উল্লাসে মাতলেও ম্যাচ শেষে মেসির বলা কথাগুলো নিশ্চিতভাবে হজম করতে কষ্ট হয়েছে আলবিসেলেস্তে সমর্থকদের। আধুনিক ফুটবলের সেরা এই ফরোয়ার্ড বলেন, 'আমি সামনে কি আছে তা নিয়েই ভাবতে পারি। আমি (বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে) ইকুয়েডরের মোকাবিলা নিয়ে ভাবছি। বিশ্বকাপের পর, আমাকে অনেককিছু নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। '
মেসির পাশাপাশি আর্জেন্টিনার মাটিতে নিজের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলেছেন তার পিএসজি সতীর্থ আলহেল দি মারিয়াও। ম্যাচে বদলি হিসেবে নেমে নিজে গোল করার পাশাপাশি মেসির গোলে অ্যাসিস্টও করেছেন এই অভিজ্ঞ উইঙ্গার। এই দুজনসহ পুরো আর্জেন্টিনা দলই এবার দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছে। পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে থেকে বিশ্বকাপে পা রাখা দলটি এবার দারুণ কিছুর প্রত্যাশা করতেই পারে। কারণ বাছাইপর্বে তারা একটিও ম্যাচ হারেনি। ১১ জয়ের বিপরীতে ড্র পাঁচটিতে। সবমিলিয়ে টানা ৩০ ম্যাচ ধরে অপরাজিত!
এবারের আর্জেন্টিনা দলটিকে বলা হচ্ছে ২০১৪ বিশ্বকাপের পর সবচেয়ে শক্তিশালী ও ব্যালেন্সড। মেসির নেতৃত্বে দলটি ২০২১ কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতার পর দলটিকে নিয়ে প্রত্যাশাও বেড়ে গেছে। কোচ লিওনেল স্কালোনিও পুরোনো ও নতুনদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়ার সম্পর্ক স্থাপনে ভূমিকা রেখেছেন। তার এই পরীক্ষানিরীক্ষার ফল তারা পেয়েছে গত কোপার শিরোপা জিতে। ক্লাব ফুটবলে ফর্ম যেমনই হোক না কেন, সাম্প্রতিক সময়ে মেসি নিজেও জাতীয় দলের হয়ে নিজেকে উৎসর্গ করে দিচ্ছেন। ফলে এবার কাতার বিশ্বকাপে বড় স্বপ্ন দেখতেই পারে আর্জেন্টিনা।
'শেষের পথে থাকা' মেসিকে নিয়ে কি বিশ্বকাপ জিততে পারবে আর্জেন্টিনা? প্রশ্নটির উত্তর এখনও অজানা। ফ্রান্স, বেলজিয়াম, স্পেন, জার্মানি এবং ব্রাজিলের মতো শক্তিশালী দলগুলোও বিশ্বকাপের অন্যতম দাবিদার। যদিও গত কয়েক বছরে আর্জেন্টিনাই সবচেয়ে ধারাবাহিক দল, কিন্তু ওই পাঁচ দলের বিপক্ষে লড়াই করার মতো শক্তিমত্তা তাদের কতটা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে মেসি যদি পুরো ফিট এবং আত্মবিশ্বাসী অবস্থায় থাকেন তাহলে যেকোনো কিছুই সম্ভব। আর সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার নিশ্চিতভাবেই বিশ্বকাপ ছুঁয়েই অবসরে যেতে চাইবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০২০ ঘণ্টা, মার্চ ২৬, ২০২২
এমএইচএম