ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাংলাদেশে ৫০ বছর পূর্তি এমএসএফের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১২, ২০২২
বাংলাদেশে ৫০ বছর পূর্তি এমএসএফের

ঢাকা: বাংলাদেশে প্রথম চিকিৎসাসেবা এবং মানবিক সহায়তা দিতে আসার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করেছে আর্ন্তজাতিক চিকিৎসা মানবিক সংস্থা মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স তথা সীমান্তবিহীন চিকিৎসক দল (এমএসএফ)।

সোমবার (১২ ডিসেম্বর) রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এমএসএফ ঢাকার প্রধান গণমাধ্যম নেতাদের সঙ্গে এ উপলক্ষে বৈঠক করেছে।

সংগঠনের বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ক্লাউদিও মিগলিটা বলেন, এমএসএফ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশে এর ৫০ বছর হয়ে গেছে। যে কোনো সংকটে আমাদের কাজ করার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে ঘটনার ভয়াবহতা, জনগোষ্ঠীর মধ্যে অসুস্থতার মাত্রা এবং মৃত্যুহার, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বাদ পড়া জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনের তীব্রতা এবং এমএসএফ তাদের জীবনে কী ধরনের প্রভাব আনতে পারে তার ওপর। বিশ্বজুড়েই এমএসএফের চিকিৎসা সেবা এবং মানবিক সহায়তার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে এসব মানদণ্ডের ওপর। সংগঠনেরর নীতিমালা অনুযায়ী আমরা লিঙ্গ, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে বা রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার ঊর্ধ্বে সবাইকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকি। সেই কারণেই আমরা বাংলাদেশে আছি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের দুঃস্থ মানুষকে সহায়তা দেওয়ার দীর্ঘস্থায়ী প্রতিশ্রুতিকে আজ আমরা উদযাপন করছি। বাংলাদেশে আমাদের কর্মীরা সংকটের পরে এবং রোগের প্রাদুর্ভাবের সময় ত্রাণ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য স্থানীয় জরুরি দলের পাশাপাশি কাজ করছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের কারণে উপকূলীয় দূর্গম এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্যও কাজ করেছে এমএসএফ।

ক্লাউদিও বলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ায় কালাজ্বরে আক্রান্তদের জন্য একটি প্রোগ্রাম পরিচালনা করে এমএসএফ। ২০১০ সালে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কর্মরত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প চালু করি আমরা। ২০১৪ সালে আমরা ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তদের চিকিৎসায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সহায়তার জন্য বান্দরবান এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দিয়েছি। এছাড়া কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি, বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদেরও সেবা দিচ্ছে এমএসএফ।

তিনি জানান, ২০১৭ সালে মিয়ানমারের নিপীড়ন থেকে পালিয়ে কক্সবাজারে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রয়োজনে সাড়া দিতে এমএসএফ চিকিৎসা ও মানবিক কার্যক্রমকে সম্প্রসারিত করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠী এবং রোহিঙ্গাদের জন্য উচ্চমানের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হয়ে উঠেছে এমএসএফ।

মেডিসিন্স স্যান্স ফ্রন্টিয়ার্স একটি আর্ন্তজাতিক মানবিক চিকিৎসা সংস্থা যা কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে ১১টি স্বাস্থ্যসেবা পরিচালনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে জরুরি এবং নিবিড় পরিচর্যা, শিশুরোগ, প্রসূতি এবং যৌন প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, যৌন সহিংসতার শিকারদের জন্য চিকিৎসা সহায়তা, হেপাটাইটিস সি এবং ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো অসংক্রামক রোগে আক্রান্তদের যত্ন। এছাড়াও এমএসএফ শরণার্থী শিবিরের এবং মানব সৃষ্ট বর্জ্য পরিশোধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

২২ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সালে এমএসএফ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পরপরই, ১৯৭২ সালে এমএসএফ প্রথম বাংলাদেশে চিকিৎসা সহায়তা দিতে আসে। সে সময় বাংলাদেশ সদ্য স্বাধীনতা যুদ্ধ পরবর্তী মানবিক সংকট থেকে বেরিয়ে আসছিল এবং বিধ্বংসী বন্যার কারণে মানবিক সহায়তার প্রয়োজনও ছিল। এমন সময় সংস্থাটি তৎকালীন চলমান মানবিক প্রচেষ্টায় যোগ দিতে একদল চিকিৎসককে পাঠায় বাংলাদেশে। এরপর কয়েক দশক ধরে এমএসএফ সারাদেশে নানা সংকটে জর্জরিত মানুষের প্রয়োজনে সাড়া দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে নানা জরুরি স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায়  কাজ করে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে এমএসএফের এই দীর্ঘ যাত্রা নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়। এতে আফগানিস্তান, সোমালিয়া, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের কার্যক্রমগুলো তুলে ধরা হয়।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এমএসএফের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোহাম্মাদ আবু তাহের, হেড অব এক্সটার্নাল রিলেশনস ইমামুর রহমান এবং ড. আতিয়া শারমিন, মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর সাপোর্ট গাদ সাফান, ফিল্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৭ ঘণ্টা, ১২ ডিসেম্বর, ২০২২
এমকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।