ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বগুড়া ইডিসিএলে ১২ অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন শুরু 

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
বগুড়া ইডিসিএলে ১২ অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন শুরু 

বগুড়া: দেশের বগুড়া জেলায় প্রথমবারের মতো এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ইউনিটে ১২টি জীবনরক্ষাকারী স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন শুরু হয়েছে।

এ বাণিজ্যিক উৎপাদনের কারণে এই প্রকল্প থেকে সরকারের বছরে রাজস্ব আয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ওই ইডিসিএল ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) ও প্লান্ট প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

জানা যায়, ২০০৫ সালে জীবনরক্ষাকারী ইনজেকশন বা স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস বগুড়া ইউনিটে একটি প্রকল্পের উদ্বোধন করেছিল। সেখানে সেফালোস্পোরিন গ্রুপের সেফট্রাইক্সেন, সেফুরোক্সাইম, সেফটাজিডিম ও সেফরাডিনের মতো ১২টি জীবনরক্ষাকারী স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের কথা। কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়ে গেছে, সেই প্রকল্পের কোনো অগ্রগতি হয়নি। অবশেষে প্রকল্পটি শুধু আলোরমুখই দেখলো না, বরং উৎপাদন প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে এই ইউনিটে। ১৫ ফেব্রুয়ারি এ প্রকল্পের উৎপাদন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

এদিকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের কারণে এ প্রকল্প থেকে সরকারের বছরে রাজস্ব আয় হবে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। এতদিন এসব ওষুধ বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির কাছ থেকে কিনে সরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হতো। ফলে বিপুল পরিমাণের রাজস্ব ব্যয় হতো সরকারি কোষাগার থেকে। এখন সেই অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আয়ের নতুন পথের সূচনা হলো বগুড়ার এই ইউনিট থেকে।  

বগুড়ার ইডিসিএলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) ও প্লান্ট প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, ২০০৫ সালের এপ্রিল মাসে বগুড়া ইউনিটের বর্ধিতাংশে নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়েছিল। তারপর সেই প্রকল্পের আর কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় সেসময় আমদানি করা যন্ত্রপাতি প্রায় অকেজো হয়ে পড়ে। প্রকল্পটি যখন পরিত্যক্ত ঘোষণা হওয়ার পথে সেসময় ইডিসিএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এহ্সানুল করির জগলুল প্রকল্পটি নতুন করে চালু করার উদ্যোগ নেন। এ লক্ষে প্রকল্পটিকে যুগোপোযোগী করার পাশাপাশি ওষুধ উৎপাদনের লক্ষে দুই ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। প্রথম ধাপে ননস্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক (ক্যাপসুল ও ড্রাইসিরাপ) এবং দ্বিতীয় ধাপে স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক (ইনজেক্ট্যাবলস) উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নেওয়া হয়।

তিনি জানান, ২০১৬ সালে প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয়। প্রকল্পের শুরুতে যে অসম্পূর্ণ উৎপাদন বিভাগ, কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগ, স্টোর বিভাগ ও ইউটিলিটিজ বিভাগ ছিল তা সংস্কার করা হয়। পাশাপাশি আগের আমদানি করা ফেলে রাখা যন্ত্রপাতিকে ব্যবহারপযোগী করা এবং সর্বাধুনিক নতুন যন্ত্রপাতি আমদানি করে ২০২০ সালে ক্যাপসুল ও ড্রাই সিরাপ উৎপাদন শুরু করা হয়। বর্তমানে সেফালোস্পোরিন প্রকল্পের ননস্টেরাইল বিভাগ ছয়টি ননস্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক সেফিক্সিম ও সেফরাডিন উৎপাদন হচ্ছে। উৎপাদন শুরুর পর হতে প্রতিবছর ৫০ থেকে ৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে এই বিভাগ থেকে।

ডিজিএম মনিরুল ইসলাম জানান, ননস্টেরাইল বিভাগ চালু হওয়ার পর দ্বিতীয় ধাপে ইনজেকশন বা স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের লক্ষে কাজ শুরু হয়। এই বিভাগেও ২০০৬ সালে আমদানি করে অযত্নে অবহেলায় ফেলে রাখা কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার উপযোগী করা হয়। এরপর শুরু হয় পরীক্ষামূলক উৎপাদন। এতে সফলতা আসার পর ১৫ ফেব্রুয়ারি এই ইউনিটে সেফট্রাইক্সেন, সেফুরোক্সাইম, সেফটাজিডিম ও সেফরাডিনের মতো ১২টি জীবনরক্ষাকারী স্টেরাইল অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদনের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।  

ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, সাহাদারা মান্নান, একেএম রেজাউল করিম তানসেন, ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. এহ্সানুল করির জগলুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এ ইউনিটে বাণিজ্যিক উৎপাদনের ফলে ইতোমধ্যে ক্যাপসুল ও ড্রাই সিরাপ খাত থেকে প্রায় ৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় শুরু হয়েছে। এছাড়া ইনজেকশনখাত থেকে প্রতিবছর সরকারের রাজস্ব বিভাগে আরও প্রায় ১৫০ কোটি টাকা যোগ হবে।

এছাড়া এ ইউনিট চালু করার ফলে বগুড়ায় নতুন করে ১৫০ জন লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এ অ্যান্টিবায়োটিক উৎপাদন হওয়ায় সাধারণ মানুষ সরকারি হাসপাতাল থেকে ১২টি জীবনরক্ষাকারী ইনজেকশন বিনামূল্যে পাবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৩
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।