ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষা হচ্ছে না। কিট সংকটের কারণে দুদিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ৩২৪ জনের ডেঙ্গু পরীক্ষায় ১০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। চলতি আগস্ট মাসে গত শনিবার পর্যন্ত ১৬০ জনের ডেঙ্গু পরীক্ষায় পাঁচজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গত বছর উপজেলায় ৮৬ জনের পরীক্ষায় মাত্র সাতজনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তবে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে আরও বেশি পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। সোমবার (২১ আগস্ট) হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে অন্তত ৫৯৫ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রায় তিনশ রোগীর জ্বর, শরীর ব্যথা, সর্দি-কাশি ও বমি ছিল।
সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত দুই মাস ধরে উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি ও কাশিসহ মাংসপেশীতে ব্যথা নিয়ে প্রতিনিয়ত শত শত রোগী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতদিন ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট থাকলেও রোববার (২০ আগস্ট) থেকে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ পৌর শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিট সংকট দেখা দেয়। এতে রোগীরা জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ও ক্লিনিকে পরীক্ষার জন্য গিয়ে ফিরে যাচ্ছেন। অনেকে জেলা শহরের হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ছুটছেন।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে পৌরসভার তুলাতলী এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার তার তিন বছরের মেয়ে ইসমাত জাহানকে জ্বর নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে যান। তিনি বলেন, হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারেন কিট নেই। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। পরীক্ষা করতে না পারায় জ্বর নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।
উপজেলার চর চান্দিয়া ইউনিয়নের উত্তর চর চান্দিয়া এলাকার বাসিন্দা ফাতেমা বেগম বলেন, চার দিন ধরে তার শরীরের প্রচণ্ড জ্বর। একইসঙ্গে শরীরে ব্যথা ও বমি হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ডেঙ্গু শনাক্তের পরীক্ষা করতে পারেননি। পরে চিকিৎসকের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
সোনাগাজী ক্লিনিকের মালিক ডা. মো. নুর উল্যাহ বলেন, গত দুই মাসে তার ক্লিনিকে জ্বর নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে প্রায় দুই শতাধিক লোকের রক্ত পরীক্ষা করানো হয়েছে। এতে চার নারীসহ ১৫ জনের রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। তারা ঢাকা-চট্টগ্রামে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের সংকট দেখা দিয়েছে। এজন্য গত তিনদিন পরীক্ষা বন্ধ ছিল। সোমবার রাতের মধ্যে ঢাকা থেকে ৫শ কিট আসার কথা থাকলেও এখনো আসেনি।
পৌরসভার চর গনেশ এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, পাঁচদিন ধরে তার পরিবারের চার সদস্যের প্রচণ্ড জ্বর। ওষুধ খেয়ে জ্বর না সেরে ওঠায় রোববার বিকেলে তারা সোনাগাজী পৌর শহরের একটি ক্লিনিকে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে যান। সেখানে কিট না থাকায় পরে তারা ফেনী শহরে গিয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে পরীক্ষা করিয়েছেন। এতে একজনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
পৌর শহরের বাসিন্দারা বলছেন, পৌর শহরের ড্রেন ও নালাগুলো ময়লা আবর্জনায় ভরে গেছে। সর্বত্র ময়লার বাগাড় বললেই চলে। একারণে পৌর এলাকায় মশার উপদ্রব বেড়ে গেছে। রাতে ও দিনে মশারি বা কয়েল ছাড়া বিশ্রাম ও ঘুমানো যায় না। মশার উপদ্রব দমনে পৌর কর্তৃপক্ষ ক্রাশ প্রোগ্রামসহ কোনো ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ না করায় দিন দিন মশার উপদ্রব বেড়ে ডেঙ্গুর শঙ্কায় রয়েছেন বাসিন্দারা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ল্যাব টেকনোলজিস্ট মো. মাহবুব আলম বলেন, কিট সংকটের কারণে রোববার ও সোমবার দুদিন হাসপাতালে ডেঙ্গু শনাক্ত করতে আসা রোগীদের পরীক্ষা হয়নি। হঠাৎ করে কিট শেষ হয়ে যাওয়ায় গত বৃহস্পতিবার সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে ৩০টি কিট দেওয়া হয়। যা একদিনেই শেষ হয়ে গেছে। শনিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দুই হাজার কিটের চাহিদা উল্লেখ করে সিভিল সার্জন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। কিট পাওয়া গেলে আবারও ডেঙ্গু পরীক্ষা শুরু হবে।
সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা উৎপল দাশ বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালটিতে দুই হাজার কিট সরবরাহের জন্য চাহিদাপত্র দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আগত রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০২৩
এসএইচডি/আরআইএস