ঢাকা: বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটে গরীব-দুস্থ ৩৪ জন রোগীর নিখরচায় চোখের ছানি, মাংস বৃদ্ধি ও নেত্রনালির অপারেশন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাবরিনা সোবহান রোডে অবস্থিত বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট, ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশন এবং দোয়ারকা দাস ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে দিনব্যাপী এ ফ্রি অপারেশন অনুষ্ঠিত হয়।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক পরিচালক এবং ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. সালেহ আহমদের তত্ত্বাবধানে সার্জারিতে অংশ নেন ডা. মজুমদার গোলাম রাব্বি, ডা. আক্তার ফেরদৌসি জাহান ও ডা. তাসরুবা শাহনাজ।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২১ জন পুরুষ ও ১৩ জন নারীসহ মোট ৩৪ জন রোগীর অপারেশন করা হচ্ছে। যার মধ্যে ২৫ জনের চোখের ছানি অপারেশন, ছয় জনের মাংস বৃদ্ধি অপারেশন ও তিনজনের নেত্রনালির অপারেশন হয়েছে।
চোখের মাংস বাড়ার কারণে অপারেশন করাতে বসুন্ধরা আই হসপিটালে এসেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালীর ধলনগর গ্রামের বাসিন্দা কৃষক কবির মোল্লা (৫৫)। আট মাস আগে তিনি নিজ এলাকায় বসুন্ধরা আই হসপিটালের বিনামূল্যের আই ক্যাম্পে চোখ দেখিয়েছিলেন। তখন ডাক্তার তাকে চোখের অপারেশন করাতে বলেন। কিন্তু আর্থিক সচ্ছলতা না থাকার কারণে, বিনামূল্যে চোখের অপারেশন করাতে আই ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তিনি। পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষ কবির মোল্লাকে বিনামূল্যে অপারেশন করাতে ঢাকায় বসুন্ধরা আই হসপিটালে নিয়ে আসেন। বিনামূল্যে চক্ষু অপারেশন করাতে পেরে আনন্দিত কবির মোল্লা।
কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি দুচোখেই কম দেখি। ধারে কাছে কেউ থাকলে তাকে দেখতে পারি, তাও ঝাপসা ও অন্ধকারের মত। দূরের কিছুই দেখি না। তবে আজকে আমার ডান চোখের অপারেশন হবে। চোখের মাংস বেড়ে গেছে, যে কারণে চোখ দিয়ে পানি পড়ে।
কবির মোল্লার পাশের গ্রামের (কুষ্টিয়ার মিরপুর) এক বাসিন্দা হাফিজুর রহমান (৫৫) বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন করাতে এসেছেন। পরিবার উপার্জনের মত দুই ছেলে থাকলেও, তারা আর্থিকভাবে স্বচ্ছ না হওয়াতে চোখের চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। যে কারণে দীর্ঘ দিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, চোখে ঝাপসা দেখি৷ এমনকি ভাল করে কারও চেহারাও বুঝতে পারি না। ডাক্তার বলছেন, আমার ছানি অপারেশন তারা বিনামূল্যে করিয়ে দেবেন। এমনকি কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আসা ও ফিরে যাওয়াসহ থাকা খাওয়ার সব ব্যবস্থাই তারা করছেন। আমি গরিব মানুষ, আমার চিকিৎসা করানোর মত অবস্থা নেই। আমি বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকসহ ডাক্তারদের ধন্যবাদ জানাই, তারা আমার জন্য এই ব্যবস্থা করেছেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কাঞ্চনপুর থেকে চোখের ছানি অপারেশন করাতে এসেছেন মাজু খাতুন (৬৫) নামের এক বৃদ্ধা। অপারেশনে কিছুটা ভীতি থাকায় সঙ্গে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন। মাজু খাতুনের মেয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমার মা দীর্ঘদিন ধরে চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। মায়ের সঙ্গে আমার ছোট দুই ভাই থাকে। আমাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না। যে কারণে মায়ের চোখের অপারেশন করাতে পারছিলাম না। আট মাস আগে মা এলাকায় হওয়া একটি চক্ষু ক্যাম্পে গিয়েছিলেন৷ তখন ডাক্তার বলেছিলেন, চোখের ছানি অপারেশন করাতে হবে। তবে মা অপারেশনের কথা শুনে কিছুটা ভয়ে আছে। যে জন্য আমি মাকে নিয়ে এসেছি। এই হাসপাতালের সব কিছুই খুব গোছালো। তাদের সেবার মানও অনেক ভালো। এখানে ডাক্তার থেকে শুরু করে সব স্টাফ অনেক আন্তরিক।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অবৈতনিক পরিচালক এবং ভিশন কেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি প্রফেসর ডা. মো. সালেহ আহমদ বলেন, আজকে আমরা ৩৪ জন রোগীর চোখের ছানি, মাংস বৃদ্ধি ও নেত্রনালির অপারেশন করব। আমরা প্রতি মাসে দুইবার ক্যাম্প পরিচালনা করে থাকি। সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আমরা এই বিনামূল্যে ক্যাম্প করে থাকি। গরীব-দুস্থ ও অন্ধ রোগীদের চক্ষু চিকিৎসার সাহায্যার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের যাকাত ফান্ড ও ফ্রি ফান্ড থেকে আমরা এর ব্যয়ের ব্যবস্থা করে থাকি। ক্যাম্পের মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় দুই হাজার ৭৫৭ জনের বেশি রোগীকে বিনামূল্যে অপারেশন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা:) বলেছেন কেউ যদি ভালো কাজ করে আনন্দিত হয় এবং খারাপ কাজ করে দুঃখিত হয় তাদের তোমরা ঈমানদার হিসেবে বলতে পারো। আল্লাহ রাসূলের এই বাণীকে কেন্দ্র করে আমি বলতে চাই, ভালো কাজ করলে আমাদের খুবই ভালো লাগে। এখান থেকে যারা বিনামূল্যে চিকিৎসা নিয়েছেন তারা সবাই আমাদের জন্য দোয়া করেছেন।
বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফাইজা রহমান বলেন, গরীব-দুস্থ ও অন্ধ রোগীদের চক্ষু চিকিৎসার সাহায্যার্থে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুস্থদের সেবায় আগ থেকেই এ ধরনের প্রক্রিয়া চলে আসছে। সারাদেশে বিনামূল্যে এ ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, এ ক্যাম্পটি চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ার সদর উপজেলার হরিনারায়ণপুরে দোয়ারকা দাস আগরওয়ালা মহিলা কলেজে অনুষ্ঠিত হয়। ঐ ক্যাম্পে মোট এক হাজার ৫০০ রোগীকে বিনামূল্য চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য ৩০০ জনকে ছানি, নেত্রনালি ও মাংস বাড়ার কারণে চোখ অপারেশনের জন্য নির্বাচিত করা হয়।
বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) সেখানকার ৩য় ব্যাচের ৩৪ জন রোগীর এ অপারেশন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০২৩
ইএসএস/এসআইএ