ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বাংলাদেশিদের জন্য জাপানে উন্নত চিকিৎসার দুয়ার খোলা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১২
বাংলাদেশিদের জন্য জাপানে উন্নত চিকিৎসার দুয়ার খোলা

ঢাকা: বাংলাদেশিদের চিকিৎসার জন্য জাপান সরকার চালু করেছে মেডিক্যাল ভিসা। সুলভে উচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই এর লক্ষ্য।



চিকিৎসার জন্য জাপান গমনের এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে স্বয়ং জাপান সরকার। ২০১২ সাল থেকে এ ভিসা চালু হয়েছে। জাপানের অর্থ-বাণিজ্য-শিল্প মন্ত্রণালয়ের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রকল্পটি পরিচালতি হচ্ছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিভিন্ন দেশে জাপান সরকারের অনুমোদিত সংস্থার নাম ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স জাপান।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে জরুরি সেবা প্রদানে ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স জাপান এর সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই সংস্থার নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, সিঙ্গাপুরসহ পৃথিবীর আটটি শহরে শাখা, ৬টি শহরে কল সেন্টার ও ১৪৪টি শহরে এজন্ট রয়েছে।

বাংলাদেশে চলতি বছরে ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্ট জাপান এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এরই মধ্যে এর আওতায় উন্নত চিকি‍ৎসা সেবা গ্রহণ শুরু করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এর সদস্যগণ। তাদের অনেকেই চিকিৎসার জন্য জাপান গমন শুরু করেছেন এবং আরও অনেকেই অপেক্ষমান আছেন।

ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স জাপান বর্তমানে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য জাপানে অত্যাধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করছে। তবে তাদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য বাংলাদেশেই অত্যাধুনিক জাপানি চিকিৎসা পদ্ধতির প্রসার ঘটানো ও চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলা।

যে সব চিকিৎসা সেবা পাওয়া যাবে

জাপানের হাসপাতালগুলোতে সহজলভ্য কিছু চিকিৎসাসেবা আছে।   শুধুমাত্র এশিয়ায়  জাপানেই সহজলভ্য এ সেবা পাওয়া যায়। অনেক দূরারোগ্য রোগের চিকি‍ৎসা জাপানে সহজলভ্য। এসব চিকিৎসা সুবিধার কয়েকটি হচ্ছে:

পার্টিকল বিম থেরাপি (ক্যান্সারের অত্যাধুনিক চিকিৎসা): অনেক সময়ে শরীরের  গভীরের জটিল অবস্থানে ক্যান্সারের কারণে অপারেশন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে অপরদিকে সংশ্লিষ্ট রোগীও অপারেশন করাতে চান না।

এ ধরনের পরিস্থিতিতে পার্টিকল বিমই শ্রেষ্ঠ চিকিৎসাপদ্ধতি। এতে হাসপাতালে ভর্তি হবার প্রয়োজন নেই। স্বল্প সময়ে জটিলতাবিহীন থেরাপি। এটা অনেকটা এক্সরে কিংবা গামা রে’র মতোই। পার্টিক্যাল বিম থেরাপির অন্যতম অঙ্গ হচ্ছে হেভি আয়রন রেডিয়েশন থেরাপি। এশিয়া মহাদেশে কেবল জাপানেই এই থেরাপির ব্যবস্থা রয়েছে।  

রিজেনারেটিভ মেডেসিন: অচল অঙ্গ সচল করার চিকিৎসা।

এন্ডোসকোপিক সার্জারি:  মুখগহ্বরে নলযুক্ত ক্যামেরাসহ সার্জারিযন্ত্র দিয়ে জটিল অপারেশন তথা চিকিৎসা সেবার ক্ষেত্রে জাপানের এন্ডোসকোপিক সার্জনরা দুনিয়াসেরা।

কাস্টমাইজড (অর্ডার-মেড) মেডিসিন: অর্ডার দিয়ে চশমা বানানোর মতই কৃত্রিম হাড়, জয়েন্ট তৈরি করা হয়। ধাতব ও প্লাস্টিকের তৈরি নিখুঁত কৃত্রিম অঙ্গের ক্ষেত্রে জাপা‍নের জুড়ি নেই।  

ওরাল মেডিসিন ও ডেন্টিস্ট্রি: দাঁত ও মুখ গহ্বরের চিকি‍ৎসার ক্ষেত্রে জাপানি চিকিৎসা বিশ্বসেরা।

ইমিউনো থেরাপি ও জিন থেরাপি: শরীরের রোগ প্রতিরোধকারী লিম্ফোসাইটকে শরীর থেকে বের করে, ক্যান্সার টার্গেট করে অ্যাক্টিভেট করা হয়। তারপর তা আবার রোগীর শরীরে ঢুকিয়ে (ইনজেক্ট করে) দেওয়া হয়, ক্যান্সারকে আক্রমণ করার জন্য। এছাড়া জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ত্রুটিমুক্ত জিনকে ভেক্টর বা কোষে ঢুকিয়ে তা রোগীর শরীরে ইনজেক্ট করা হয়। এভাবে ত্রুটিপূর্ণ জিনকে সারিয়ে তোলা হয়।

নিঙ্গেন ডক (হেলথ স্ক্রিনিং ও প্রেসক্রিপশন): পৃথিবীতে একমাত্র জাপানেই এই চিকিৎসার বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। স্বাস্থ্যপীক্ষার এই কায়দায় শরীরের পুঙ্খাণুপুঙ্খ পরীক্ষা করা এবং সমস্যা চিহ্নিতকরণের পর চিকৎসা দেওয়া হয়।

এছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক অন্যান্য চিকিৎসা সেবার সুযোগ।

এ ব্যাপারে জাপানের তো তো কলেজ অব হেল্থ সাইন্সেস এর অধ্যাপক ও ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স অব জাপান এর পরিচালক ডা. শেখ আলীমুজ্জামান এমডি, পিএইচডি বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশিদের জন্য জাপানে চিকিৎসাসেবা সুবিধা উন্মুক্ত করেছে জাপান সরকার। সে সূত্রে ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স জাপান এর সহযোগিতায় ইমার্জেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স বাংলাদেশ এই সুবিধা বাংলাদেশিদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছে।

এর ফলে বাংলাদেশের অনেকেই জটিল রোগ থেকে মুক্তির জন্য বিশ্বখ্যাত জাপানি চিকিৎসার নাগাল পাবেন। এই চিকি‍ৎসাসেবার অনেকগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেতে হতো। অনেক চিকিৎসা আছে যা শুধু জাপানেই সম্ভব। এখন থেকে জাপানে বাংলাদেশিদের জন্য চিকিৎসা সেবা পাওয়ার দ্বার উন্মুক্ত হলো।    

চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য, পরামর্শ, জাপানের ভিসা, যাতায়াত ও আবাসনসহ আনুসঙ্গিক ব্যবস্থাপনা, বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা, দোভাষীর উপস্থিতিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, দেশে ফেরার জন্য জাপান বিমানবন্দর পর্যন্ত যাতায়াতের ব্যবস্থা, দেশে ফেরার পর টেলি কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকি‍ৎসার ফলোআপ করার সুবিধাসহ সবকিছুর জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ইমাজেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্স বাংলাদেশ এর সঙ্গে।

ইমাজেন্সি অ্যাসিস্ট্যান্ট বাংলাদেশ’র ঠিকানা: ১০৮ মসজিদ রোড (চার তলা), ডিওএইচএস, বনানী, ঢাকা। এছাড়াও বাংলাদেশে ০২-৮৮৭১৯৫৪, ০১৭৫৫৫২৫৫০ ও ০১৭৫৫৫৫৭৪৪৫ নম্বরে এবং জাপানে +৮১-৩-৩৮১১-৮৬০০ নম্বরে যে কোনো সময় কল করে প্রয়েজনীয় তথ্য পাওয়া যাবে।
ওয়েব ঠিকানা: http://emergencya.com

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, ২৮ জুন, ২০১২
এমআইএইচ/ সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর jewel_mazhar@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।