ঢাকা: সচেতন হলে দেশের ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি মন্ত্রী হবো, এটা আমি কোনোদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। হঠাৎ করে একটা টেলিফোন আমার জীবনটাকে বদলে দিল।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় বারডেম হাসপাতালের তৃতীয় তলার অডিটোরিয়ামে ‘ডায়াবেটিস প্রতিরোধের এখনই সময়’ এ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির ৬৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সামন্ত লাল সেন বলেন, ডায়াবেটিস এমন একটা রোগ আমি যা মনে করি, এটি নিয়ন্ত্রণে রাখলে খুব ভালো থাকা যায় কোনো অসুবিধা হয় না। ডায়াবেটিস সমিতির প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ইব্রাহিম সাহেবের সঙ্গে আমাদের একটা পারিবারিক সম্পর্ক আছে। আমি মনে করি উনার প্রতিষ্ঠিত এত বড় একটা সুন্দর প্রতিষ্ঠান যা বিশ্বের মধ্যে একটি বিরল ঘটনা বলে আমি মনে করি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন বলেন, সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আমি মনে করি যদি আমরা সচেতন হই, তাহলে দেশে ডায়াবেটিসের রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারব। আমি চাই বারডেম হাসপাতালের ডায়াবেটিস এবং প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ যে কোনো সমস্যা নিয়ে আমার আছে আসুক। আমি চেষ্টা করব তাদের সমস্যাগুলো সমাধানের।
বাংলাদেশের ভালো দক্ষ চিকিৎসকের অভাব আছে মন্তব্য করে সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি কোয়ান্টিটি চাই না, কোয়ালিটি ফুল চিকিৎসক চাই। পাশাপাশি বাংলাদেশে শিক্ষকের খুব অভাব, বেসিক সাইন্সের শিক্ষক বলতে গেলে আমাদের দেশে একদমই নেই। তাই আমি চেষ্টা করছি এ ঘাটতিগুলো পূরণ করতে। হঠাৎ করে কোথাও নতুন মেডিকেল কলেজ খোলা হলো, যেখানে শিক্ষক নেই এ ধরনের মেডিকেল কলেজের পক্ষে আমি নেই। কারণ আমি মনে করি আমি সেখানেই মেডিকেল কলেজ খুলব যেখানে ভালো শিক্ষক আছে। আমরা যদি বেসিক সাইন্স ছেলে মেয়েদের পড়াতে না পারি তাহলে ভালো চিকিৎসা বানানো যাবে না।
সাধারণ রোগীরা যেন কোনো ধরনের ভুল চিকিৎসার শিকার না হয় এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন দুর্ঘটনা এবং অব্যবস্থাপনা আমাকে অনেক পীড়া দেয়। একটা দুটো ঘটনা নিয়ে সমস্ত চিকিৎসক কমিউনিটির উপর এক ধরনের অপবাদ আসে। তবে আমি মনে করি না বাংলাদেশের সব চিকিৎসক চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবহেলা করে। বাংলাদেশে অনেক ভালো জ্ঞানীগুণী চিকিৎসক আছে। তবে দু-একটা ঘটনা আমাদেরকে অনেকটা চিন্তিত করে। তাই এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি সব সময় একটা কথা বলি আমি যেমন চিকিৎসকদের সুরক্ষা দিব একইভাবে রোগীদেরও সুরক্ষা দেব। সাধারণ রোগীরা যেন কোনো ধরনের ভুল চিকিৎসার শিকার না হয় সেটাও আমি দেখব।
ওষুধের দাম বেশি এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ওষুধের দাম যে বেশি এটা আমার আগে জানা ছিল না। গতকাল মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি যে দেশে ওষুধের দাম বেশি। আমরা মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি যেগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ যেন সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে এজন্য আমি চেষ্টা করে যাব।
আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বারডেমের মহাপরিচালক অধ্যাপক এম কে আই কাইয়ুম চৌধুরী।
আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বারডেম একাডেমির পরিচালক অধ্যাপক মো. ফারুক পাঠান।
এ সময় তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশে বিভিন্ন বয়সী প্রায় ১ লাখেরও বেশি মানুষের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছিলাম। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ লোক জানেই না তাদের ডায়াবেটিস আছে। অর্থাৎ এ বিষয়টি আমাদের জন্য কতটা বেশি এলার্মিং। ওয়ার্ল্ড ডায়বেটিস সমিতির সমীক্ষায়ও প্রায় কাছাকাছি এমন ফল এসেছিল। তাই এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে জীবনযাপনের অভ্যাস আমাদের বদলাতে হবে। খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। দৈনিক ৭ ঘণ্টার কম ঘুম হলে ডায়বেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। কারো ডায়বেটিস ধরা পড়লে শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমিয়ে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এ চিকিৎসক।
এ সময় ডায়বেটিস সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশ ডায়বেটিস সমিতি বিশ্বের মধ্যে সব থেকে বড় ডায়বেটিস সমিতি। বিশ্বের কোনো ডায়বেটিস সমিতি আমাদের মত সরকারি সেবা দেন না। বেসরকারিভাবে এত বড় কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা সম্ভাব না, যদিও ডায়বেটিস সমিতি এটি করে দেখিয়েছে। এখানে আমরা সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
ডায়বেটিস সমিতির এ মহাসচিব বলেন, ৫০ ভাগের বেশি ডায়বেটিস রোগী জানেই না যে তাদের এ সমস্যাটা আছে। তাই ডায়বেটিস প্রতিরোধের এখনই সময়। কাজেই আমরা জনগণের কাছে এ বার্তাগুলো বিভিন্ন পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করছি। যাতে করে সাধারণ মানুষ ভালেো থাকার জন্য সতর্ক হয়ে জীবনযাপন করতে পারে। আমরা আশা করি বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সহযোগিতায় বাংলাদেশ ডায়বেটিস সমিতি আরও এগিয়ে যাবে।
আলোচনা সভায় বারডেমের ডেন্টাল সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরীর 'ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য' গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এ সময় তিনি বলেন, একটি বিষয় আমি সব সময় দেখেছি যে, যাদের মুখের রোগ আছে তাদের বেশির ভাগেরই ডায়বেটিস জনিত সমস্যা আছে। প্রতিটি ডায়বেটিস রোগীকে সচেতন করার জন্য আমি চেষ্টা করব আমার বইটি বিনামূল্যে দেওয়ার জন্য।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, ডায়াবেটিস হলেও মানুষ স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে। ডায়বেটিস মূলত নীরব ঘাতক। তাই নিয়ম মাফিক জীবনযাপন করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আমরা সারাদেশে ডায়বেটিস রোগীদের সচেতন করতে নানা প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছি।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৪
ইএসএস/জেএইচ