ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বসুন্ধরা সিটিতে সিপিআর প্রশিক্ষণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে বসুন্ধরা সিটিতে সিপিআর প্রশিক্ষণ ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে জীবন রক্ষাকারী কার্ডিও-পালমোনারি রিসাসিটেশন (সিপিআর) সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১৭ মার্চ) বেলা ১১টায় বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের গ্রাউন্ড ফ্লোরে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) আয়োজনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

হঠাৎ কারও কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে বা হৃদযন্ত্র বন্ধের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেলে সিপিআর দিয়ে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। প্রাথমিকভাবে কীভাবে সিপিআর দিতে হয় সে বিষয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী এবং দোকানীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় কর্মসূচিতে।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।  

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। সঞ্চালন করেন স্বাচিপের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব অধ্যাপক ডা. সোহেল মাহমুদ।  

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, দেশ স্বাধীন না হলে আমরা কেউ এখানে থাকতে পারতাম না। দেশ স্বাধীন না হলে আমার মতো সামন্ত লালের জীবন উজিরপুরেই শেষ হয়ে যেতো। আমাদের মধ্যে যদি ন্যূনতম মনুষ্যত্ববোধ থাকে তাহলে জাতির পিতাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা উচিত।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, আজকে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সিপিআর প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অত্যন্ত মহৎ কাজ। আমি স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদকে এমন আয়োজন করার জন্য ধন্যবাদ জানাই। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। যে কোনো বিষয়েই মানুষকে সচেতন করতেই হবে। আমি জেনেভায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিকেও বলেছি, আমাদের দেশে সচেতনতায় বেশি জোর দিতে হবে। সচেতন না করতে পারলে, আমি ১০টা বার্ন হাসপাতাল করেও শেষ করতে পারবো না। যে কোনো স্থানেই মানুষ অসুস্থ হতে পারে, সুতরাং সিপিআর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সিপিআর বিষয়ে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সঙ্গে সরকার কাজ করবে। এই কর্মসূচি আমরা যত করতে পারবো, ততই মানুষের উপকার হবে। চিকিৎসদের প্রধান কাজ হচ্ছে মানুষকে সচেতন করা।  

তিনি আরও বলেন, বেইলি রোডে যে দুর্ঘটনা, তাতে যারা মারা গেছেন তাদের শরীর পোড়েনি। তারা শ্বাসকষ্টে মারা গেছেন। সে সময় তাদের যদি উপযুক্ত চিকিৎসা দেওয়া যেত, তাদের অনেকেই কিন্তু বেঁচে যেতেন। সিপিআর শুধু ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে সারাদেশে কীভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করবো।  

স্বাচিপ জানায়, সারা বিশ্বে মৃত্যুর প্রধান কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। বিশ্বব্যাপী প্রতি বছর লাখে ৫৫-১১৩ জন, মোট সাড়ে তিন লাখ থেকে সাত লাখ মানুষের মৃত্যু হয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে। বাংলাদেশেও মৃত্যুর প্রধান কারণ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট মৃত্যুর ২১ শতাংশ হয় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার আগেই মস্তিস্কে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হয়ে যায়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার ১০-১১ শতাংশ মানুষকে বাঁচানো সম্ভব যদি সময় মতো সিপিআর দেওয়া যায়। চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন সাধারণ মানুষও বেসিক লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রোগীকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টজনিত ক্ষতি হতে রক্ষা করতে সহায়তা করতে পারেন। বিশ্বের অনেক দেশে রাস্তার নির্দিষ্ট স্থানে এইডি ডিভাইস থাকে, যা দিয়ে আরও বেশি কার্যকর সিপিআর দেওয়া যায়। যেখানে এইডি নেই সেখানে হাসপাতালে নিয়ে অ্যাডভান্সড লাইফ সাপোর্ট দেওয়া যায়।

চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে ডাকাডাকি করেও সাড়া না পেলে, তিনি শ্বাস কম নিলে বা একেবারেই না নিলে অথবা ধীরগতিতে দীর্ঘশ্বাস নিলে, কিংবা তার ধমনিতে পালস্ পাওয়া না গেলে ৯৯৯-এ কল দিতে হবে, ডাকতে হবে অ্যাম্বুলেন্স। চেষ্টা করতে হবে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নেওয়ার। এই সময় থেকে ডাক্তারের চিকিৎসা শুরুর মধ্যে ঘটে যেতে পারে মুত্যুর মত চরম ঘটনাও। অথচ ডাক্তার ডাকা, অ্যাম্বুলেন্স ডাকা, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ইত্যাদির পাশাপাশি তাকে সিপিআরের মাধ্যমে বেসিক লাইফ সাপোর্ট দিলে (শেখানো পদ্ধতিতে সিপিআর) তিনি ফিরে আসতে পারেন মুত্যুর মুখ থেকে।

পানিতে ডুবে গেলে, ইলেকট্রিক শক লাগলে, রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটলে, খাদ্যনালী বা শ্বাসনালীতে খাবার আটকে গেলে, আগুন লাগার ফলে অতিরিক্ত এবং বিষাক্ত ধোঁয়া ফুসফুসে গেলে, গুরুতর হার্ট অ্যাটাক হলেও বেসিক লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়।  

সিপিআর দেওয়ার নিয়ম
• প্রথমে রোগীকে চিৎ করে শোয়াতে হবে। তারপর, রোগীর পালস আছে কি না এবং শ্বাস নিচ্ছে কি না তা দেখতে হবে।
• একটি হাত প্রসারিত করে অন্য হাতের আঙুল দিয়ে লক তৈরি করতে হবে। হাতের তালুর উঁচু অংশটি বুকের পাজরের নিচের অংশে ঠিক মাঝ বরাবর স্থাপন করতে হবে ।
• প্রতি সেকেন্ডে দুইবার করে জোরে জোরে চাপ দিতে হবে। তবে, খেয়াল রাখতে হবে দুই হাত যেন ভাঁজ না হয়। এমনভাবে চাপ দিতে হবে যেন দেড় থেকে দুই ইঞ্চি দেবে যায়।
• এভাবে ৩০ বার চাপ দেওয়ার পর, রোগীর কপাল এবং থুতনিতে হাত দিয়ে মুখটি খুলতে হবে। এরপর মুখ দিয়ে মুখে জোরে জোরে দু’বার শ্বাস দিতে হবে।  
• আবার সেই একই পদ্ধতি অনুসরণ করে ৩০ বার বুকে চাপ দিয়ে দুবার শ্বাস দিতে হবে।
• এ পদ্ধতি কাজে দিলেও  এজন্য খুব বেশি সময় ব্যয় করা যাবে না, কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০২৪
আরকেআর/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।