ঢাকা, বুধবার, ১০ পৌষ ১৪৩১, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগী করার দাবি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪২ ঘণ্টা, মার্চ ৩১, ২০২৪
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন যুগোপযোগী করার দাবি

ঢাকা: বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করার দাবি জানিয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।   

রোববার (৩১ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ: অগ্রগতি ও করণীয়সমূহ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তারা এই দাবি জানান।

সম্মেলনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে যে তিনটি বিশেষ দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হল বর্তমান আইনকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করা। এই আলোকে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ যুগোপযোগী করে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উন্নীত করতে ছয়টি সুপারিশ জানানো হয়।

সুপারিশগুলো হলো, সব পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা; বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন ও খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা; এবং ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন মনে করে সংশোধনীটি পাশ হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যেমন বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত হবে সেইসঙ্গে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তিও আরও উজ্জ্বল হবে; এবং তামাকের ক্ষতি থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পথ সুগম হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্য এবং দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। জনস্বাস্থ্যের সার্বিক উন্নয়নে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, দেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া এবং সর্বসম্মতিক্রমে যে তামাক নিয়ন্ত্রণে যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করার দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, আমাদের দেশে তিন কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন। কর্মক্ষেত্রসহ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। আর তামাকজনিত বিভিন্ন রোগে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ফলে এই মৃত্যুর মিছিল কমাতে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে শক্তিশালী করা প্রয়োজন। কারণ বিদ্যমান আইনে কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়ে গেছে, যা তামাকের ভয়াবহ ছোবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে পারছে না।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। মূল প্রবন্ধে তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি। গবেষণার তথ্য মতে, বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মহামারীতে অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ী রোগীদের মৃত্যুর হার তিনগুণ বেশি ছিল এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে মৃত্যু হয়েছে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি রোগীর। পরোক্ষ ধূমপানের শিকার ব্যক্তির ক্ষেত্রেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সম্ভাবনা ৪০ শতাংশেরও বেশি ছিল। তাই আমরা স্পষ্টত বলতে পারি করোনার মত সংক্রামক মহামারী এবং অন্যান্য অসংক্রামক রোগের কবল থেকে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বিদ্যমান আইনকে শক্তিশালী করার বিকল্প নেই।

সংবাদ সম্মেলনটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, ৩১ মার্চ, ২০২৪
এমএমআই/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।