ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ, প্রয়োজন সচেতনতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৪
মাঙ্কিপক্স নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ, প্রয়োজন সচেতনতা

ঢাকা: মাঙ্কি (এম) পক্স বিষয়ে জরুরি অবস্থা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বুধবার (১৪ আগস্ট) জেনেভায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এ ঘোষণা দেন।

জনস্বাস্থ্যবিদ এবং চিকিৎসকরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এর প্রধান দুটি ধরন ক্লেড ১ এবং ক্লেড ২। দুটি ধরনের মধ্যে আবার সাব ভ্যারিয়েন্ট ‘এ’ এবং ‘বি’ রয়েছে।

কঙ্গোতে দীর্ঘদিন মাঙ্কিপক্স প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল ক্লেড ১ ভাইরাস, বর্তমানে ইউরোপে ছড়িয়েছে ক্লেড ২ ভাইরাস। ক্লেড ২ ভাইরাসে মৃত্যুহার কম। কিন্তু আফ্রিকায় যেটা ছড়িয়েছিল ক্লেড ১, সেটার মৃত্যুহার বেশি। এর মৃত্যুহার ১০০ জনের মধ্যে ৪ জন।

মাঙ্কিপক্স ভাইরাস আগে থেকেই ছিল, মাঝখানে কমে গিয়েছিল। সম্প্রতি আবার বাড়তে শুরু করেছে। আফ্রিকার কঙ্গোতেই আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কঙ্গোর আশপাশের দেশে ছড়িয়েছে। বর্তমানে ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও ছড়াচ্ছে।

মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ২০২২ সালের পর এমপক্স বা মাঙ্কিপক্স নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

বন্যপ্রাণী থেকে মাঙ্কিপক্স ভাইরাসের উদ্ভব হয়েছে। এটি প্রাণীবাহিত রোগ। কিন্তু বর্তমানে মাঙ্কিপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে ছড়াচ্ছে। মাঙ্কিপক্স ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়াচ্ছে শারীরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে। মাঙ্কিপক্স সংক্রমিত ব্যক্তিকে র্স্পশ করা, চুমু দেওয়া, যৌন সম্পর্ক থেকে এটি ছড়াতে পারে। সংক্রমিত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাসের খুব কাছাকাছি থাকলে সংক্রমণ ঝুঁকি থাকে। মাঙ্কিপক্স আক্রান্ত প্রাণীর কাছাকাছি গেলেও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সংক্রমিত ব্যক্তির ব্যবহার করা জিনিসপত্র থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।

মাঙ্কিপক্সের উপসর্গ বিষয়ে চিকিৎসকেরা বলছেন, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর, মাথা ও পেশিতে ব্যথা, শরীরে হাত পায়ে ব্যথা ইত্যাদি মাঙ্কিপক্সের প্রাথমিক কিছু উপসর্গ। এছাড়া মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠে। শরীরে ছোট ছোট অসংখ্যা ক্ষতচিহ্নের দেখা মেলে। ধীরে ধীরে সেই ক্ষত আরও গভীর হয়ে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

মাঙ্কিপক্স সতর্কতায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর হটলাইন চালু করেছে। কারও শরীরে মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ দেখা দিলে, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে কিংবা সংক্রমিত দেশ ভ্রমণের ২১ দিনের মধ্যে লক্ষণ দেখা দিলে ১৬২৬৩ ও ১০৬৫৫ নম্বরে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। পাশাপাশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা যাত্রীদের তাপমাত্রা পরীক্ষা শুরু হয়েছে।

মাঙ্কিপক্স বাংলাদেশের জন্য কতটা উদ্বেগের জানতে চাইলে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যেভাবে ঘোষণা দিয়েছে, সে অনুযায়ী আমাদের এখনো মাঝারি ধরনের (মডারেট) উদ্বেগ রয়েছে।

সচেতনতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, বিশেষ করে হাত ধোয়ায় অভ্যাসে গুরুত্ব দিতে হবে। কারও যদি কোনো লক্ষণ দেওয়া দেয়, তাহলে সাথে সাথে স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখবে এটা কোন ধরনের পক্স।

মাঙ্কিপক্স মোকাবিলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল) প্রোগামের লাইন ডিরেক্টার ডা. শেখ দাউদ আদনান বলেন, আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে, আরও কিছু কাজ চলমান রয়েছে।

চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাঙ্কিপক্স বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনদের সতর্ক এবং সচেতন থাকতে হবে। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টাতেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০২৪
আরকেআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।