ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বন্যায় বাড়বে রোগবালাই, অসতর্কতায় বিপদ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৪
বন্যায় বাড়বে রোগবালাই, অসতর্কতায় বিপদ

ঢাকা: ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। পানিবন্দি রয়েছে লাখ লাখ মানুষ।

বন্যায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মানুষের নানা স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হয়। শুধু যে বন্যার্ত মানুষই এ ঝুঁকিতে থাকে, তা নয় বরং বন্যায় উদ্ধারকর্মী, ত্রাণকর্মী, স্বাস্থ্যসেবাদানকারীও ঝুঁকিতে থাকেন।

চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্যা-পরবর্তী সময়ে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ অনেক বেড়ে যায়। বন্যায় নিরাপদ পানির অভাবে অনেকেই খাবার এবং দৈনন্দিন কাজে অনিরাপদ পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হন। এই দূষিত পানি ব্যাবহারের ফলে পানিবাহিত রোগ, যেমন ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড কিংবা হেপাটাইটিস রোগের সংক্রমণ বেড়ে যায়। তাই সবার আগে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।

বন্যার পর বাড়ির আশপাশে পানি জমে থাকে। এই পানি মশার বংশ বিস্তারে ভূমিকা রাখে। ফলে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো মশাবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই বন্যা পরবর্তী সময়ে মশা থেকে সাবধান থাকতে হবে। ঘরবাড়ি স্যাঁতসেঁতে হওয়ার কারণে ত্বকে ছত্রাকজাতীয় সংক্রমণ বেড়ে যায়।

বন্যা পরবর্তী রোগ বালাই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ডা. লেলিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগ যেমন, আমাশয়, ডায়রিয়া, টাইফয়েড, জ্বর, হেপাটাইটিস বা এ জাতীয় রোগ বেড়ে যায়। আবার বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরেও বিভিন্ন জায়গায় পানি আটকে থাকে। এই জমে থাকা পানিতে মশার বংশ বৃদ্ধির কারণে ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়ার মত রোগ বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।

তিনি আরও বলেন, বন্যার পানিতে চলাফেরা করা কারণে মানুষের শরীরে নানা জাতীয় চর্মরোগ দেখা দেয়। আমরা দেখি, বন্যার পরে খোসপাঁচড়া বা চুলকানি জাতীয় অসুখ বেড়ে যায়। এছাড়াও শিশুদের মধ্যে ভাইরাল নিউমোনিয়া বা ঠান্ডা জাতীয় রোগ বেশি দেখা যায়। এসময় পানিবাহিত রোগের বিষয়ে আমাদের বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

বন্যা পরবর্তী বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, বন্যা পরবর্তীতে সময়ে আমাদের সবচেয়ে ভয়াবহ রোগ হচ্ছে ডায়রিয়া এবং কলেরা। বন্যায় খাবার পানির উৎসগুলো দূষিত হয়ে পড়ে। বন্যা বা ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে পানির দূষণ আমাদের সবচেয়ে বড় আতংকের বিষয়। এছাড়াও বন্যাকালীন পানিবন্দি লোকেরা খাবার কম পাওয়ার ফলে শরীরে পুষ্টি যোগান কমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়। বন্যাকালীন স্বাভাবিক রান্নাবান্না কঠিন হয়ে যাওয়ার ফলে মানুষ বাসি ও পচা খাবারও অনেক সময় খেয়ে থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় বাচ্চা এবং বয়স্করা সহজেই বিভিন্ন ধরনের রোগে সংক্রমিত হয়। বন্যা পরবর্তী সময়ে এসব বিষয় আমাদের অনেক বেশি চিন্তার কারণ।

তিনি আরও বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে আমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসা নিশ্চিত করা। যখনই বন্যার পানি নেমে যাবে আমাদের যারা পাবলিক হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে কাজ করেন তাদের উচিত হবে বন্যা উপদ্রুত এলাকার টিউবওয়েলগুলোকে জীবাণুমুক্ত করা। জীবাণুমুক্ত করার আগে পানি পান না করা। ভালো হয় তাদের জন্য নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। অন্তত ১০-১৫ দিন বিভিন্ন ট্যাংকারে করে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় খাওয়ার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। এটা করলে আমরা অন্তত ব্যাপকভাবে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারব। পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করতে হবে।

আইইডিসিআরের সাবেক এই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, আরেকটা বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ডায়রিয়া হলে মানুষ যেন সাথে সাথে স্যালাইন খেতে পারে, সেজন্য উপদ্রুত এলাকায় পর্যাপ্ত পরিমাণ স্যালাইন সরবরাহ করা। এক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন কাউন্সিল অফিসের মাধ্যমে প্রচুর ওরস্যালাইন সরবরাহ করতে হবে। আমাদের মেম্বার, কাউন্সিলর, শিক্ষক মসজিদের ইমাম, তাদের এসব কাজে যুক্ত করে, তাদের কাছেও প্রয়োজনে পর্যাপ্ত স্যালাইন দিয়ে রাখতে হবে। মানুষ যেন সহজেই ওরস্যালাইন পায়, সেই ব্যবস্থা করা। এর পাশাপাশি আমাদের অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন হবে। কমিউনিটি ক্লিনিক পর্যায়ে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে একটি গাইডলাইন তৈরি করে দিতে হবে। উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতালগুলোতে আইভি ফ্লুইড যথেষ্ট পরিমাণে থাকতে হবে। যথেষ্ট পরিমাণে কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই দেওয়া।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে আরও কিছু রোগ, যেমন শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, নিউমোনিয়া, এজমা এসব হতে পারে। এসব রোগের বিষয়ও আমাদের প্রস্তুতি থাকতে হবে। বন্যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগ হতে পারে। এজন্য আমাদের এন্টিহিস্টামিন ওষুধ ও স্কিনে দেওয়ার জন্য নানা ধরনের লোশনেরও ব্যবস্থা থাকতে হবে। এন্টিফাঙ্গাল ওষুধ এবং মলম সরবরাহ করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর উল্লেখিত ব্যবস্থা নিলে বন্যা উপদ্রুত এলাকার মানুষকে বড় ধরনের স্বাস্থ্য বিপর্যয় থেকে আমরা রক্ষা করতে পারব।

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০২৪
আরকেআরে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।