ঢাকা: ডায়াবেটিস ক্যানসারের চেয়েও বেশি ভয়ংকর। প্রতি বছর দেশে পাঁচ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ব পডিয়াট্রি দিবস উপলক্ষে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আয়োজিত এক সেমিনারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোবহানবাগে ড্যাফোডিল প্লাজার গ্রিন গার্ডেনে এ সেমিনারের আয়োজন করে পডিয়াট্রি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের সাবেক পরিচালক অর্থোপেডিক সার্জন অধ্যাপক এস কে নুরুল আলম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটির (বিইএস) সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান, বারডেম জেনারেল হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ফিরোজ আমিন, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজের ভাস্কুলার সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক জি এম মকবুল হোসাইন।
অন্যান্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গ্রিন লাইফ হাসপাতালের এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট ড. তানজিলা হোসাইন, ডায়াবেটিক ফুড কেয়ারের (বিইএস) কো-অর্ডিনেটর ড. এস এম মহিউদ্দিন, বিইএস এর সাধারণ সম্পাদক ড. শাহজাদা সেলিম। সেমিনারে কি-নোট স্পিকার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের পডিয়াট্রিস্ট ও প্লাস্টিক সার্জন ড. মোরশেদ উদ্দিন আকান্দ।
কি-নোট স্পিকারের বক্তব্যে ড. মোরশেদ উদ্দিন আকান্দ বলেন, ডায়াবেটিস নিয়ে আগের তুলনায় সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু ডায়াবেটিসের কারণে যে ক্ষতিগুলো হয়, সেই ক্ষতিগুলো সঠিকভাবে শনাক্ত করে প্রতিরোধের বিষয়ে আমরা এখনো সচেতন নই। ডায়াবেটিসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় পায়ে। ডায়াবেটিসে পায়ের নার্ভ ও রক্তনালীতে ইনফেকশন হয়ে ফুট আলসার হয়। এ ফুট আলসার ডায়াবেটিসের একটি প্রধান লক্ষণ। যা ‘ডায়াবেটিক ফুট’ নামে সারা বিশ্বে পরিচিত। বাংলাদেশে এ বিষয়ে এখনো আলাদাভাবে কোনো সচেতনতা তৈরি হয়নি।
দুই বছর আগের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে প্রতি বছর মোট জনসংখ্যার কম-বেশি পাঁচ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে ১২ শতাংশ রোগীর পায়ে ক্ষত হয়। পায়ে ক্ষত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬০ শতাংশের চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। যার ৮৫ শতাংশের পায়ের নিচের অংশ কেটে ফেলতে হয় এবং এক পা কেটে ফেলার পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০ শতাংশ শঙ্কা থাকে দ্বিতীয় পায়ে ক্ষতি হওয়ার। এমনকি ওই ব্যক্তির আয়ুও পাঁচ বছর কমে যায়। ডায়াবেটিসের কারণে পায়ে যে ইনফেকশন হয় এটা ব্রেস্ট ক্যানসার, প্রোস্টেট ক্যানসারের চেয়েও ক্ষতিকর। তাই ডায়াবেটিসে অঙ্গহানি রোধে প্রয়োজন প্রচার ও সচেতনতা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক এস কে নুরুল আলম বলেন, আমাদের দেশে অনেকে ডায়াবেটিস হলে সেটি প্রকাশ করতে চায় না। তারা ডায়াবেটিস চিকিৎসায় হারবাল ওষুধ সেবন করে। এতে তারা তাদের রোগটিকে আরও বড় পর্যায়ে নিয়ে যান। এটি যেন না হয়, আমাদের সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আমাদের সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে এবং অন্যদেরও সচেতন করতে হবে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা সবাই জানি, ডায়াবেটিস মহামারির আকারে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এর কারণে অনেক ভয়াবহ রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। তাই আমাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এর জন্য প্রথমে নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করে সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এরপরও যদি ডায়াবেটিসের কারণে পায়ে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এই মেসেজটি আমাদের সমাজে ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে ডায়াবেটিসের কারণে কারো অঙ্গহানি না হয়। সঠিক সময়ে মানুষ সঠিক চিকিৎসাটা করাতে পারে।
অধ্যাপক ফিরোজ আমিন বলেন, ডায়াবেটিস ফুটের কারণে অনেক সময় রোগীর পায়ের বিভিন্ন অংশ কেটে ফেলতে হয়। জীবন বাঁচাতে অনেক সময় পুরো পা-ই কেটে ফেলতে হয়। এসব রোগীরা পা না থাকার কারণে পরবর্তীতে দুর্ভোগে পড়েন। কিন্তু এসব রোগীদের জন্য আলাদা জুতা বা প্রসফেটিকস আছে। যা সম্পর্কে আমাদের বেশিরভাগ মানুষের ধারণা নেই। এসব রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দিতে হলে বা তাদের জীবনযাপন সহজ করতে হলে এসব বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তুলতে হবে।
অধ্যাপক জি এম মকবুল হোসাইন বলেন, ডায়াবেটিস সব রোগের মা। ডায়াবেটিস সম্পর্কে সবার আগে থেকে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে অঙ্গহানির পাশাপাশি জীবনের ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০২৪
এসসি/আরআইএস