ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

ডেঙ্গুতে পাঁচ শতাধিক মৃত্যু, ৭০ শতাংশই ঢাকায়

রেজাউল করিম রাজা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৫, ২০২৪
ডেঙ্গুতে পাঁচ শতাধিক মৃত্যু, ৭০ শতাংশই ঢাকায়

ঢাকা: ডিসেম্বরে শীতের আবহের মধ্যেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ রয়েছে। ডেঙ্গুতে প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলতি বছরে জানুয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১০৫৫ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের, ফেব্রুয়ারিতে আক্রান্ত হয়েছে ৩৩৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের, মার্চ মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩১১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের, এপ্রিলে আক্রান্ত হয়েছে ৫০৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে দুইজনের।

 মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৬৪৪ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১২ জনের, জুন মাসে আক্রান্ত হয়েছে ৭৯৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে আট জনের, জুলাই মাসে আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২৬৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের, আগস্ট মাসে আক্রান্ত হয়েছে ছয় হাজার ৫২১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের। সেপ্টেম্বর মাসে ১৮ হাজার ৯৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন এবং ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ হাজার ৮৭৯ জন, মারা গেছেন ১৩৫ জন। নভেম্বর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৬৫২ জন, মারা গেছেন ১৭৩ জন।

 ডিসেম্বর মাসে প্রথম চার দিনেই আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৮৪৫ জন এবং মারা গেছেন ২১ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সারা বছরব্যাপী এডিস মশা প্রজনন এবং বংশবিস্তার করছে। মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর সমন্বিত জাতীয় উদ্যোগের অভাব ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতার ঘাটতর ফলে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা।

চলতি বছরে ডেঙ্গুতে ডিসেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যুবরণ করেছেন ৫০৯ জন।  

সিটি করপোরেশন এবং বিভাগভিত্তিক মৃত্যুর তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৫৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগের সিটি করপোরেশনের ভেতরে একজন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৯ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৩ জন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) সাতজন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) দুইজন মারা গেছে।  

একই সময়ে ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪৪ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ৯৩ জন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২১৩ জন মারা গেছেন। ঢাকা সিটির করপোরেশনের বাইরে এবং ভেতরে মোট ৩৫০ জন মারা গেছেন। অর্থাৎ চলতি বছরে ডেঙ্গুতে মোট মারা যাওয়া রোগীর প্রায় ৭০ শতাংশই ঢাকা বিভাগের।

ঢাকায় ডেঙ্গুতে অধিক মৃত্যুর কারণ হিসেবে চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় প্রায় দুই যুগ থেকে এডিস মশার সংক্রমণ হচ্ছে। যারা ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছে তাদের অধিকাংশই ডেঙ্গুতে একাধিকবার আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত কারও কারও ক্ষেত্রে হয়ত কোনো লক্ষণ ছিল না, সে যখন আবার আক্রান্ত হচ্ছে, তখন তার মৃত্যু ঝুঁকি বেশি।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলছেন, দেশের অন্যান্য স্থানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও অনেকেই উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় এসে মারা যাচ্ছেন। ঢাকার হাসপাতাল চিকিৎসা নিতে এসে মারা যাওয়া রোগীও ঢাকার হিসেবে গণনা করা হচ্ছে, ফলে ঢাকায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।

বুধবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত ‘মনসুন এডিস সার্ভে-২০২৪’ এর ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৫৬টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের পরিমাণ নির্দিষ্ট মানদণ্ডের চেয়ে বেশি রয়েছে।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাসার বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের পদক্ষেপ পর্যাপ্ত ছিল না। মশা নিয়ন্ত্রণে যেসব পদক্ষেপ নেওয়ার কথা, তা নেওয়া হয়নি। ফলে মশা ও রোগী দুটোই বেড়েছে। রোগী বাড়ার কারণে মৃত্যুও হচ্ছে। এর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনেরও বিষয় আছে। আশা করি, ডিসেম্বর মাসে রোগী কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৪৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৫, ২০২৪
আরকেআর/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।