ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এলাকা হওয়ায় ডাক্তার নার্সরা অনেক আন্তরিক

মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১২
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এলাকা হওয়ায় ডাক্তার নার্সরা অনেক আন্তরিক

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার ১৮ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় গুরুত্বপর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল।

১৯৮০ সালে মাত্র ৫০ শয্যা নিয়ে যাত্রা শুরু করে এ হাসপাতালটি।

পরবর্তীতে রোগীর চাপ ও মানুষের চিকিৎসা চাহিদার কথা বিবেচনা করে ১৯৯৭ সালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালকে ১শ শয্যায় উন্নীত করা হয়। তবে কাগজে কলমে ১শ শয্যা উন্নীত করা হলেও হাসপাতালটি চলছে ৫০ শয্যার জনবল দিয়ে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষ কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

বর্তমানে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার মান উন্নত হওয়ায় সব শ্রেণীর রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আউটডোর, ইনডোর এবং জরুরি বিভাগের মাধ্যমে বর্তমানে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। রোগীদের পরীক্ষার জন্য রয়েছে এক্স-রে বিভাগ ও রক্ত সঞ্চালনা বিভাগ। অস্ত্রপচার ও শৈল বিভাগের অধীনে রয়েছে ২টি আপারেশন থিয়েটার। শিশুদের জন্য রয়েছে একটি শিশু বিভাগ।

বর্তমানে হাসপাতালে পুরুষ সার্জারি ও মেডিসিন, মহিলা সার্জারি ও মেডিসিন, গাইনি, শিশু ওয়ার্ড, ডায়রিয়া ওয়ার্ড ও সিসিইউ ওয়ার্ডসহ কয়েকটি ওয়ার্ডে প্রতিদিন আবাসিক বেড, ফ্লোর, কেবিনসহ প্রায় ২ থেকে ৩ শতাধিক রোগী থাকছেন। আর এতসব রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম থেকে হয় এ হাসপাতালের নার্সদের।

এ হাসপাতালের ২৭ জন স্টাফ নার্স রয়েছে। তাছাড়া সিফট অনুযায়ি ডিউটি থাকার কারণে এক সঙ্গে সব নার্সের ডিউটি করা সম্ভব হয়না। এছাড়া হাসপাতালে রয়েছে সুইপার সংকট। ৫০ শয্যা হাসপাতাল থাকাকালীন ৭ জন সুইপার নিয়োগ দেওয়া হয়। তা এখন দাড়িয়েছে ৫ জনে। রোগী বাড়লেও, কমে গেছে সুইপার। ফলে হাসপাতালে পরিষ্কার পরিচ্ছনতা নিয়ে রোগী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।

হাসপাতালে রয়েছে দুটি এম্বুলেন্স, ১৮টি ট্রলি, ১০টি হুইল চেয়ার ও ৫১টি অক্সিজেন সিলিন্ডার। চিকিৎসকের ২৫টি পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ২১ জন, বাকি ৪টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে।

রোগী বৃদ্ধির ফলে চাহিদা মতো চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। তার পরও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নিজ জেলা হওয়ায় চিকিৎসক ও নার্সরা আগের তুলনায় কিছুটা আন্তরিক।

এসব ব্যাপারে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. শরীফ জাহাঙ্গীর আাতিক বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে রোগীর সংখ্যা আউটডোরে প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার থেকে ১২শ জন। আর ইনডোরে রোগী সংখ্যা ২৫০ থেকে ২৭০ জন। এত কম জনবল দিয়ে এত রোগীর চিকিৎসা সেবা দিতে চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

তিনি জানান, হাসপাতালে বর্তমানে সেবার মান বেড়েছে, সেই সঙ্গে মানুষের প্রত্যাশাও বেড়েছে। সাতক্ষীরা সদর হাসাপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রাথমিক কাজের অনেক অগ্রগতি হয়েছে। আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং সব প্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা থাকার কারণে জনগণ উৎসাহের সঙ্গে এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন। কার্ডিয়াক কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) মানুষ এখন প্রচুর সেবা পাচ্ছে। সাধারণ হৃদরোগীদের এখানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

তিনি জানান, ২০১৩ সালের জুন মাস থেকে সাতক্ষীরা হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর প্রচেষ্টায় সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলে এবং বাঁকাল ব্রিজের কাছে নির্মাণাধীন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ পুরো দমে চালু হলে সাতক্ষীরার মানুষের চিকিৎসা সেবার মান অনেকগুণে বেড়ে যাবে।

কিছু সমস্যা থাকলেও সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল সাতক্ষীরাবাসীর স্বাস্থ্য সেবা পূরণে অনেকটা সক্ষম হচ্ছে বলে মনে করেন সিভিল সার্জন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট (প্যাথলজিস্ট) ডা. মুহাম্মাদ দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের প্যাথলজির সবচেয়ে বড় সদস্যা জনবল সংকট। মাত্র একজন টেকনিশিয়ান দ্বারা হাসপাতালের সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়।

তবে হাসপাতালে বর্তমানে সব ধরনের পরীক্ষা ব্যবস্থা থাকার কারণে রোগীর চাপ অনেক বেড়েছে। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় অনেক সময় তাদের দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। রোগীদের সহযোগিতা পেলে আরও বেশি সেবা দেওয়া সম্ভব হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের নার্সিং সুপার ভাইজার রাশিদা বেগম জানান, ৫০ বেডের জনবল নিয়ে আমরা সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

তবে ওয়ার্ডের গেটে লোক না থাকায় ভিজিটর কমানো যায় না। রোগীর সঙ্গে ভিজিটর বেশি থাকায় আমরা অনেক সময় সঠিকভাবে সেবা দিতে পারি না।

আবার খাবারের সরবারহ ১শ বেডের থাকে রোগী থাকে ২৫০ এর বেশি। এজন্য প্রতিনিয়ত তাদের সমস্যার সম্ম‍ুখীন হতে হয়। তবে সমস্যা এবং জনবল কম থাকলেও সেবার দিক দিয়ে সফল বলে দাবি করেন তিনি।

মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও গ্রাফি) আব্দুল হালিম বাংলানিউজকে জানান, রোগী বেশি, জনবল কম। সম্প্রতি ডিজিটাল এক্স-রে দেওয়া হলেও এর ফ্লিম সরবারহ কম থাকায় অনেক সময় রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ডিজিটাল ফ্লিম সরবারহ বৃদ্ধি করলে আরও উন্নত সেবা প্রদান করতে তারা সক্ষম বলে জানান।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ অক্টোবর ২৩, ২০১২
সম্পাদনা: মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।