ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বছরে বিশ্বের এক কোটি ৭১ লাখ লোক মারা যান হৃদরোগে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২, ২০১২
বছরে বিশ্বের এক কোটি ৭১ লাখ লোক মারা যান হৃদরোগে

ঢাকা: প্রতি বছর বিশ্বে এক কোটি ৭১ লাখ লোক হৃদরোগে মারা যান, যার মধ্যে ৮২ শতাংশ মৃত্যু হয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের। উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি হৃদরোগ, বাতজ্বর ও বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ, জন্মগত হৃদরোগসহ সব ধরনের হৃদরোগ আমাদের দেশেও বিদ্যমান।



রোববার রাজধানীতে এনএইচএফসিসিডি’২০১২ শীর্ষক হৃদরোগের ওপর এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের দিনব্যাপী কর্মশালায় এ তথ্য জানান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা। শনিবার দু’দিনব্যাপী এ সম্মেলন শুরু হয়ে শেষ হয়েছে রোববার।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট আট বছর ধরে নিয়মিত হৃদরোগের ওপর জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করে যাচ্ছে, যা ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন কনফারেন্স অন কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজেস (এনএইচএফসিসিডি)  নামে পরিচিত।   এরই ধারাবাহিকতায় ২০১২ সালের এনএইচএফসিসিডি অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয় শনিবার সকাল ১০টায়।

উল্লেখ্য, সম্মেলনে কানাডা, জার্মানি, ভারত, জাপান, শ্রীলংকা, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ১৯ জন খ্যাতনামা হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জনসহ দেশি-বিদেশি ৭৫০ জন চিকিৎসক অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৮৫ জন বিশেষজ্ঞ তাদের গবেষণালদ্ধ প্রবন্ধ উপস্থাপন এবং বিভিন্ন কার্ডিয়াক প্রসিডিউরের রেকর্ড করা সিডি প্রদর্শন করেন।
 
এছাড়া ভারতের দিল্লির ‌এসকট হার্ট ইনস্টিটিউটের ক্যাথল্যাব থেকে একটি প্রসিডিউর (এনজিওপ্লাস্টি ও স্টেনটিং) স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অডিটোরিয়ামে সম্প্রচার করা হয়।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের ক্যাথল্যাব থেকেও সরাসরি সম্প্রচারিত হয় একই ধরনের প্রসিডিউর।

এ সম্মেলনের মাধ্যমে উদ্বোধন করা হয় হৃদরোগ চিকিৎসার অত্যাধুনিক পদ্ধতিগুলোও। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনাও হয়। সম্মেলনের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম ব্যবহৃত হলো সর্বাধুনিক অনুমোদিত স্টেন্ট প্রযুক্তি Bio-degradable Scaffold।

এছাড়া ভালভের রোগ Mitral Regurgitation’র ইন্টারভেনশন নির্ভর আধুনিক চিকিৎসা Mitralclip, অত্যাধুনিক Dedicated Bifurcation স্টেন্ট প্রযুক্তি, নিয়ন্ত্রণের অযোগ্য উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা Renal Denervation  (যা দক্ষিণ এশিয়ায় এই হাসপাতালে প্রথম শুরু হয়েছিল), Minimal Invasive Valve Surgery ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয় সম্মেলনে।

এছাড়া রোববার দিনব্যাপী কর্মশালায় দেশি-বিদেশি চিকিৎসকরা জটিল করোনারি ইন্টারভেনশন ও কার্ডিয়াক সার্জারিতে অংশ নেন।

এর মাধ্যমে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং পদ্ধতি সম্পর্কে  অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা জ্ঞান লাভের পাশাপাশি একে অপরের সঙ্গে অভিজ্ঞতা আদান-প্রদানের সুযোগ পান। ফলে, আমাদের দেশের তরুণ চিকিৎসক ও রোগী সকলে উপকৃত হবেন। এটা দেশের চিকিৎসাক্ষেত্রের উন্নতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

কর্মশালার বিভিন্ন পর্বে বিশেষজ্ঞরা জানান, বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে হৃদরোগ একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।   প্রতি বছর বিশ্বে এক কোটি ৭১ লাখ লোক এ রোগে মারা যান, যার মধ্যে ৮২ শতাংশ মৃত্যু হয় নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের।

উচ্চ রক্তচাপ, করোনারি হৃদরোগ, বাতজ্বর ও বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ, জন্মগত হৃদরোগসহ সব ধরনের হৃদরোগ আমাদের দেশে বিদ্যমান।

বিশেষজ্ঞরা জানান, সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ জনের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ১০ শতাংশের মধ্যে করোনারি বা ইস্কিমিক হৃদরোগ, প্রতি এক হাজারে ১ দশমিক ২ জনের মধ্যে বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ ও প্রতি হাজারে আটজন নবজাতক শিশুর জন্মগত হৃদরোগ রয়েছে।

তারা সুপারিশ করেন, এ রোগগুলোর চিকিৎসা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা জটিল এবং ব্যয়বহুল হওয়ায় প্রতিরোধের দিকে আমাদের জোর দেওয়া প্রয়োজন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এমপি। স্বাগত বক্তব্য দেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব, জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সভাপতি বিচারপতি চৌধুরী এ টি এম মসউদ।

প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ একটি অলাভজনক, সেবামূলক, সরকার কর্তৃক সাহায্যপুষ্ট ও অনুমোদিত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

প্রধানমন্ত্রী  ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক।

প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন (ডাব্লিউএইচএফ) এবং ওয়ার্ল্ড হাইপারটেনশন লীগের (ডাব্লিউএইচএল)  সদস্য। এছাড়া ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন (ডাব্লিউএইচও)  প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

এ প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় সরকার, দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যক্তিবর্গের সাহায্য-সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট এই ফাউন্ডেশনের একটি প্রকল্প।

বর্তমানে হাসপাতালটি ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট একটি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন আধুনিক হৃদরোগ হাসপাতাল হিসেবে কাজ করছে।

এ হাসপাতালে হৃদরোগের সব ধরনের সর্বাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসা করার সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। হাসপাতালটি সেবার মান দিয়ে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে, অনেক রোগী বিদেশে না গিয়ে দেশেই পাচ্ছেন হৃদরোগের চিকিৎসা।

এখানে ৩০ শতাংশ দরিদ্র হৃদরোগীর বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।  

এ হাসপাতালে ১৯৯৯ সাল থেকে ২০১২ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত মোট ৬৪৪৩৮ টি ইন্টারভেনশনাল প্রসিডিউর এবং ১৪৮৩৯টি কার্ডিয়াক সার্জারি সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে এই ফাউন্ডেশনের এফিলিয়েটেড বডি রয়েছে ৩৩টি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১২
সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম ও আসিফ আজিজ, নিউজরুম এডিটর, অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।