ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

পপুলারে হয়রানি, আইসিইউয়ে নার্স ব্যস্ত আড্ডায়

মাজেদুল নয়ন ও মফিজুল সাদিক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৩
পপুলারে হয়রানি, আইসিইউয়ে নার্স ব্যস্ত আড্ডায়

ঢাকা: দেশের অন্যতম বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র পপুলার ডায়াগনস্টিক ও হাসপাতালে হয়রানি-বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা লোকজন। অতিরিক্ত টাকা খরচ করেও তারা পাচ্ছেন না মানসম্মত চিকিৎসা।



ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করছেন, রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা ধানমণ্ডির এই হাসপাতালে কর্মরত বেশির ভাগ নার্স অশিক্ষিত ও অদক্ষ। হাসপাতালের বাইরে এবং এমনকি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রেও (আইসিইউ) হয়রানির শিকার হচ্ছেন তারা।

আইসিইউয়ে অশিক্ষিত ও অদক্ষ নার্সদের ভিড় লক্ষণীয়। এখানে দল বেঁধে আড্ডা মারা, আমের আচার খাওয়া, মোবাইলফোনে গভীর রাতে উচ্চস্বরে গান শোনা ইত্যাদি চলে হররোজ। অথচ অত্যন্ত সংকটাপন্ন রোগীকেই কেবল এখানে রাখার জন্য পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। এজন্য অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়।

পপুলারে আইসিইউয়ে প্রতিদিনের বেড ভাড়া ৩০ হাজার টাকা। অথচ এই মানের চিকিৎসা দূরে থাক, সাধারণ সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

পুরান ঢাকার কলতাবাজার থেকে ধানমণ্ডি পপুলার হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসেন ফিরোজা আহমেদ। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

চোখের চিকিৎসায় গত ১৪ এপ্রিল পপুলারের আইসিইউতে নেওয়া হয় ফিরোজাকে। আইসিইউ হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ ও শব্দ দূষণমুক্ত কক্ষ। সেদিন রাতে নার্সরা নিজেদের মধ্যে খোশগল্পে ব্যস্ত ছিলেন, আম কেটে খাচ্ছিলেন। এমন সময়ই ফিরোজা তাদের কাছ থেকে পানি চান, এতে তাদের গল্পে ‘ব্যঘাত‍’ ঘটে। তারা ভীষণ রাগারাগি করে, বিরক্ত হয়।

ভুক্তভোগী ফিরোজার অভিযোগ, তিনি পানি চাইলে তার বদলে দেওয়া হয় স্পিরিট। আর এটা দিয়ে তিনি চোখ ধুয়ে ফেলেন। এরপরই চোখ ফেটে রক্ত বের হতে থাকে তার।

এ বিষয়ে রোগীর পরিবার থেকে অভিযোগ জানালে প্রথমে নার্সের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। পরে আবার হঠাৎ করে রোগীকে আইসিইউ থেকে সাধারণ ওয়ার্ডে স্থানান্তর করা হয়। অথচ এ ঘটনার জন্য দায়ী করা ফিরোজাকেই।

ফিরোজা আহমেদের মেয়ে শাহনাজ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “আমার মা গভীর রাতে মুখ ধোয়ার পানি চেয়েছিলেন। এরপর তারা রেগেমেগে আমার মাকে হাত ধোয়ার স্পিরিট দেন। এর ফলে আমার মায়ের চোখ ফেটে রক্ত বের হয়। পপুলারের আইসিইউতে যে ধরনের নার্স নিয়োগ দেওয়া দরকার, তা দেয়নি। যদি ভালো নার্স থাকত তাহলে তারা কখনও আইসিইউ রুমে আমের আচার খেত না এবং মোবাইলফোনে উচ্চস্বরে গানও শুনতো না। আমার মায়ের সঙ্গে এমন আচরণ করতো না তারা। আমার মায়ের চোখেরও সমস্যা হতো না। এই বিষয়ে হাসপাল কর্তৃপক্ষকে বললে তারা হাসপাতাল ছেড়ে চলে যেতে বলে। নার্সকে বাদ দিযে উল্টো আমাদের দোষারোপ করে। ”

কয়েকদিনেই ফিরোজা আহমেদের চিকিৎসা বাবদ আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়। দুদিনে আইসিইউর জন্য ৬০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়। অথচ নার্সদের নামে অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা উল্টা রোগীকে দোষারোপ করা হয়।

সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ও পপুলারের দায়িত্বরত চিকিৎসক নারায়ণ কুণ্ডু রোগীকে সাধারণ ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেন।

এ প্রসঙ্গে ডা. নারায়ণ কুণ্ডু বাংলানিউজকে বলেন, “আইসিইউ রুমে কেউ রোগীকে অকারণে রেখে দেয় না। তাছাড়া আইসিইউ রুমের ভেতরে কি হয়, না হয় তা আমার দেখার বিষয় না। ”
 
এ ব্যাপারে হাসপাতালের ম্যানেজার ম্যানেজার সুকুমার সাহার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, “রোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আইসিইউ রুমের নার্সদের বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি। যেসব নার্স আইসিইউ রুমের নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে তাদের কারো ৭ দিন, কারো ১০ দিন করে বেতন কেটে নিয়েছি। আমাদের সরাসরি অ্যাকশন। ” মানুষ দিয়ে মানুষ চালানো কঠিন কাজ বলেও মন্তব্য করেন সুকুমার সাহা।

বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৩
এমআইএস/এমএন/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।