ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস

চট্টগ্রামে ‍চাহিদার অর্ধেক পূরণ করছে স্বেচ্ছা রক্তদাতারা

সুজন ঘোষ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১২ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৩
চট্টগ্রামে ‍চাহিদার অর্ধেক পূরণ করছে স্বেচ্ছা রক্তদাতারা

চট্টগ্রাম: বন্দরনগরী চট্টগ্রামে রক্তের চাহিদার অর্ধেকের বেশি পূরণ করছে স্বেচ্ছা রক্তদাতারা। মূলত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নানা ধরণের সচেতনতামূলক প্রচারণার কারণে বর্তমানে মানুষ স্বেচ্ছায় রক্ত দানে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।

তবে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের ভিড়ে পেশাদার ও মাদকাসক্ত রক্তদাতাদের সংখ্যাও কম নয়।

এছাড়া বিভিন্ন উপজেলার সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে রক্ত পরিসঞ্চলন বিভাগ না থাকায় এসব অঞ্চলের মানুষদেরকে জটিল অপারেশনের জন্য ছুটতে হচ্ছে নগরীর হাসপাতালগুলোতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ব্যাগের রক্তের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ দৈনিক প্রয়োজন হয় ৩০০ থেকে সাড়ে তিনশ ব্যাগ রক্তের। এ চাহিদার দু-তৃতীয়াংশ রক্ত দান করে থাকেন স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা। আবার রোগীকে বাঁচাতে আত্মীয়-স্বজনও দিচ্ছেন রক্ত।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চলন বিভাগ, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে পরিচালিত সন্ধানী ব্লাড ব্যাংক এবং লায়ন্স ব্লাড ব্যাংক বন্দরনগরী চট্টগ্রামে স্বেচ্ছায় রক্তদান কার্যক্রমের সমন্বয় করে থাকে।

‘রক্ত দিন, একটি প্রাণ বাঁচান’ এ স্লোগানে বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। চট্টগ্রামের স্বেচ্ছা রক্তদাতারা রক্ত দানের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখছেন হাজার হাজার মানুষকে।

জানা গেছে, চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চলন বিভাগ দৈনিক ৮০-৯০ ব্যাগ, রেড ক্রিসেন্ট ৪০-৫০ ব্যাগ, লায়ন্স ১৫-২০ এবং সন্ধানী ১৫-২০ ব্যাগ রক্ত সরবরাহ করে থাকে। এছাড়া কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনও রক্ত সরবরাহ করে থাকে। মূলত স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা এসব কেন্দ্রে রক্ত দান করে থাকেন।

চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চলন বিভাগের প্রধান ডা. সৈয়দ আহমদ বলেন, ‘চমেক হাসপাতাল ও বাইরের বিভিন্ন ক্লিনিক-হাসপাতালের রোগীদের জন্য রক্তের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন ১০০ ব্যাগের উপর রক্তের চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারি ৮০-৯০ ব্যাগ রক্ত। ’

পেশাদার রক্তদাতাদের প্রসেঙ্গ ডা. সৈয়দ আহমদ বলেন, ‘নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চলন আইন-২০০২ এর আলোকে কোনো মাদকাসক্ত ও পেশাদার ব্যক্তির দেয়া রক্ত যাতে গ্রহণ করা না হয়, সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। চমেক হাসপাতালে এ নির্দেশনা মেনে চলা হয়। ’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, সবচেয়ে বেশি রক্ত সংগ্রহ করা হয় জাতীয় দিবস এবং বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে।

নগরীর ফাতেমা রেড ক্রিসেন্ট ব্লাড কেন্দ্রের পরিচালক মিনহাজ উদ্দিন তাহের জানান, বন্দরনগরী চট্টগ্রামে চাহিদার অর্ধেকের বেশি রক্ত সরবরাহ করে থাকে চমেক হাসপাতাল, রেডক্রিসেন্ট ও সন্ধানী।

সন্ধানীর চমেক শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক বিবেক দেব বলেন, ‘আমাদের এখানে প্রতিদিন ৩০-৫০জনের জন্য রক্ত নিতে আসেন আত্মীয়-স্বজনরা। আমরা ১৫-২০ ব্যাগ সরবরাহ করতে পারি। এছাড়া এখানে প্রতিদিন ১০-১২ জন স্বেচ্ছায় রক্ত দেন। ’

সন্ধানী চমেক শাখা প্রতিবছর প্রায় আট হাজার ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে থাকে বলে জানান তিনি।

মাদকাসক্ত ও পেশাদার রক্তদাতাদের প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এ এম এম মিনহাজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘হাসপাতাল এলাকায় তাদের একটি চক্র গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এসব পেশাদার রক্তদাতা অর্থের বিনিময়ে মাসে দু-তিনবার রক্ত দিয়ে থাকে। ফলে তাদের রক্ত রোগীদের কোনো কাজে আসে না। ’

এ চিকিৎসক বলেন, ‘এসব পেশাদার রক্তদাতাদের নিয়ন্ত্রণের কোনো উদ্যোগ না থাকায় রোগীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ’

এদিকে চমেক হাসপাতালের রক্ত পরিসঞ্চলন বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডা. অজয় কুমার ঘোষ বলেন, ‘চট্টগ্রামের আশপাশেরে উপজেলাগুলোতে সরকারী-বেসরকারী হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক নেই। তাই জটিল অপারেশনের জন্য তাদের নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালের উপর নির্ভর করতে হয়। ’

এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘যথাযথ নিয়ম মেনে প্রশিক্ষিত লোক দিয়ে হাসপাতালগুলোতে রক্ত পরিসঞ্চলন বিভাগ চালু করা হলে ওই অঞ্চলের মানুষগুলো আরও বেশি সেবা পেত। ’

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের ১৪টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রক্ত পরিসঞ্চল বিভাগ চালু নেই।

বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবু তৈয়ব বাংলানিউজকে বলেন, ‘মূলত এ্যানাসথেশিয়ার ডাক্তার না থাকায় এসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন হয় না। তাই আটটি উপজেলায় রক্ত নেয়ার সব ধরণের যন্ত্রপাতি ও ব্যবস্থা থাকা সত্বেও পুরোপুরি সক্রিয় করা সম্ভব হচ্ছে না। ’

৩০ বার রক্ত দিয়েছেন রিংকু মল্লিক! :

পেশায় পরিচ্ছনতাকর্মী রিংকু মল্লিক। সমাজের অন্যান্য শ্রেণির মানুষ যখন রক্ত দিতে অনাগ্রহ বোধ করেন, সেখানে রিংকু মল্লিক এ পর্যন্ত রক্ত দিয়েছেন ৩০ বার! তিনি ফাতেমা রেডক্রিসেন্ট কেন্দ্রে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের একজন।

তিনি বলেন, ‘আর্থিক কারণে নই, মানবিকতা ও অসহায়-দুর্গত মানুষদের সেবার জন্য স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে আসছি। রক্ত দানের মাধ্যমে অন্যের জীবন রক্ষা করার মত প্রাপ্তি আর নেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৬ঘণ্টা, জুন ১৫,২০১৩

এসজি/টিসি

 

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।