ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সফল ডটস কর্মসূচি

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৩
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সফল ডটস কর্মসূচি

ঢাকা: যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ডটস কর্মসূচির সুফল পাচ্ছেন রোগীরা। এ কর্মসূচির আওতায় সরাসরি পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে স্বল্প মেয়াদে যক্ষ্মা রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।



সারাদেশে সরকার ও ব্র্যাক যৌথভাবে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

ব্র্যাক’র দেওয়া তথ্যমতে, সারাদেশে সরকারিভাবে ৮৫০টি ডটস সেন্টার রয়েছে। সেন্টারগুলোতে প্রত্যেক রোগীর জন্য খরচ হয় প্রায় ৩২ হাজার টাকা। এছাড়া যেসব রোগী মাদকাসক্ত হয়ে যান, তাদের পেছনে ব্যয় হয় প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

তাছাড়া দেশের মাঠ পর্যায়ে সরকারের সঙ্গে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে ব্র্যাক। এ কর্মসূচির আওতায় ইতিমধ্যেই দেড় লাখ যক্ষ্মা রোগী এ রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন।

মানিকগঞ্জ জেলায় পাইলট কর্মসূচির মাধ্যমে ডটস কর্মসূচির যাত্রা শুরু করে ব্র্যাক। এখন সারাদেশেই চলছে এ কর্মসূচি। উদ্দেশ্য হচ্ছে, বাংলাদেশে যক্ষ্মার প্রার্দুভাব ও মৃত্যুহার আগামী ২০১৫ সালের মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনা।

সরেজমিনে মানিকগঞ্জ ঘুরে দেখা গেছে, এখন পর্যন্ত জেলার সাত উপজেলার এক হাজার ১৫৩ জন রোগী ডটস কর্মসূচির আওতায় রয়েছেন। আর এ কর্মসূচির মাধ্যমে আগস্ট মাসে ১৪৮ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন।

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার শওকত আলী (৬০) বাংলানিউজকে বলেন, বছরখানেক আগে আমার প্রচণ্ড কাশি হতো, সঙ্গে রক্তও পড়তো। বিভিন্নস্থানে চিকিৎসা করেছি, কোনো লাভ হয় নি। শেষে ব্র্যাকের চিকিৎসা দেওয়ার খবর পেয়ে সেখানে যাই। কফ পরীক্ষার জন্য দিয়ে আসি। পরে জানতে পারি, আমার যক্ষ্মা হয়েছে।

প্রথমে ভয় পেলেও ব্র্যাকের স্বাস্থ্য সেবিকাসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের কথায় আশ্বস্ত হয়ে চিকিৎসা শুরু করি। ছয় মাস নিয়মিত ওষুধ খাওয়ার পর এখন আমি পুরোপুরি সুস্থ। সরকার ও ব্র্যাকের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ।

বর্তমানে চিকিৎসাধীন আনোয়ারা (৬০) জানান, প্রচণ্ড কাশির কারণে এক সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি। দীর্ঘদিন বিভিন্ন ওষুধ খেয়েছি। অবশেষে ব্র্যাকে গিয়ে কফ পরীক্ষার পর জানতে পারি, যক্ষ্মা হয়েছে। শুরু হয় চিকিৎসা। এখন অনেকটাই সুস্থ আছি।

ব্র্যাক স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির সিনিয়র উপজেলা ম্যানেজার বিকাশ চন্দ্র বাংলানিউজকে বলেন, অনেকেই আছেন, যারা বিদেশ থেকে এসে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে আবার কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। কারণ, সুস্থ না হলে তাদের সেখানে থাকতে দেওয়া হতো না।

কর্মসূচির স্বাস্থ্য সেবিকা নার্গিস আক্তার জানান, তিনি স্বেচ্ছাসেবার ভিত্তিতে এ কাজটি করছেন। নয় বছরের চাকরি জীবনে ৫৩ জন রোগীকে নিয়মিত ওষুধ খাইয়ে সুস্থ করেছেন। প্রত্যেক রোগীকে ছয় মাস ওষুধ খাওয়ানোর পর মাত্র ৫শ’ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।

ঘিওর উপজেলার বাসিন্দা জুনিয়র সেকশন স্পেশালিস্ট (ল্যাব) মাহমুদা খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, একটি ইউনিয়নে আটটি করে সেন্টার রয়েছে। স্মেয়ারিং সেন্টার ও সরকারের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে সোম ও ‍বুধবার কনসালটেশন দেওয়া হয়। একটি গ্রামে ৩-৪ জন করে স্বাস্থ্যসেবিকা রয়েছেন।

১৪ বছরের সেলিমের কাশি হচ্ছিল কয়েকদিন ধরে। পরে সেন্টারে এলে কফে যক্ষ্মার জীবানু ধরা পড়ে। ক্যাটাগরি-১ এ তার ছয় মাসের চিকিৎসা শুরু হয়েছে।

ক্যাটাগরি-২ এ আট মাসের চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়াও এমডিআর (মাল্টিড্রাগ রেজিস্ট্যান্স) এর জন্য রয়েছে দু’বছরের চিকিৎসা।

ডটস প্রোগ্রাম সঠিকভাবে চলছে কিনা, সেজন্যেও নিবিড় পর্যবেক্ষণ করা হয়।

কোয়ালিটি কন্ট্রোলার শিবানী সাহা বাংলানিউজকে বলেন, রোগীর বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা কার্ড দেখে যাচাই করা হয়, ঠিকমতো ওষুধ সেবন করানো হচ্ছে কিনা।

ছয় মাসের কোর্স সম্পন্ন হলে একজন রোগীর জন্য একজন সেবিকাকে দেওয়া হয় ৫০০ টাকা। এছাড়াও এমডিআর (মাল্টিড্রাগ রেজিট্যান্স) রোগীর চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয় ১৮০০ টাকা।

ছয় মাস ধরে প্রতিদিন রোগীকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ও ওষুধ সেবনের মাধ্যমে ডটস প্রোগ্রামকে সফল করে তুলছেন স্বাস্থ্যসেবিকারা।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৩
এমএন/জেডএস/এএসআর/বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।