ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

হাসপাতালটি কাজে আসছে না ছিটমহলবাসীর

মাহাবুর আলম সোহাগ, রোভিং করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৯ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৪
হাসপাতালটি কাজে আসছে না ছিটমহলবাসীর ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

দহগ্রাম, পাটগ্রাম, লালমনিরহাট থেকে: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা ১০ শয্যা বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল থেকে কোনো ধরনের সেবা পাচ্ছেন না ছিটমহলবাসী।

সপ্তাহে সাত দিনের মধ্যে পাঁচ দিনই হাসপাতালটি বন্ধ থাকছে।

বাকি যে দুই দিন হাসপাতালটি খোলা রাখা হয় তাও সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। অথচ হাসপাতালের বর্হিবিভাগ সকাল ৮টায় চালু হয়ে দুপুর ২টা পর্যন্ত চালু রাখার নিয়ম।

হাসপাতালের এ করুণদশার কারণে দেশের সবচেয়ে বড় এই ছিটমহলে বসবাস করা প্রায় ২০ হাজার মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

ছিটমহলবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে ২০১১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লালমনিরহাট সফরে এসে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতায় ১০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালটির উদ্বোধন করেন।

সরেজমিনে হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালটির প্রধান দু’টি গেটে তালা লাগানো। কোথাও কোনো মানুষের আনাগোনা নেই। হাসপাতালটির বাইরে কয়েকটি গরু বাধা রয়েছে। গেটগুলোর সামনে ময়লা আবর্জনার স্তুপ তৈরি হয়েছে।

চারপাশ ঘুরে দেখে মনে হয়েছে, মানুষের কোনো আনাগোনা নেই হাসপাতালটিতে। এটি যেন জনশূন্য একটি হাসপাতাল।

হাসপাতালে কথা বলার জন্য কাউকে না পেয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়।

হাসপাতালের পেছনেই বাড়ি নবাব উদ্দীনের। বয়স ৫০ বছরের কাছাকাছি। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, হাসপাতালটি ভালোভাবে খোলা হয় সেইদিন, যেদিন ঢাকা থেকে বড় কোনো সাহেব পাটগ্রামে আসেন। ওই দিন কোথাও থেকে রোগী নিয়ে এসে বর্হিবিভাগে সেবা নেওয়ার জন্য লাইন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া অন্য সব দিন হাসপাতালটি বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে দেখি, তাড়াহুড়া করে হাসপাতালটি খোলা হচ্ছে। সেদিন আমরা ভেবে নেই, ঢাকার কোনো সাহেব এসেছেন এলাকায়। তাদের দেখানোর জন্য খোলা হচ্ছে।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের গ্রামের সবাই আমরা পাটগ্রাম এবং লালমনিরহাটে গিয়ে চিকিৎসা করাই। আমি কোনো দিনও দেখিনি হাসপাতালটি খোলা রয়েছে।

একই অভিযোগ করেন এলাকার জুবায়ের হোসেন। তিনি আফসোস করে বলেন, আমাদের ইউনিয়নের মানুষের জন্য সরকার বাড়ির পাশে হাসপাতাল তৈরি করে দিয়েছে। অথচ আমরা এখান থেকে কোনো সেবা পাচ্ছি না।

তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে শুধু দেখি, হাসপাতালের আশপাশ ঝাড়ু দিচ্ছেন হাসপাতালের আয়া। এখানে ডাক্তার আছেন কি-না, ওষুধ আছে কি-না তাও আমরা জানি না।

স্থানীয় দহগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র সালেক বাংলানিউজকে জানায়, আমি মাঝে মধ্যে শুধু দেখি, হাসপাতালটি খোলা হয়েছে। তাছাড়া বাকি সব দিন বন্ধ থাকে। এ কারণে আমরা প্রতিদিন হাসপাতালের গেটে ক্রিকেট খেলি। এটি আমাদের খেলার মাঠ।

হাসপাতালটির মেডিকেল অফিসার ডা. নুর আরেফীন প্রধান বাংলানিউজকে জানান, আমি সাড়ে পাঁচ বছর ধরে পাটগ্রামে আছি। এরমধ্যে আড়াই বছর হলো দহগ্রাম হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্বে আছি। আমার এ উপজেলায় থাকার কোনো ইচ্ছে নেই। গত দুই মাস আগে এখানে একজন ডাক্তার এসেছিলেন। তিনি বদলি নিয়ে চলে গেছেন। অথচ আমি অনেকদিন ধরে চেষ্টা করছি, কিন্তু বদলি হতে পারছি না।

তিনি বলেন, উচ্চ পর্যায়ে টাকা দিতে পারছি না বলে আমার বদলি হচ্ছে না।

আপনি হাসপাতালে যান কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমার এ উপজেলায় একটুও থাকার ইচ্ছে নেই। মাঝে মধ্যে হাসপাতালে যাই।

ডা. নুর আরেফীন আরো বলেন, গত ১৫ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরে বদলির জন্য আবেদন করেছি, জানি না কি হবে?

হাসপাতালের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতাল কীভাবে চলছে এটির কোনো ঠিক নেই। এসব বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন। আমাকে এ হাসপাতালের দায়িত্ব দেওয়া হলেও তিনিই সবকিছু দেখেন। স্যারই সবকিছু চালান।

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, হাসপাতালটি ভালোভাবেই চলছে। আমাদের এখানে কোনো সমস্যা নেই।

দুপুর একটায় হাসপাতাল বন্ধ থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতাল দুপুরে বন্ধ ছিল না। হয়তো আপনার ঘড়ির সমস্যা ছিল। ইনডোরে রোগী না থাকার কারণে বিকেল পাঁচটার পর হয়তো কোনো কোনো দিন হাসপাতাল বন্ধ থাকে। তাছাড়া প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত হাসপাতালে ডাক্তার ও নার্স সবাই থাকেন।

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফা কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমি এ জেলায় যোগদান করেছি মাত্র কয়েকদিন হলো। তারপরও আমি যোগদানের প্রথম কয়েকদিনের মাথায় ওই হাসপাতালে গিয়ে নিজেও আমি হাসপাতালটি বন্ধ দেখেছি।

তিনি বলেন, কালকেই আমি হাসপাতালটির ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।