ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

নারীর স্বাস্থ্যকর ১০ খাবার

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৫৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৪
নারীর স্বাস্থ্যকর ১০ খাবার

শুধু শারীরিক, মানসিক এবং জৈবিকভাবেই নয়, পুষ্টি প্রয়োজনীয়তায়ও পুরুষের চেয়ে আলাদা নারী। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই পুরুষের চেয়ে আলাদা হিসাব-নিকাশ করে নারীকে খাবার খেতে হয়।



স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে নারীর জন্য বেশি প্রয়োজনীয় ১০টি খাবারের বর্ণনা দিয়েছে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জি নিউজ। সেই খাবারগুলো নারীকে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে বাংলানিউজও।

১. দুধ
পুষ্টিকর খাবার বা পানীয়ের কথা এলেই প্রথমে নাম আসবে দুধের। যদিও সবার জন্যই দুধ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর পানীয়, তথাপি নারী স্বাস্থ্যের জন্য এটি অনেক বেশিই উপকারী।

দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, রিবোফ্ল্যাভিন, ভিটামিন বি১২ ও পটাশিয়াম রয়েছে। সংক্ষেপে বলতে গেলে লৌহ আর ভিটামিন সি ছাড়া বাকি সব পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে এতে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও দীপ্তিময় রাখতে, হাড় ও দাঁত শক্ত ও মজুবত রাখতে এবং ওজন কমাতে দুধের কার্যকারিতা অপরিসীম।

এখানেই শেষ নয়, দুধ ক্যান্সারেরও ঝুঁকি কমায়। বিশেষ করে নারীর স্তন ও মলাশয়ের ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় দুধই।

২. বেরি ফল
ক্র্যানবেরি, স্ট্রবেরি, রাস্পবেরি, ব্লুবেরি ও ব্ল্যাকবেরি’র মতো সুস্বাদু ও রসালো ফলগুলোতে ক্যান্সার প্রতিরোধক উপাদান রয়েছে পর্যাপ্ত। এসব ফলজ উপাদান শরীরের কোষীয় কার্যক্রম সচল রাখে এবং সংস্কার করে। এ ধরনের ফল খেলে শারীরিক সংসর্গ বাধাগ্রস্ত হয় এমন সব রোগ যেমন- স্তন ক্যান্সার ও মলাশয় ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়। ক্র্যানবেরি ও এর জুস মূত্রনালীর সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস করে।

৩. গোটা বা অপরিশোধিত শস্য
আঁশ সমৃদ্ধ গোটা বা অপরিশোধিত শস্য হজমি শক্তি বৃদ্ধি করে। বদহজমের মতো রোগে বেশিরভাগই নারীরাই ভোগেন বলে গোটা শস্য খেতে হবে বেশি বেশি।

হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায় গোটা শস্য।

যে শর্করা ও আঁশের কারণে গোটা শস্য বেশি উপকারী সেই শর্করা ও আঁশ জাতীয় উপাদান ওটমিল, গমের পাউরুটি, গমের পাস্তা এবং বাদামী চালেও প্রচুর পরিমাণে থাকে।

৪. ফলিক এসিড (শাকসবজিতে পাওয়া যায় এমন উপাদান)
যদিও সবার শরীরেই ফলিক এসিড প্রয়োজন, তথাপি গর্ভবতী নারীর জন্য বিশেষভাবে এ এসিড দরকার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদযন্ত্র সচল ও ঝুঁকিমুক্ত রাখতে ফলিক এসিডের কার্যকারিতা অপরিসীম।

প্রধানত সবুজ শাকসবজি যেমন-পাতা কপি, পালং শাক, কমলার রস এবং পুষ্টিকর শস্যে ফলিক এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে।

৫. আখরোট (ওয়ালনাট)
আখরোটে কোলেস্টরেলের মাত্রা অনেক কম এবং এসব খাদ্যে স্যাচুরেটেড ফ্যাট (শরীরের জন্য উপকারী একধরনের চর্বি) পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকে। এ ধরনের খাবার হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে পারে।

৬. সবুজ শাক সবজি
অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর উপাদান থাকে বলে সবুজ শাকসবজিকে বলা হয় ‘সুপার ফুড। বাঁধাকপি, ফুলকপি, পালং শাক, লেটুস শাকের মতো সুপারফুডে অনেক বেশি আঁশ, পলিফেনল (শরীরে অক্সিডেশন বাড়ায় এমন উপাদান), ভিটামিন বি, ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি থাকে।

৭. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল
স্ট্রবেরি, পেয়ারা, পেঁপে, কমলা, জাম্বুরা, টমেটো, আপেল, কলা ও লেবু জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। শুধু ভিটামিন সি-ই নয়, এ জাতীয় ফলে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যকর উপাদান থাকে।

ভিটামিন সি সমৃদ্দ ফলমূলে অনেক বেশি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে বলে এসব খেলে করোনারি হৃদরোগ বা রক্তপ্রবাহরোধজনিত হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।

প্রতিদিন অন্তত ৭৫ গ্রাম ভিটামিন সি নারীর খাবার তালিকায় থাকতে পারে।

৮. লৌহ সমৃদ্ধ ফল
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ধরে রাখতে লৌহ বা আয়রনের বিকল্প নেই। পেশী গঠন ও মস্তিষ্ক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতেও লৌহ কার্যকর ভূমিকা রাখে। রক্তকোষে জীবনদানকারী অক্সিজেন সরবরাহেও লৌহ’র বিকল্প নেই।

লৌহের অভাবে মাসিক চক্রের কারণে নারীর শরীরে রক্তশূণ্যতা বা অ্যানেমিয়া দেখা দেয়।

লাল মাংস, ডিমের কুসুম, মটরশুটি (সয়াবিন ও মসূর), কড়া সবুজ সবজি যেমন- শাক, পাতাকপি, মুরগির মাংস, যকৃত, সীফুড (মাছ, ঝিনুক এবং চিংড়ি), শুকনো ফলে প্রচুর লৌহ থাকে।

একজন নারীর শরীরে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ মিলিগ্রাম লৌহ প্রয়োজন হয়, আর একজন পুরুষের শরীরে দরকার পড়ে ১০ থেকে ১২ মিলিগ্রাম।

৯. ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ ফল
মানুষের শরীরের জন্য কালসিয়াম অতীব প্রয়োজনীয় উপাদান। হাড় ও দাঁত শক্ত রাখতে ক্যালসিয়াম অনেক বেশি কার্যকর। পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণ অস্টিওপরোসিস (হাড়ের বিপাকীয় একটি রোগ যাতে এর ঘনত্ব এবং শক্তি হ্রাস পায়) রোগ প্রতিরোধ করে। স্থূলতা কমায় এবং মূত্রাশয়ের ক্যান্সার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

দুধ, দই, পনির, ডিম, মাছ, সয়াবিন, শিম, ফুলকপি ও পালংশাকসহ শাকসবজিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে।

১০. পানি
আমাদের শরীর ৭৫ শতাংশ পানি ও ২৫ শতাংশ কঠিন পদার্থ দিয়ে গঠিত। মানুষের শরীরের বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় পানি অতীব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

পানিই দেহে শক্তি জোগায় এবং টক্সিন (মনুষ্যদেহে থাকা বিশেষ প্রকার জৈব বিষ) ও বর্জ্য পদার্থ দূর করে। একইসঙ্গে ত্বক স্বাস্থ্যকর ও দীপ্তিময় রাখে।

দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে হজমি শক্তি বাড়বে এবং স্থূলকায় ব্যক্তিদের ওজন কমতে থাকবে।

অতএব রোগ সংক্রমণের ঝুঁকিমুক্ত স্বাস্থ্যবান হতে প্রয়োজনীয় খাবারের বিকল্প নেই।

বাংলাদেশ সময়: ০৫৩৩ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।