ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ পৌষ ১৪৩১, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

লাল মাংসে ক্যান্সার ঝুঁকি

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২১ ঘণ্টা, জুন ৬, ২০১৪
লাল মাংসে ক্যান্সার ঝুঁকি

ঢাকা: লাল মাংসে পর্যাপ্ত প্রোটিন ও আয়রনের মতো স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে বলে সবার জানা। কিন্তু কারও কি জানা আছে, অতিরিক্ত লাল মাংস ভোজনে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধির ঝুঁকি বাড়ে।



সম্প্রতি এমন আশঙ্কার কথাই উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের অর্থায়নে বোয়েল ক্যান্সার অস্ট্রেলিয়া (বিসিএ) ও ক্যান্সার কাউন্সিল অস্ট্রেলিয়া (সিসিএ) পরিচালিত এক গবেষণায়।

চীনে পরিচালিত এক গবেষণায় বলা হয়, কেউ যদি দৈনিক ১০০ গ্রাম লাল মাংস ভোজন কমিয়ে দেয় তাহলে তার পাকস্থলীর (স্টমাচ) ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে ১৭ শতাংশ।

কিন্তু বিসিএ ও সিসিএ’সহ বেশ কিছু সংস্থার গবেষণা বলছে, লাল মাংসের সঙ্গে ভোজন ও অন্ত্রের (বোয়েল) ক্যান্সারের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।

বিসিএ ও সিসিএ’র গবেষণায় বলা হয়, অস্ট্রেলিয়ায় ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর মধ্যে অন্ত্রের ক্যান্সার সবচেয়ে বেশি দায়ী। প্রতি বছর দেশটিতে চার হাজারেরও বেশি মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় (এই মৃত্যু ২০১২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর চেয়ে তিনগুণ বেশি)। আর অস্ট্রেলিয়ার মৃত্যুর কারণের মধ্যে পাকস্থলীর ক্যান্সারের অবস্থান ১২তম। প্রতি বছর দেশটিতে কেবল এক হাজার মানুষ মারা যায় এ ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েই।

যারা ব্যাকইয়ার্ড বারবিকিউ (বাড়ির পেছনের আঙিনায় তৈরি করা বারবিকিউ) বেশি ভালোবাসেন-গবেষণার এই ফলাফল নিশ্চয় তাদের জন্য দুঃসংবাদ।

এখন জানার ব্যাপার হলো, কীভাবে লাল মাংস ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় এবং এর ভোজনের নিরাপদ মাত্রা কী?

প্রথমত জানা যাক, লাল মাংস যেভাবে অন্ত্র ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের সংক্রমণ ঘটায়।

গরু, মেষ, ভেড়া, শুয়োর এবং ছাগলের মাংসের লাল রংয়ে মাইয়োগ্লোবিন নামে এক ধরনের প্রোটিন পাওয়া যায়, যেসব উপাদান মাংসপেশী থেকেই আসে। হিমোগ্লোবিন যেভাবে রক্তপ্রবাহে অক্সিজেন সরবরাহ করে ঠিক সেভাবেই পেশী কোষে অক্সিজেন সরবরাহ করে এই মাইয়োগ্লোবিন।

হজমের সময় মাইয়োগ্লোবিন ভেঙে গিয়ে এন-নিট্রোসোয়েস নামে এক ধরনের ক্যান্সারজনিত যৌগ গঠন করে। এই নিট্রোসোয়েস কোষের ভেতরে থাকা ডিএনএ (নিউক্লিক এসিড যা জীবদেহের গঠন ও ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের জিনগত নির্দেশ ধারণ করে) টার্গেট করে কাজ করে, যেটা মিথেলেশন নামে একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ অন্ত্র ও পাকস্থলীর কার্যক্রমে ব্যাপক পরিবর্তন আনে।

আর অনেক বেশি মিথেলেশনের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব হলো এটি শরীরের সাধারণ প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও এনজাইমের সঠিক উৎপাদন বন্ধ করে দেয়- যার শেষ পরিণতি ক্যান্সারের আবির্ভাব।

দুর্ভাগ্যবশত শরীরে এন-নিট্রোসোয়েসের নিরাপদ কোনো মাত্রা নেই।

এক গবেষণায় দেখা যায়, এন-নিট্রোসোডিয়েথিলামিন নামে এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থের মাত্র দশমিক ০০০০৭৫ শতাংশ গ্রাম শরীরে ক্যান্সার উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট।

বিসিএ ও সিসিএ পরিচালিত গবেষণায় বলা হয়, লাল মাংসে থাকা উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর কোলেস্টরল অন্ত্র ও পাকস্থলীর ক্যান্সার সংক্রমণেই কাজ করে না, এটি ভয়ংকরভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে ক্যান্সার ছড়িয়ে দেয়।

এর প্রক্রিয়া বর্ণনা করে বলা হয়, মানুষের শরীরের সবগুলো কোষেই ইন্টেগ্রিনস নামের অংশে ভেলক্রো’র মতো এক ধরনের অণু থাকে যেগুলো ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের কারণে একীভূত হয়ে যায়। উপর্যুপুরি ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নতুন ইন্টেগ্রিনস ছড়িয়ে ক্যান্সার কোষগুলোকে তাদের মূল জায়গা থেকে সরিয়ে শরীরের অন্য জায়গায় ছড়িয়ে দেয়।

এখন তাহলে কী করণীয়? তবে কী লাল মাংস ছেড়ে দিতে হবে। সমাধানও দেওয়া হচ্ছে বিসিএ ও সিসিএ‘র পক্ষ থেকে।

গবেষকরা বলছেন, কারও পুরোপুরি লাল মাংস ভোজন ছেড়ে দেওয়া উচিত হবে না। প্রোটিন (পেশী তৈরি ও ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয়) ও আয়রনের (রক্ত উৎপাদনে প্রয়োজনীয়) জন্য পর্যাপ্ত লাল মাংস খেতে হবে।

অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, কেউ প্রত্যহ ৬৫ গ্রাম রান্না করা (৯০ থেকে ১০০ গ্রাম কাঁচা) লাল মাংস খেতে পারেন।

আর অন্ত্র ও পাকস্থলীর ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে কেবল লাল মাংস ভোজন কমিয়ে দিলেই হবে না, কম চর্বি ও শর্করাযুক্ত ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণও প্রয়োজন।

বিসিএ ও সিসিএ’র পক্ষ থেকে বলা হয়, কারও যদি অন্ত্রের ক্যান্সারের পারিবারিক ধারা থাকে, তাহলে তাকে নিয়মিত শরীর পরীক্ষা করাতে হবে এবং এ ব্যাপারে অন্যদেরও উৎসাহিত করতে হবে। এক্ষেত্রে বিশেষত পঞ্চাশোর্ধ্বদের বেশি সচেতন থাকতে হবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্যে বলা যায়, মাছ ও মুরগির মতো সাদা মাংসে উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর প্রোটিন থাকে না। এ ধরনের সাদা মাংসগুলো শরীরে ক্যান্সার ছড়ানোর জন্য দায়ী ইন্টেগ্রিনসকে ক্যান্সার কোষের ভেতরেই রেখে দিতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৭ ঘণ্টা, জুন ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।