ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

মাতৃমৃত্যু ও প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪
মাতৃমৃত্যু ও প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণে

ঢাকা: স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মাতৃ মৃত্যুহার ও প্রজনন হার নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া শিশু মৃত্যুহার, নবজাতক মৃত্যুহার রোধেও সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে।



মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির(একনেক) সভায় স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচির (এইচপিএনএসডিপি) ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাস্তবায়ন অগ্রগতির এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী ও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সভায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনের শুরুতেই বলা হয়, ২০১১ সালের ২৩ আগস্ট একনেক সভায় ৫৬ হাজার ৯৯৯ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ২০১১-১৬ মেয়াদে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুষ্টি খাত উন্নয়ন কর্মসূচির অনুমোদন দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুষ্টি সেক্টর উন্নয়ন কর্মসূচির (এইচপিএনএসডিপি) মোট প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে রাজস্ব ব্যয়ের পরিমাণ ৩৪ হাজার ৮১৬ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ২২ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা।   এর মোট ব্যয়ের ৭৬ শতাংশ অর্থাৎ ৪৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা সরকারি অর্থায়নে ব্যয় হচ্ছে। বাকি ২৪ শতাংশ অর্থাৎ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা  বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা যোগান দিচ্ছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচপিএনএসডিপি’র কার্যক্রমের প্রথম বছরে (২০১১-১২) সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা। বরাদ্দের বিপরীতে মোট ব্যয় হয় ১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা যা মোট বরাদ্দের ৯১ শতাংশ। অপরদিকে, ২০১২-১৩ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে মোট ২ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এর মধ্যে জিওবি ৯১০ কোটি টাকা এবং বাকি ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য। বরাদ্দের বিপরীতে মোট ২ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার মধ্যে জিওবি ৮৭৬  কোটি টাকা এবং প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, যা মোট বরাদ্দের ৯১ শতাংশ।

প্রাপ্ত প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশ আগামী জুন’২০১৬ সময়কালের মধ্যে আটটি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সঠিক পথেই রয়েছে। ইউনিসেফের উপাত্ত অনুযায়ী ইতোমধ্যে এমডিজি-৪ অর্জিত হয়েছে। প্রতিবেদনে নবজাতক মুত্যৃ হার কমাতে  আরো অধিক তদারকির কথা বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ‘২০৩৫ সাল নাগাদ প্রতিরোধযোগ্য শিশু মৃত্যু অবসান: বাংলাদেশের অঙ্গীকার’ শীর্ষক একটি কর্মকৌশল সরকার গ্রহণ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, এইচপিএনএসডিপি’র উন্নয়ন ব্যয়  ৩২টি অপারেশনাল প্ল্যানের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ ৩২টি অপারেশনাল প্ল্যানের ১৭টি স্বাস্থ্য অধিদফতর, ৭টি পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর, ৫টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ১টি সেবা পরিদফতর, ১টি ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এবং ১টি নিপোর্ট বাস্তবায়ন করছে।

২০১১-১২ অর্থবছরে অপারেশনাল প্ল্যানভিত্তিক মূল্যায়ন সূচকের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বাস্তব অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে ৬৫ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা ছিল ৬৯ শতাংশ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জরুরি প্রসূতি সেবা প্রদানকারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সংখ্যা ৭৫ থেকে ১০২টিতে উন্নীত হয়েছে। ৭০টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে ২৪ ঘণ্টা জরুরি প্রসূতি সেবা এবং ১১০৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে নরমাল ডেলিভারির ব্যবস্থা করা হয়।

মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমের আওতায় ৫৩টি উপজেলায় ৩ লাখ ৭ হাজার ৬৯০ জন দরিদ্র মহিলাকে  প্রসূতি সেবা দেওয়া হয়। মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা সহজলভ্য করার জন্য ২০১১-১২ অর্থবছরে সাড়ে তিন লাখটি এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২ লাখ ৮১ হাজার ১২১টি  স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে সেবা দেওয়া হয়।

‘সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি’র (ইপিআই) আওতায় শিশুদের ৯টি বিষয়ে বিভিন্ন রোগের টিকা দেওয়া হচ্ছে। ১২-২৩ মাস বয়সী শিশুদের ১২ মাসের মধ্যে সব টিকা অর্জনের হার ৮০ দশমিক ০২ শতাংশ এবং ১ বছরের নিচে শিশুদের হামের টিকা অর্জনের হার ৮৫ দশমিক ৫ শতাংশ।

বাড়িতে বাড়িতে অনুসন্ধান কার্যক্রমের আওতায় ৪৫৫টি উপজেলায় এ পর্যন্ত ৬৫ হাজার ৯১০ জন আর্সেনিকোসিস রোগী, ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৯০ জন যক্ষা রোগী  এবং ৬ হাজার ৪৫৫ জন কুষ্ঠরোগী শনাক্ত করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

ভাউচার স্কিমের আওতায় ৭৫৭ জন ছানি রোগীকে বিনামূল্যে লেন্স সংযোজনের মাধ্যমে অপারেশন করা হয়েছে। ৬-১১ মাস বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ- এর কভারেজ ৯৬ শতাংশ এবং ১২-৫৯ মাস বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে ৯৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২৬টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র, ৩১ ও ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ২টি ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, ৩টি মেডিকেল কলেজ, ২০ শয্যাবিশিষ্ট ৩টি হাসপাতাল, ১টি ইন্সটিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি এবং ১টি নার্সিং কলেজ তৈরি করা হয়।

স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুষ্টিখাতের সেবা বৃদ্ধিতে সরকার গত দুই বছরে সর্বমোট ২৪ হাজার ৯১০ জন লোকবল নিয়োগ দেয়,  যার মধ্যে ডাক্তার, নার্স, মিডওয়াইভস, স্বাস্থ্যকর্মী,পরিবার কল্যাণ কর্মী ও অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী অন্তর্ভূক্ত বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং পুষ্টিখাতের সার্বিক সাফল্য পেতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও বলা হয়। দক্ষ জনবলের স্বল্পতা ও দুর্গম এলাকায় জনবলের রিটেনশনের অভাবকে মানসম্মত সেবা প্রদানের অন্যতম প্রতিবন্ধক বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৪ ঘণ্টা, আগস্ট ২৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।