ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

খাদ্য তালিকায় থাক আমলকি-দুধ-লাল চাল

স্বাস্থ্য ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৪
খাদ্য তালিকায় থাক আমলকি-দুধ-লাল চাল

ঢাকা: খাবারে অসংযম কিংবা অসচেতনতা এবং সময় যাপনে উচ্ছৃঙ্খলতা ব্যক্তির জীবনকে দুঃসহ করে তোলে। এমনকি ভীষণ অসুস্থতায় ভুগিয়ে ব্যক্তিকে অকাল মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দেয়।



যারা বেশিরভাগ সময় বসে থাকেন, কায়িক পরিশ্রমের ধারেকাছেও যান না এবং যাদের খাবারে কোনো ভারসাম্য থাকে না- তারা সাধারণত অসুস্থতা ও তার পরিণতি মৃত্যু ঝুঁকিতে বেশি পড়ে যান।

তবে, খাবারের অভ্যাসে সামান্য ইতিবাচক পরিবর্তন এবং জীবনযাপনে সামান্য শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও দেহ ও মন ভালো রাখার ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখে।

অতএব বলা যায়, দেহ ও মন ভালো রাখতে পরিমিত ও ভারসাম্যপূর্ণ খাবার গ্রহণ অতীব প্রয়োজনীয় ব্যাপার।

কিন্তু ভারসাম্যপূর্ণ খাবার কী?

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুর আয়ুর্বেদ হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. জানাখানা বুচ দিয়েছেন ১০টি খাবারের তালিকা। শরীর-মন ভালো রাখতে এ ১০টি খাবার অবশ্যই খাদ্য তালিকায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য সে ১০টি খাবারের তালিকা প্রদান করা হচ্ছে।

১. গরুর দুধ
প্রত্যেক প্রাণীর দুধের চেয়ে গরুর দুধই দেহ শক্তিশালী ও মন তরতাজা করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর বলে বিবেচনা করা হয়।

চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে, গরুর দুধ ভোক্তাকে দীর্ঘায়ু লাভে সাহায্য করে। দুধপান যৌবনও ধরে রাখে। আহতদের (বিশেষত বুকে জখম পাওয়া) দ্রুত আরোগ্য লাভে, মেধা শাণিত করতে এবং মলমূত্র ত্যাগের মাধ্যমে শরীর সবসময় ফুরফুরে ও সতেজ রাখতে গরুর দুধের কার্যকারিতা অপরিসীম।

একইসঙ্গে অবসাদ, মাথা ঘোরা, বিষাক্ততা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, তীব্র তৃষ্ণা ও ক্ষুধা, অনেক দিনের জ্বর, নারীর রক্তপাত রোগ নিরাময়ে গরুর দুধের জুড়ি নেই।
 
২. ঘি
সাধারণত, ৮টি প্রাণীর দুধ থেকে ঘি তৈরি করা হয়। তবে গরুর দুধ থেকে তৈরি করা ঘি-ই সবচেয়ে বেশি উপকারী।

গরুর দুধের ঘি দৃষ্টিশক্তি, হজমি শক্তি, চেহারার সৌন্দর্য, স্মৃতিশক্তি এবং মনোবল বৃদ্ধি করে। একইসঙ্গে ভোক্তাকে দীর্ঘায়ু লাভে ও বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তিলাভে সাহায্য করে।

৩. লাল চাল
প্রাকৃতিকভাবেই মিষ্টি, সাদা, তৈলাক্ত ও শক্ত লাল চাল। এ ধরনের চাল কেবল জিহ্বার রুচিই বাড়ায় না, বাড়ায় হজমি শক্তিও। একইসঙ্গে দূর করে প্রদাহও।

লাল চাল গ্রহণে শারীরিক সক্ষমতা ও সৌন্দর্য, বীর্যের মান বৃদ্ধি পায়, স্বর সুন্দর হয় এবং তীব্র তৃষ্ণা ও জ্বর দূর হয়।

৪. আমলকি
আমলকি একইসঙ্গে খাবার ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই ক্ষুদ্রকায় ফলটি হাজারো রকমের উপকারী উপাদানে ভরপুর।

চিকিৎসা শাস্ত্রে আমলকি সম্পর্কে বলা হয়েছে, জ্বর, কা‍শি, ঠাণ্ডা ও ত্বকের রোগ থেকে আরোগ্য লাভে কার্যকর এই ফলটি প্রতিদিনই খাওয়া যেতে পারে।

৫. গুড় (মিঠা)
বিভিন্ন আয়ুর্বেদি ওষুধে গুড়ের ব্যবহার সর্বজনবিদিত। গুড় চিনির (সুগার) সবচেয়ে বড় বিকল্প এবং স্বাস্থ্যের জন্য অনেক বেশি উপকারী খাবার।

হজমি শক্তি বৃদ্ধি, অন্ত্র পরিষ্কার করে মলত্যাগ সহজ করা,  মূত্রাশয় রোগমুক্ত রাখা এবং মূত্রত্যাগ সহজ করা, পাকস্থলি পরিষ্কার রাখা, জিহ্বার স্বাদ বৃদ্ধি, হৃদরোগ, জ্বর মুক্তি, ওজন কমানো, ক্লান্তি ও রক্তশূন্যতা দূরীকরণের ক্ষেত্রে গুড়ের কার্যকারিতা অপরিসীম।

৬. লাউ
বিভিন্ন চিকিৎসা শাস্ত্রে বলা আছে, ক্ষুধামন্দা, তীব্র তৃষ্ণা দূরীকরণে লাউয়ের জুড়ি নেই। এই খাবারটি দেহের চুলকানি, ব্রণসহ ত্বকের প্রায় সবরকমের সমস্যা দূরীকরণে কার্যকর ভূমিকা রাখে। একইসঙ্গে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতেও লাউয়ের ভূমিকা অসাধারণ।

এই লাউ প্রাকৃতিকভাবে আদিকাম বৃদ্ধি করে এবং খাবারের রুচি ও স্বাদ বাড়ায়। হজমি শক্তি বাড়াতেও কাজ করে লাউ।

৭. খনিজ লবণ
খনিজ লবণ খানিকটা মিষ্টি থাকে। এটা শীতসহিষ্ণু। কাশি জমে যাওয়ার কারণে বুকে যে ব্যথা ও জটিলতার সৃষ্টি হয়- তা দূর করতে খনিজ লবণ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন চিকিৎসকরা।

৮. কাজুবাদাম
আদিকাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজুবাদামের জুড়ি নেই। এই খাবার শরীরের টিস্যুগুলোকে দৃঢ়তা ও স্থিতিশীলতা দেয়।

কাজুবাদাম মনুষ্যদেহে নতুন রক্তকণিকা ও হিমোগ্লোবিন গঠনে সাহায্য করে এবং  মস্তিষ্ক, স্নায়ু, হাড়, হৃদযন্ত্র ও যকৃতের কার্যপ্রক্রিয়া সঠিক ও সাবলীলভাবে পরিচালনায় প্রধান ভূমিকা রাখে।

এটা প্রোটিন ও শরীরের জন্য উপকারী ফ্যাটের কার্যকর উৎস। ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য কাজুবাদাম সুপরিচিত।

৯. ডুমুর ফল
হজম কঠিন হলেও ডুমুর ফল শীতসহিষ্ণু। গ্রামাঞ্চলে অবহেলিত এই ফলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ আঁশ, ভিটামিন বি৬, পটাসিয়াম, তামা, ম্যাঙ্গানিজ ও প্যানটোথেনিক।

১০. ধনিয়া
চিকিৎসা বিজ্ঞান মতে, ধনিয়া ঘন ঘন তৃষ্ণা পাওয়ার প্রবণতা হ্রাস করে এবং শীত তাড়িয়ে দেয়।

এই খাবার হজমি ও রুচি বাড়ানোর সহায়ক এবং দুর্গন্ধের বায়ু ছাড়ানো কমাতে সাহায্য করে। হৃদযন্ত্রের রোগ, বমিবমি ভাব, হাঁপানি রোগ, শ্বাসকষ্ট, কাঁশি, ঠাণ্ডাজনিত রোগ, অর্শ্বরোগ, কৃমি সংক্রমণ, জ্বর, ক্ষুধাহীনতা ও ডায়রিয়া প্রভৃতি দূরীকরণে ধনিয়ার কার্যক্ষমতা সর্বজনবিদিত।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।