ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

রক্ষা পেতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

শীতের সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ

ইমরান আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪
শীতের সঙ্গে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা ও নিম্ন তাপমাত্রার পাশাপাশি এবার ধেয়ে আসছে শৈত্যপ্রবাহ। ডিসেম্বরের বাকি দিনগুলোতে দেশজুড়ে  হিমালয় ছুঁয়ে ছুটে আসা ঠাণ্ডা বাতাসেরই দাপট থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।



এ কয়েকদিনে রাজধানী ঢাকাতেই ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে তাপমাত্রা। দেশের অন্যান্য স্থানে তাপমাত্রা আরো কমে যেতে পারে বলেও আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর।

শীতের এমন দাপটে রাজধানীসহ কাঁপছে সারাদেশ। দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ছিন্নমূল ও খেটে খাওয়া মানুষদেরকে। একইসঙ্গে বেড়ে গেছে ঠাণ্ডাজনিত নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ অন্যান্য রোগের প্রাদুর্ভাব ।

ঠাণ্ডাজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু এবং বৃদ্ধরা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশু ওয়ার্ডের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ শিশু শীতজনিত রোগে ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা প্রায় ৬৫ শতাংশ। আর মেডিসিন বিভাগে শীতজনিত রোগীর চাপ বেড়েছে দ্বিগুণ।

মৌসুমি এসব রোগ শিশু আর বৃদ্ধদের বেশি হলেও এতে আক্রান্ত রোগী ও অভিভাবকদের আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বর্হিবিভাগের আবাসিক চিকিৎসক ডা. রিয়াজ মোর্শেদ বলেন, শীত শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শীতজনিত রোগীদেরই হাসপাতালে বেশি ভর্তি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিশু।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের আরপি ডা. নাজমুন বাংলানিউজকে বলেন, শিশু ওয়ার্ডে ৮০ শতাংশ শিশু ঠাণ্ডাজনিত রোগে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুরা।

তিনি বলেন, যদি কোনো শিশুর সর্দি-জ্বরের সঙ্গে কাশি, বুকে ঘ্যাড় ঘ্যাড় শব্দ হয় আর যদি শিশুর শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, তবে অবশ্যই ওই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। কারণ, ঠাণ্ডা জ্বরের সঙ্গে বুকে ঘ্যাড় ঘ্যাড় ও শ্বাসকষ্ট হওয়াটা নিউমোনিয়ার লক্ষণ। ভাইরাল ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার প্রবণতা বেশি।

শিশুদের অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম। তাই শিশুর রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য এ সময় অবশ্যই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বুকের দুধ পান করাতে হবে। ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর হাত, পায়ে মোজা এবং মাথায় টুপি পরিয়ে রাখতে হবে। শিশুর ডাইপার ঘন ঘন পরিবর্তন করতে হবে। ধূমপায়ী অভিভাবকদের শিশুদের সামনে ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।

মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুদীপ রঞ্জন দে বাংলানিউজকে বলেন, এ ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেশি। এর মধ্যে শ্বাসকষ্টের রোগীই বেশি। তাই সর্দি এবং জ্বরের সঙ্গে যদি কাশি হয় তাহলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। কাশির সঙ্গে যদি হলদে ভাবের কফ বের হয়, তাহলে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন তিনি।
 
এদিকে  রাজধানী ঢাকাতেই ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে তাপমাত্রা। দেশের অন্যান্য স্থানে তাপমাত্রা আরো কমে যেতে পারে বলেও আভাস দিচ্ছে আবহাওয়া দফতর। মাত্রাতিরিক্ত শীত টানা কয়েক দিন থাকলে অনেক সবজির ক্ষেতেই পচন ধরতে পারে বলেও আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

ডিসেম্বরের আবহাওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে অবহাওয়া অধিদফতরের উপ-পরিচালক মেহেনাজ খান বাংলানিউজকে বলেন, মেঘলা আবহাওয়ার সৃষ্টি হলে কুয়াশা বেড়ে যেতে পারে। শৈত্যপ্রবাহের কারণে তাপমাত্রা কমে নেমে যেতে পারে । তবে এটা দুই-তিনদিনের মধ্যেই ‘ওভারকাম’ হয়ে যাবে। এছাড়া তাপমাত্রার তেমন একটা পরিবর্তন না। ঘন কুয়াশার কারণে ধানে চিটা হওয়ারও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ২১৪৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।